পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিক্রমখোল-লিপি শালিবাহন বা সাতবাহন রাজার শাসনলিপি শ্রীহরিদাস পালিত মধ্যপ্রদেশের বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে ষ্টেশন বেলপাহাড় হইতে গ্রিনডোল সন্নিকটস্থ যৌগড় ষ্টেটের তিলীয়বাহুল পল্লীর সন্নিকটে বিক্রমথোল নামক একটি গগুশৈল-গাত্রে কিছুদিন হইল একটি লিপিমালা আবিষ্কৃত হইয়াছে ৷ পাহাড়টি বেলেপাথরের। দৈর্ঘ্যে ৪৫ ফুট এবং প্রস্থে ৭ ফুট স্থান ব্যাপিয়া লিপি বিদ্যমান। লিপিগুলি অসমতল অংশে খোদিত হইয়াছে, কতক রং দিয়া লেখা এবং কতক গভীরভাবে উৎকীর্ণ। রংটি বিলক্ষণ পাকা। নাগপুর জেলায় দেওটেক নামক স্থানে পূৰ্ব্বে এক লিপি আবিষ্কৃত হইয়াছিল। সেখানিতে চিকাস্বরী দেবীর উল্লেখ আছে। সেখানি শিবালয়ের একখানি প্রস্তরে উৎকীর্ণ হইয়াছিল। বৰ্ত্তমান বিক্রমথোল-লিপির বিবরণ ইণ্ডিয়ান এণ্টিকুয়েরী, ভলুমে ৫২, মার্চ ১৯৩৩ সংখ্যক পত্রিকায় চিত্রসহ প্রকাশিত হইয়াছে। ইহা ব্যতীত কলিকাতার কোন কোন বাক্তি তথায় গিয়া উক্ত লিপির ছায়াচিত্র লইয়া আসিয়াছেন। উভয় চিত্রের সাহায্য অবলম্বনে উহার পাঠোদ্ধার করিতে ব্ৰতী হইয় দেখিলাম, ইহাতে পরোষ্ট্ৰী প্রভাব অতিরিক্ত মাত্রায় বিদ্যমান। দক্ষিণ হইতে বাম ক্রমে পড়িতে হয় । বিক্রমখোল-লিপির পাঠ বাপদেশে অবগত হওয়া গিয়াছে, এই লিপি রাজ-বিশেষের বারংবার যুদ্ধের ফলে, নাগপুরe রাজ্য বিজিত হইবার অব্যবহিত পরেই -বিজয়লব্ধ রাজ্যের নবীন রাজার শাসনলিপি। তিনি যুদ্ধজয়ের পর একটি যজ্ঞ করিয়াছিলেন, সেই যজ্ঞকালে সমগ্র বন্দীদিগকে মুক্তি দেন। সাতবাহন বা শালিবাহন নামক ইতিহাসপ্রসিদ্ধ রাজা বিক্রমথোল-লিপি খোদিত ও চিত্রিত করিয়াছিলেন। কথিত আছে, সাতবাহন অর্থে সিংহরূপী গন্ধৰ্ব্ব যাহার বাহন, তাহারই নাম সাতবাহন। শালিবাহন অর্থ পূৰ্ব্বরূপ । সাত বা শালি অর্থেও সিংহ । সম্ভবতঃ তাহার প্রিয় অশ্বের নাম ছিল— সাত বা শালি এবং তাহার সঙ্গীতবিদ্যাবিং প্রধান মন্ত্রীর নামও ছিল সাত বা শালি। ইনি যে অব্দ প্রবর্তিত করেন, উহাই ‘শকাব্দ’ নামে প্রচলিত হইয়াছে। অথবা তিনি সিংহারুতি রথে আরোহণ করিয়া ভ্ৰমণ করিতেন। লিপিপাঠে দেখা যায়, সাঙ্কেতিক হিসাবে যুদ্ধজয় বা শাসনলিপি উৎকীর্ণ হইবার কালটি রস-সির’ পদদ্বার ব্যক্ত করা হইয়াছে। রস ছয় এবং সির অর্থে সূৰ্য্য এক, বামাগতি অনুসারে র্তাহার বদ্ধমান রাজ্যাঙ্ক ১৬শ । সুতরাং তিনি সিংহাসন আরোহণ করিবার ১৬ ষোল বংসরে এই যুদ্ধে জয়লাভ করিয়া বিক্রমথোল শৈলগাত্রে শাসন-লিপি লিখাইয়াছিলেন। খ্ৰীষ্টজন্মের ৭৮ বৎসরে তিনি শকাব্দ গণনা রীতি প্রবর্তন করেন, অতএব এই ভীষণ যুদ্ধ জয়ের পরই রাজা শালিবাহন শকাব্দ প্রবর্তিত করিয়া থাকিবেন । সুতরাং সিংহাসনআরোহণের ১৬শ বৎসরে শকাব্দ আরম্ভ, এই হিসাব যদি সত্য হয়, ভাহা হইলে শালিবাহন নিশ্চয় ৬০-৬২ খ্ৰীষ্টাব্দে সিংহাসন অধিরোহণ করিয়াছিলেন। অতএব সাতবাহন রাজ খ্ৰীষ্টাব্দের প্রথম শতকের প্রথম পাদে জন্মগ্রহণ করিয়া থাকিবেন। তবে যুদ্ধজয়ের সময় হইতে যদি শকাব্দ গণনা আরম্ভ হইয়া থাকে তাহা হইলে খ্ৰীষ্টাব্দের ৭৮ অব্দেই শকাবার আরম্ভ বিবেচনা করা যাইতে পারে। সম্ভবত: শকাব্দ গণনার আরম্ভকালটির মধ্যে ১৬শ বৎসরের গোলযোগ রহিয়া গিয়াছে। বিক্রমথোল পাহাড় সন্নিকটে সম্ভবতঃ প্রাচীন রাজধানী ব: নগর অথবা তথায় এই ঘোরতর যুদ্ধাভিনয় হইয়া থাকিবে। বিক্রম অর্থে শৌর্য্য, সাহস, আক্রমণ বুঝায় এবং খোল অর্থে পাগড়ী (উস্ট্রীষ) -“শৌর্য্যের উষ্ণীষ”—চরম আক্রমণের স্থান। স্বতরাং শালিবাহন রাজা তথাকথিত স্থানে চরম আক্রমণ করিয়া শৌর্য্য বীৰ্য্য প্রদর্শন করিয়াছিলেন। - বিক্রমথোল-শৈল বালি পাথরের, স্বতরাং অনেকটা কোমল। বোধ হয় অতি অল্প সময়ের মধ্যে খোদাই-কাৰ্য্য