পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- প্রবাসী—শ্রাবণ, OLLO [ ২৩শ ভাগ, ১ম খণ্ড বেনে-জল سراي 6 छ्झ পরদিন ঠিক সময়েই রতন মিঃ ঘোষের বাড়ীতে গিয়ে হাজির হ’ল । চাকর এসে রতনকে নিয়ে উপরে গেল। রতন কর্পেট-পাত সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে দেখলে, সিড়ির দেয়ালের গায়ে যে-সব ছবি ঝোলানে রয়েছে, সেগুলি কেবল নামজাদা পটুয়াদের আঁকা নয়, সেগুলি যথার্থই স্থনির্বাচিত। প্রথমেই গৃহস্বামীর সৌন্দৰ্য্য-জ্ঞানের এই পরিচয় পেয়ে সে বুঝলে, এখানে তার অবস্থাটা অন্ততঃ ডাঙায়-পড়া জলের মাছের মতন হবে না। চাকর তাকে একেবারে ছাদের উপরে নিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে রতন অবাক হয়ে দেখলে, সমস্ত ছাদটাই অপূৰ্ব্ব এক বাগানে পরিণত হয়ে গেছে! কোথাও ছোট ছোট সবুজ ঘাস-জমি, কোথাও ঘাস-জমিতে মন্ত্রমী ফুল, কোথাও চমৎকার লতাকুঞ্জ, কোথাও বা আবার মাঝারিগোছের গাছ পৰ্য্যস্ত রয়েছে। এ-সমস্ত উদ্ভিদ কাঠের পায়া-ওয়ালা দরকার-মত ছোট-বড় তক্তা বা নানাআকারের কাঠের আধারের মধ্যে জন্মেছে, তাই ছাদের কোন ক্ষতি হয়নি বা বর্ষাকালে সেখানে জল-নিকাশেও কোন বাধা হয় না। তা ছাড়া, ছোট-বড়-মাঝারি টবেও যে কত রকমের ফুলগাছ সাজানো রয়েছে, তা আর গুণতিতে আসে না ! হঠাৎ দেখলে মনে হয়, চারিদিকের এই শুকনো ষ্টটের মরু-ক্ষেত্রের মধ্যে যেন কাব বিচিত্র কুহকে রামধন্সকের রঙীন স্বপ্ন সজাগ হ'য়ে উঠেছে ! মিঃ ঘোষ একখানি কাচি হাতে ক’রে একটি ফুলগাছের অংশ-বিশেষ ছেটে দিচ্ছিলেন। মুখ তুলে রতনকে দেখে বললেন, “এস রতন, এস।” রতন তাকে নমস্কার করে বললে, “আপনার ছাদ দেখে আমি আশ্চৰ্য্য হ’য়ে গেছি!” মিঃ ঘোষ হেসে বললেন, “ছাদ দেখে আশ্চৰ্য্য হয়ে গেছ ? কেন ? আমি কঠোর ডাক্তার, ব্যাধি আর মৃত্যু আর যন্ত্রণা নিয়েই আমার কারবার, অথচ আমিই সম্রাট - কবি সাজাহানের মত ছাতের ওপরে বাগান বানিয়েচি দেখেই তুমি বুঝি আশ্চৰ্য্য হয়েচ ?” রতন বললে, “সত্যি কথা বলতে কি মিঃ ঘোষ, আপনার কাছ থেকে আমি এতটা কবিত্বের আশা করিনি ।” মিঃ ঘোষ বললেন, “দেখ রতন, আমাদেরই মত লোকের অবসরকালে কবিত্ব উপভোগ করা উচিত । এদেশের লোক এই স্বাভাবিক সহ্যটি জানে না, তাই তারা বিশ্রামের আসল স্থখটুকুও ভোগ করতে পারে না। আমাদের দেশে বৈঠকখানাতেও ব’সে কেরাণী তার আপিসের গল্প করে, পণ্ডিত খালি পুথির কথা নিয়েই মেতে থাকেন, উকিল তার মামলার প্রসঙ্গই তোলে,— আর এইজন্তেই বাঙালীর বৈচিত্র্যহীন জীবন আরো বেশী একঘেয়ে হয়ে ওঠে । কার কি ব্যবসা, অবসর-কালে সেটা একেবারেই ভুলে যাওয়া উচিত, তা না হ'লে বিশ্রামের কোনই সার্থকতা থাকে না । বিশ্রামের সময়ে সম্পূর্ণ উন্টে বিষয়ের চর্চা করা দরকার, নইলে মস্তিষ্ক প্রাস্ত হয়ে পড়বে, মন বুড়িয়ে যাবে, কর্ণের শক্তি ক’মে আসবে।” রতন বললে, “ঠিক বলেচেন। কাজের সময় খেল৷ আর খেলার সময়ে কাজের কথা ভাবলে, কাজ আর খেলা দুইই ব্যর্থ হ’য়ে যায়, আর সেই ব্যর্থতার সুযোগে অকাল বাৰ্দ্ধক চুপিচুপি আমাদের মনের মধ্যে ঢুকে পড়ে।” মিঃ ঘোষ বললেন, “হঁ্য, তাই আমি কৰ্ম্মক্ষেত্রে ডাক্তার, আর অবসরে ফুলের কবি। রতন, তুমি তো কবিতা লিখে থাকে, কিন্তু বলে দেখি, আমার এই ফুল গুলির নরম বুকে, রাঙা হাসিতে আর তাজা গন্ধে তোমার কবিতার চেয়ে কি কম কবিত্ব আছে ?” রতন বললে, “ফুল হচ্চে বিশ্ব-কবির রচনা, ওর সঙ্গে আপনি আর আমার কবিতার তুলনা করবেন না!" ছাদের মাঝখানে দুখানি বেতের জাসন ছিল। মিঃ