পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ) । সুরেশ্বরকে আগাইল দিতে সিঁড়ির নিকট উপস্থিত হইয়া স্থমিত্রা স্মিতমুখে কহিল, “মামা-বাৰু এখন কিছুদিন এখানে থাকবেন, কিন্তু তার কথায় মনে কিছু করবেন না, স্বরেশ্বর-বাবু। তার কথার ধরণই ঐ রকম।” স্বরেশ্বর হাসিয়া কহিল, “কথা আমাদের অনেক রকম শোনা অভ্যাস আছে, আপনার মামা-বাবুর কথা সে হিসাবে কিছুই গুরুতর নয়। আমি কিছু মনে করিনি, আর আপনি যখন বলছেন, ভবিষ্যতেও কিছু মনে করব না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকৃবেন।” হাস্তপ্রফুল্লমুখে স্থমিত্ৰ কহিল, “আপনার উপহারের জন্য আর-একবার ধন্যবাদ দিচ্ছি। রুমালগুলি অামার ভারি ভাল লেগেছে।” ' - স্বরেশ্বর হাসিতে হাসিতে বলিল, “ওগুলো রেখে দেবেন, এবার আমার হাত কাটলে কাজে লাগবে ।” স্বরেশ্বরের কথা শুনিয়া স্বমিত্র হাসিয়া উঠিয়া বলিল, “তা সত্যি ।” - তাহার পর বিশেল কিছু না ভাবিয়া-চিন্তিয়া অসতর্কমনে বলিয়া বসিল, “শুধু আপনার কেন, আমারও হাত কাটুলে কাজে লাগবে।” কথাটা বলিয়াই কিন্তু তাহার মুখখান প্রভাত-আকাশের মত টকৃটকে হইয়া উঠিল। স্বরেশ্বর শাস্তম্মিতমুণে কহিল, "না, ন, আমার রুমালের সে সৌভাগ্যে দরকার নেই, আপনার অক্ষত হাতে স্থান পেলেই সে সার্থক হবে।” বলিয়। সে উত্তরের অপেক্ষা না করিয়া করজোড়ে স্বমিত্রাকে নমস্কার করিয়া সিড়ি দিয়া নামিয়া গেল । পথে বাহির হইয়া মধ্যাহ্নের খর রৌদ্রেও স্বরেশ্বরের মনে হইল আকাশ যেন রক্তিম এবং বায়ু স্বশীতল ! [ a | স্বরেশ্বর চলিয়া গেলে স্বমিত্রা ক্ষণকাল স্তব্ধ হইয়া চিস্তিতমনে সিড়ির প্রান্তেই দাড়াইয়া রহিল। তাহার পর তাহার কক্ষে ফিরিয়া আসিয়া সুরেশ্বরের-দেওয়া রুমাল তিনখানা নাড়িয়া চাড়িয়া দেখিয়া তুলিয়া রাখিল। সন্ধ্যার পর স্বরম, সুমিত্রা ও বিমান ড্রয়িংক্রমে বসিয়া গল্প করিতেছিল, কথায় কথায় স্বরেশ্বরের কথা উঠিল। .* • وميه স্বরম কহিল, “স্বরেশ্বর-বাৰু একেবারে খাটি স্বদেশী, একটুও অনাচার সহ করতে পারেন না।” t বিমান কহিল, “কিন্তু একেবারে খাটি হ’লে অনেক জিনিষ আবার অকেজো হ'য়ে পড়ে। তাই সোনাকে প্রচলিত করবার জন্যে খাদ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। অনাচার নিশ্চয়ই মন্দ জিনিষ, কিন্তু আচার অতিমাত্রায় বেড়ে উঠলে অত্যাচারে দাড়ায়। মুকুজেদের ছোট গিল্পী দিনে একবার স্বান করেন বলে', দেবসেবার আয়োজন র্তার দ্বারাই সম্ভব হয় ; বড় গিল্পী পঞ্চাশবার স্নান করেন বলে’ দেব-মন্দিরে ঢোকৃবারই সময় পান না।” স্বরেশ্বরের বিরুদ্ধে এইটুকু প্রতিকুল আলোচনাতে স্বমিত্র। মনের মধ্যে কোথায় একটু আঘাত পাইয়৷ চঞ্চল হইয় উঠিল। বলিল, “আপনি কি তা হ’লে বলেন যে অনাচার কতকটা সহ করা উচিত ?” বিমান কহিল, “উচিত বলিনে, তবে অবস্থা-বিশেষে সহ করা দরকার হ’ত পারে।” স্বরমার দিকে একবার চাহিয়া স্থমিত্রা কহিল, “কি রকম অবস্থায়, একটা উদাহরণ দিতে পারেন কি ?” মুছ হাসিয়া বিমান কহিল, “পারি। ৰোটানিকাল গার্ডেনে স্বরেশ্বর-বাবুর হাত বাধবার জন্তে তুমি যখন তোমার রুমাল দিতে উদ্যত হয়েছিলে, তখন অবস্থার অনুরোধে সেটা যদি তিনি গ্রহণ করতেন তাতে সাধারণ অবস্থায় বিলিতী রুমাল ব্যবহার করার অনাচার উার হ’ত না ।” , স্বরেশ্বরের রুমাল-প্রত্যাখ্যান-সম্বন্ধে একদিন স্বরম স্বমিত্রা ও বিমানের মধ্যে আলোচনা হইয়াছিল, এবং স্বদেশী-বিদেশী-বিচার-বিষয়ে সুরেশ্বরের ঐকাস্তিক নিষ্ঠার কথা হিসার করিয়া প্রত্যেকেই সিদ্ধান্ত করিয়াছিল যে রুমালটি বিলাতী ছিল বলিয়াই স্বরেশ্বর গ্রহণ করে নাই। আজ সকালে যখন স্বরেশ্বর স্বমিত্রাকে বলিয়াছিল, "কমালগুলো রেখে দেবেন, এবার আমার হাত কাটলে কাজে লাগবে" তখন সে বিষয়ে স্থমিত্রার আর কোন সন্দেহ ছিল না। তাই অন্য দিক্ হইতে সুরেশ্বরের পক্ষ অবলম্বন করিয়া সে বলিল, “নিজের কাছে খন্দর না থাৰুলে তিনি হয় ত আমার রুমালই নিতেন।”