পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QC● হুত্রে বীণা অলক্ষ্যে এই মানুষগুলিকে একসঙ্গে করিয়৷ গাথিয়া তুলিয়াছে। বীণার জন্মদিনের তখন আর বেশী দেরি নাই, সেই উপলক্ষ্যে শহরের বাহিরে কোথাও চড়িভাতি করিবার প্রস্তাব চলিতেছে। বীণ আপত্তি করিয়া বলিতেছে, “হা, আমিও একটা মাচুর্য, আমার জন্মদিনে আবার চড়িভাতি হবে।” । একজন ভক্ত বলিল, “আর কারুর জন্মদিন কাছাকাছি নেই তার করুব কি ?” বীণা বলিল, “জন্মদিন নেই বা থাকুল কারুর ” ভক্ত বলিল, “তা কি হয়? উংসব করতে হলে জন্মদিন চাই। এই শিক্ষাই ত এতদিন ধরে আপনার কাছে পাওয়া। মাহুষকে বড় করে ধরে রেখে তারপর আর সব-কিছু।” অনেক রাত অবধি সুলতাকে সেদিন বীণা ধরিয়া রাখিল । নিভৃতে র্তাহার বুকে মুখ লুকাইয়৷ কাদিয়া বলিল, “মানুষকে বড় করে ওরা উৎসব করতে চায়, কিন্তু সেই একই কারণে আমার জীবনে যে কোনো উৎসব থাকৃতে নেই, একথা ওদের আমি কি করে বোঝাব?” ইহারই দিন-তিনেক পরে আবার একবার অজয়ের দরজায় ঘা পড়িল । দরজায় ঘা পড়া সম্বন্ধে অজমের মনে এগন একটা কুসংস্কারাপন্ন ভয়। তাড়াতাড়ি একটা জামা গায়ে দিয়া হাতের আঙুলে চুলগুলিকে ঠিক করিয়া বাহিরে আসিয়া সে দেখে, প্রিয়গোপাল ও স্বলতা স্মিতমুখে দাড়াইয়া! এত বিম্মিত হইল, নমস্কার করিতে মৃদ্ধ ভুলিয়া গেল। স্বলতাই আগে নমস্কার করিয়া কহিলেন, “অজ্ঞাতবাস কাটুল, শ্ৰীবৎস মহারাজ ?” - অজয় বলিল, “কি করে কাটল তাই ভাবছি; কারণ শনির প্রকোপ একেবারেই কাটেনি এখন পৰ্য্যন্ত ।” স্থলত বলিলেন, “ত ন-ই কাটুক, সম্প্রতি এই শনিঠাকুরের প্রকোপট সাম্লান ত! আপনি Box No. w882কে চঠি লিখেছিলেন না ? ইনিই হচ্ছেন Box No. w882.” প্রিয়গোপাল বিলাতী প্রথায় সম্মুখের দিকে ঈষৎ একটু কিলেন । অজয়ের মনে পড়িল, মাত্র দুইদিন আগে খবরের কাগজে ಣಷಣ SOBO বিজ্ঞাপন দেখিয়াছিল, কে একজন গ্রন্থকার নিজের কয়েকটা ইংরেজী আইনের বই বাংলায় তর্জমা করাইতে চান, ভাল বাংলা লেখা অভ্যাস আছে এমন একটি অনুবাদককে তাহার প্রয়োজন, মাসে ৫০ মাহিনা।—কাজটা পাইবে আশা করিয়া .চিঠি লেখে নাই। প্রিয়গোপাল কহিলেন, “তা ত হল, কিন্তু একি চেহারা করেছেন আপনি ?” স্বলতা বলিলেন, “চিন্তা গো, চিন্তা! শ্ৰীবৎস মহারাজের উপমাটি অনেক বুঝেই আমি প্রয়োগ করেছি।” প্রিয়গোপাল অত্যন্ত অবাক মুখ করিয়া কহিলেন, “কার চিন্তা ?” অজয় কহিল, "পেটের চিন্তা, আবার কিসের ?” প্রিয়গোপাল কহিলেন, “মূলত এত সহজ অর্থে কথাটা প্রয়োগ করবার মেয়েই নয়।” - স্থলত কহিলেন, “সহজ এবং রূপক দুই অর্থেই প্রয়োগ করেছি।” বহু পূৰ্ব্বেই যে অতিথিদের ভিতরে ডাকা উচিত ছিল, অজয় তাহ জানিত। ডাকিতে হইবেই, ইহাও তাহার অজানা ছিল না। তবু কি মনে করিয়া দেরি করিতেছিল সে বলিতে পরিবে না। কোনও অভাবিত উপায়ে সমস্যাট মিটয়া যাইবে, আজও কি এই আশাই সে করিতেছিল ? সহসা সচকিত হইয়া বলিল, “ভেতরে আসবেন না ?” স্থলত কহিলেন, “আপনি ডাক্লেই আসতে পারি।" সেই পরিত্যক্ত জীর্ণ বাড়ীটার গরাদে দেওয়া সঙ্কীর্ণ অন্ধকার স্তাংসেঁতে ঘরটাতে জীর্ণ তক্তপোষের উপর অতিথিদের বসিতে দিয়া অজয় লজ্জাম মরিয়া যাইতে লাগিল । জানালাটাকে ভাল করিয়া খুলিয়া দিল, কেরাসিন কাঠের বাক্সটার মধ্য হইতে স্বলতার জন্ত একটা হাতপাখা বাহির করিল। s প্রিয়গোপাল কহিলেন, “আপনি বক্সন।” স্বলতা কহিলেন, “বস্বেন এখন, সম্প্রতি তুমি একটু ওঠ দেখি ” প্রিয়গোপাল উঠিলে দেয়ালের আলনায় লম্বিত একটি শাল পড়িয়া লইয়া অজয়কে কহিলেন, #ণীত ত কেটে গেছে, এটা নিশ্চয়ই আর এখন আপনার কিছু কাজে লাগে না ?”