পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] উদাহরণ আমি স্বচক্ষে একবার দেখেছিলাম । সে অনেক দিনের কথা, তখন স্বরমার বয়স তিন বৎসর হবে। জয়ন্তী প্রবোধ বিপিন আর সুরমাকে পাঞ্জাব-মেলের একটা কামরায় তুলে দিয়ে আমি হাওড়া-ষ্টেশনের প্ল্যাটফরমে দাড়িয়ে তাদের সঙ্গে কথা কইছিলাম। গাড়ী ছাড় বার তখন বেশী দেরী ছিল না। আমাদূের পাশের কামরায় জানলার ধারে একটি ষোল-সতের বছরের ইংরেজ মেয়ে বসেছিল ; আর তার সামনে প্ল্যাট্রফমে দাড়িয়ে ४'ः।' পনের-ষোল বছরের ছেলে—বোপহয় মেয়েটির ছোট ভাই-ই হবে—তার সঙ্গে কথাবাৰ্ত্তা করছিল। লম্বাচওড়৷ একটা মাতাল গোর। সেই কাম্রার সামনে দিয়ে বার বার পায়চারী কবৃছিল আর বোধ হয় মধ্যে মধ্যে সেই ইংরেজ মেয়েটির প্রতি অশিষ্ট ইঙ্গিত করছিল। ছেলেটি পিছন ফিরে দাড়িয়ে ছিল বলে’ দেপতে পায়নি, কিন্তু মেয়েটি কয়েকবার লক্ষ্য করে অবশেষে তার ভাইকে বলে’ দিলে। তখন সেই পাতল ছিপছিপে পনের-সোল বছরের ইংরেজ ছেলেটি কি করলে জান ? পায়চারী করতে করতে যাই সে গোরাট। আবার সেই কাম্রার সামনে এসেছে সে সামনে ফিরে এগিয়ে গিয়ে গোরাটার নাকের উপর সজোরে একটি ঘুর্সা বসিযে দিলে, তার পর আর কিছু ন বলে' পিছন ফিরে আগের মত দাড়িয়ে হাস্তে হাস্তে তার বোনের সঙ্গে কথা কইতে লাগল, একবার ফিরে দেখলে না পৰ্য্যস্ত যে সে গোরাট। আক্রমণ করতে আসছে কি না। আর গোয়াটার কি হ’ল শুনবে ? সে তাড়াতাড়ি পকেট থেকে রুমাল বার করে নাক মুছতে মাগল ; আমরা দেখলাম দেখতে দেখতে তার রুমালখান। রক্তে গলগল করে তার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল । তবে পর ছেলেটার দিকে চেয়ে বিড় বিড় করে কি গণাগালি দিয়ে একেবারে প্ল্যাটফরম থেকেই সরে পড়ল। এ কথাও কিন্তু নিঃসন্দেহ যে যদি সে গোরাটার সঙ্গে ছেলেটার মল্লযুদ্ধ হ’ত তাহলে গোরাটা ছেলেটিকে গুড়িয়ে দিতে পারত।” এতক্ষণ বিমলা কোনো কথা কহে নাই, সে স্মিতমুখে কহিল, “এ গল্পটা বাবার মুখে আমরা বোধ হয় একশ' বার শুনেছি।” 31 g. エ ( - রাজপথ »ፋዕ স্বরেশ্বর বিমলার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া সহাস্তে নম্রস্বরে কহিল, “আরও একশ বার শুনলেও ক্ষতি নেই, গল্পটি এমন চমৎকার!” - সুরেশ্বরের এই শাস্ত মৃদু তিরস্কারে অপ্রতিভ হইয়া বিমলা কহিল, “তা সত্যি !” i o j জয়ন্তী কক্ষে প্রবেশ করিলেন, এবং তাহার পশ্চাতে একটি জাৰ্ম্মান-সিলভারের ট্রের উপর দুই তিন রেকাব পাবার লইয়। স্থমিত্র প্রবেশ করিল। কন্যার দ্বার খাবার লইয়। আসা জয়ন্তী একেবারেই পছন্দ করেন নাই। তাহার ইচ্ছ। ছিল উদিপর খানসামা-বালক খাবার বহন করিয়া আনে। কিন্তু স্তরেশ্বরকে একটু বিশেষভাবে পাতির করিবাব অভিপ্রায়ে, এবং মুরেশ্বরের প্রকৃতির ও প্রবৃত্তির কতকট পরিচয় পাইয়া সুমিত্র। ভূত্য দ্বারা খাবার না আনাইয়। কতকটা জিদ করিয়া স্বয়ং বহন করিয়া আনিয়াছিল। তৎসত্ত্বেও জয়ন্তী খানসামাকে লইয়৷ আসিতে ভুলেন নাই । সে একটি কাঠের টিপাই সুরেশ্বরের সম্মুখে স্থাপন করিয়া সুমিত্রার হস্ত হইতে টুে লইবার জন্য উদ্যত হইল । সুমিত্র তাহার হস্তে না দিয়া নিজেই টিপাইয়ের উপর ট্রেখানি স্থাপন করিল। জয়ন্তীকে নির্দেশ করিয়া সুরমা কহিল, “স্বরেখাবাবু! ইনি আমাদের মা ।” স্বরেশ্বর তাড়াতাড়ি উঠিয়া নত হইয়া যুক্ত করে জয়ন্তীকে প্রণাম করিল। জয়ন্তী আশীৰ্ব্বাদ করিয়া কহিলেন, “তুমি বাবা, আজ আমাদের যে উপকার করেছ তার জন্যে কি বলে ধন্যবাদ দোবে তা জানিনে । ভগবান তোমার মঙ্গল করুন :”

  1. রেশ্বর কোন ও কথা কহিবার পূৰ্ব্বেই বিমান হাসিয়া কহিল, "কে ধন্যবাদ দেওয়া শক্ত। যেমৰঞ্জকরেই দিন না কেন, উনি ঠিক ফিরিয়ে দেবেন।”

এই প্রসঙ্গে একটু পরিহাস করিবার লোভ স্বমিত্রা : কিছুতেই সম্বরণ করিতে পারিল না ; মৃদু হাসিয়া কহিল, ' “ধন্যবাদটা ত’ বিলিতী আমদানী,—ওটা ফিরিয়ে দেওয়াই উচিত।” এবার সুরেশ্বর সুমিত্রার পরিহাসটুকু ধরিতে পারিল ;