পাতা:প্রবাসী (ত্রয়োবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* १०३ অস্থায় কথা আর কখনো বোলো না । রতন আমার চাকর নয়, আমিও ওর মনিব নই।” কুমার-বাহাদুর, বললেন, “কি-রকম, রতন কি আপনার মাইনে খায় না ?” বিনয়-বাবু বললেন, “আমি যেমন রতনকে টাকা দি, তেমনি তার বদলে রতনের শক্তির দানও কি আমি গ্রহণ করি না ? এ তো ৰিনিময় মাত্র । আর, রতন যে বিনামূল্যে সেকেও, ক্লাসে যাবার লোভও ত্যাগ করলে, এতে তো বরং তার মনুষ্যত্বেরই পরিচয় পাওয়া যায় । এ যদি জাক হয়, তবে আমার মতে এমন জাক প্রত্যেক মানুষেরই থাকা উচিত।" কুমার-বাহাদুর বললেন, “কি জানি, এ ব্যাপারে মনুষ্যত্বের পরিচয় আমি তো কিছুই পেলুম না।” বিনয়-বাৰু অল্প-একটু হেসে বললেন, “তা যদি না পেয়ে থাকেন, তাহ’লে আপনাকে আর বুঝিয়েও কোন ফল নেই ।” সেন-গিরী লক্ষ্য করলেন, তার স্বামীর কথা শুনে কুমার-বাহাদুরের মুখ কেমন ভার-ভার হয়ে এল । তাড়াতাড়ি কথাটা চাপা দেবার জন্যে, স্বামীর দিকে চেয়ে তিনি ব’লে উঠলেন, “আচ্ছা, পুরীতে আমরা কে কে যাৰ ?” বিনয়-বাৰু বললেন, ‘ আমরা সকলেই ...আচ্ছ, রতনকেও যদি আমি যুগে যাবার জন্তে অনুরোধ করি, তাতে তোমার অমত নেই তো ? ছেলেটিকে আমার বড় ভালো লাগে।” সেন-গিল্পী বললেন, "কিন্তু রতন তোমার অনুরোধ হয় তো রাখবে না। ছেলেটির সব ভালো, কিন্তু কেমন যেন ছাড়া-ছাড়া ভাব, আমাদের সঙ্গে যেন ভালো ক’রে মিশতে রাজি নয়।” বিনয়-বাবু বললেন, “সেজন্যে আমরাই হয় তো দায়ী, আমাদের মধ্যে রতন হয় তো সমযোগ্যের মত মেশবার স্বযোগ পায় না, সেও তাই তফাতে তফাতে থাকে । অথচ জামদের মুখে শুনেচি, তার বাড়ীতে রতন মাসখানেকের মধ্যেই ঘরের ছেলের মত হয়ে পড়েচে । আনন্দের বাড়ীতে সে যখন অমন মন খুলে মেলামেশা প্রবাসী—ভাদে, ১৩৩০ [ ২৩শ ভাগ, ১., খণ্ড করে, তখন এখানেও তা পারে না কেন ? এর নিশ্চয়ই কোন কারণ অাছে।” - সকলে কিছুক্ষণ নীরবে ব'সে রইলেন। কুমার-বাহাদুর স্তব্ধভাবে স্বনীতির মুখের পানে চেয়ে চেয়ে কি যেন ভাবতে লাগলেন। তারপর তিনি বললেন, “বিনয়-বাবু, আপনার তাহলে সত্যি-সত্যিই পুরীতে চললেন ?” —“তা চলুলুম বৈকি! দিন-রাত রোগ আর মৃত্যু দেখে দেখে মন একেবারে জীর্ণ হয়ে পড়েচে !” —“কতদিন থাকৃবেন ?" —“মাস-দুয়েক—অবশ্য মন যদি টেকে ” —“তাহ’লে এই মাস-দুয়েক আমাকে এখানে একূল৷ পড়ে থাকৃতে হবে ?” —“কেন, আপনিও আমাদের সঙ্গী হোন না !" বিনয়-বাবুর মুখ থেকে ঠিক কথাটি বার করবার জন্যেই কুমার-বাহাদুর পুরী যাওয়ার প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। মনে মনে নিজের সাফল্যে অত্যন্ত খুসি হয়ে তিনি বললেন, “আমার তাতে বিশেষ-কিছু অমত নেই।” নয় বৈকালে চায়ের পেয়ালায় প্রথম চুমুকটি দিয়েই আনন্দ-বাবু পরমানন্দে উচ্চারণ করলেন একটি সুদীর্ঘ আ! —সঙ্গে সঙ্গে রতন এসে দরজার সাম্মে আবিভূতি হোলো । আনন্দ-বাবু বললেন, “আরে, রতন যে ! পুরী থেকে কবে ফিরলে ?” —“আজ সকালে ।” —“বিনয়ের জন্যে বাড়ী ঠিক করেচ ?” —“হ্যা, একেবারে সমুদ্রের ওপরে।” —“বোসো, বোসো ! ক'দিন তোমার সঙ্গে দেখা হয়-নি ! পূর্ণিমা, রতনের জন্যে—“ —“এক কাপ, চা চাই তো বাবা ? এই এনেচি”— বলতে বলতে হাসি-মুখে পূর্ণিমা ঘরের ভিতরে এসে দাড়াল ।