পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] আঘাত দিবার আশঙ্কায় তাহা ব্যক্ত করিতেছিলেন না ; তথাপি অব্যাহতি ছিল না । সজনীকান্ত তাহার অৰ্দ্ধপক্ক গুম্ফের মধ্যে অবহেলার লঘুহাস্য টানিয়া কহিল, “তোমরা যাই বল বাপু, তোমাদের সহরের স্পঞ্জি রসগোল্লা, যার এত স্থখ্যাতি তোমরা কর, কোন কাজেরই নয় ; দীতে কচকচ, করে ।” 够 দাতে কচকচ করে বটে, কিন্তু মুখে দিলেই অন্তহিত হয়, তাও একটা নয় দুইট নয়, দুই তিন গণ্ড, তাহা এই দুই দিবসের মধ্যে স্থমিত্রা স্বচক্ষে অন্ততঃ তিনচারিবার দেখিয়াছে । এমন কি প্রথম দিন যখন কলিকাতার রসগোল্লার সহিত সজনীকান্তকে যশোহরের দুইটা ছানবিড় দেওয়া হইয়াছিল তখন কলিকাতার রসগোল্লার প্রতিই তাঁহাকে সমধিক পক্ষপাত করিতে দেখা গিয়াছিল । তাই এই নিল কপট অস্বীকারোক্তি শুনিয়া মুমিত্রার যেমন রাগ হইল, এই স্থপ্রকাশ অপলাপের লঘু শিশুত্ব উপলব্ধি করিয়া তেমনি সে কৌতুক ও বোধ করিল। যদি চ সজনীকান্ত নিতান্ত অবতারণার হিসাবেই “তোমরা যাই বল বাপু,” বলিয়া কথা আরম্ভ করিয়াছিল, কাবণ এ পর্য্যন্ত তাহীর প্রতিবাদে কেহই কিছু বলে মাই, তথাপি এবার মুখর স্থমিত্র। তাহার উদ্যত রসনাকে কোনরূপে সংযত করিতে পারিল না । সে শান্তস্মিতমুখে বলিল, “তোমাদের সহরের পাথরে ছানাবড়া কিন্তু খুব কাজের মামা বাবু, একটা খেলেই পেটে কটুকটু করে।” বলিয়া হাসিতে লাগিল । এই আকস্মিক অতর্কিত আক্রমণে সজনীকান্ত একেবারে মৃক হইয়া গেল, এবং অপর সকলে সুমিত্রার বাচলিত এবং অশিষ্টত দেখিয়া বিস্মিত ও সংক্ষুব্ধ হইল । এই পরিশোচনীয় ব্যাপারকে একটা সহজ সীমান্য আকার দিবার অভিপ্রায়ে আরক্তমুখে জয়ন্তী কহিলেন, “মেয়ের ব তাতেই ঠাট । সেবার উনি কাশী থেকে আস্বার সময়ে ফরমাস দিয়ে চমচম্ করিয়ে আনলেন, তা দেখে মেয়ের কি ব্যাখ্যান ! অথচ, বুঝলি কিনা সজ ?—সকলে খেয়ে কত সুখ্যাতি !” রাজপথ এই সাস্তুনার বাক্যে কতকটা আশ্বস্ত হইয়া সজনীকান্তর মুখে হাসি ফুটিল। সে বলিল, “তা কি আর আমি বুঝি নি দিদি ?—ও একটু তামাসা করছে। যশোহরের ছানাবড়ার নিন্দে কি করবার যে আছে ?” এবার প্রমদাচরণ তাহাৰ চেয়াবে উচু হইয়া উঠিয়া বসিয়া মুদুহাস্যের সহিত কহিলেন, “অত সহজ কথা নয় হে সজনী ! কলিকাতার রসগোল্লার সঙ্গে প্রতিযোগিতা, ভাল করে প্রমাণ করতে হবে। আমি বলি তুমি যশোর থেকে ফরমাস দিয়ে পাঁচ সের ছানাবড়া অীনাও, আমরা ও পাচসের রসগোল্লা ফরমাস দিই । তারপর সবাই মিলে সুবিধামত একটা বিচার-পদ্ধতি স্থির করলেই হবে ।" বলিয়া প্রমদাচরণ, একটা বিশেষ কৌতুক প্রদ পরিহাস করিয়াছেন ধারণা করিয়া, অমিত ভাবে হাসিতে লাগিলেন । এবার সজনী সম্পূর্ণ উৎফুর হইয়া উঠিয়া বিজয়দুপ্তনেত্বে সুমিত্রার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া নিম্নকণ্ঠে তাহাকে বলিল, “বুঝতে পার্ছ ত মিত্র, ধেlয মশায় ছানাবড়া কি রকম পছন্দ করেন ? এ পালি ফন্দী করে আরও কিছু ছানা বড় আনাবার মতলব ।” সুমিত্র। কোম উত্তর দিবার পূৰ্ব্বেই একজন ভৃত্য আসিয়া স” বাদ দিল সুরেশ্বর আসিয়াছে । প্রমদাচরণ সুরেশ্বরকে তথায় লইয়া আসিবার জন্য আদেশ দিলেন । সজনী বুঝিতে ন! পারিয়া অনুসন্ধিংস্ক মেত্রে জয়ন্তীর . প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া কহিল, “কে দিদি ?” জয়ন্তী মৃদু হাসিয়া কহিল, "সেই ছেলেটি, বোটানিকাল গার্ডেনে যে—“ জয়ঙ্গীর কথা শেষ হইবার পূর্বেই সজনী বলিয়া . উঠিল, “ও, বুঝেছি। তোমাদেব সেই বীরেশ্বর সুরেশ্বর ত ? সজনীকাস্থের এই অহেতুক মন্তব্যে জয়ন্থা কোনো উত্তর মা দিয়া শুধু একটু হাসিলেন ; প্রমদাচরণ ক্র কুঞ্চিত করিয়া অন্যদিকে চাঙ্গিয়া বলিলেন, “কিন্তু সত্যিক্ট সে বীরেশ্বর !"