পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] আবেষ্টন মনে রাখিয়া এই প্রচলিত অনুমান অনুসারেই স্ত্রীশিক্ষার স্তরগুলি বিভক্ত হইয়াছে। স্ত্রীশিক্ষার ধারাবাহিক আলোচনায় এই বিভিন্ন স্তরগুলির উপর সম্যক দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়। শ্ৰী মণীন্দ্রনাথ রায় “বাণী-ভবন” অল্পবস্ত্রের চিন্তা সব মানুষেরই সৰ্ব্বপ্রথম চিন্তা । যেখানে এই চিন্তাই জীবনের প্রধান সমস্ত হয়ে দাড়িয়েছে, সেখানে মানুষের আত্মার অন্তান্ত ধর্শ্বের বিকাশ পদে পদে বাধা পাচ্ছে। তার সমস্ত মন-প্ৰাণ যখন কেবল “হ অন্ন হা অল্প” বলে কাদে, তখন জ্ঞান বিজ্ঞান সাহিত্য শিল্পের অর্চনা করবে কে ? বিশেষ করে আমাদের এই বাঙালীর ঘরে আদিম মাহুষের এই প্রধান চিন্তাটি তার সৰ্ব্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে এখনও এমনভাবে আধিপত্য করছে যে মনোমন্দিরে আর কোনও দেবতার আসন প্রতিষ্ঠা করবার আর আমাদের অবসর হয় না। অর্থচিন্তাকে তুচ্ছ বলে দূরে সরিয়ে উচ্চ-চিন্তায় মনোনিবেশ করতে মানুষকে আমরা যতই উপদেশ দিই না কেন, প্রকৃতিকে ভোলাতে পারব না। প্রকৃতির ক্ষুধা আমরা যতক্ষণ না মেটাচ্ছি ততক্ষণ আর কারও পাওনার কথা শোল্বার আমাদের ক্ষমতা নাই। অথচ সভ্য মানুষ আমরা বলি যে দৈহিক অভাব নিবৃত্তির চিন্তাটা মানুষের চিন্তাসৌধের নিম্নতম সোপান মাত্র ; এখানেই যদি আমরা আজীবন পড়ে থাকলাম তবে আমাদের মনুষ্য-জন্মের সার্থকলে কিসে? পণ্ডতে আর মানুষে তবে প্রভেদ কোথায় ? বাস্তুবিক সে-কথা খুবই সত্য ; আজীবন এখানে পড়ে। থাকৃলে আমাদের চলবে না, আমাদের অগ্রসর হতে হবে । কিন্তু অগ্রসর হব আমরা খানিকট পথ বাদ দিয়ে ত নয়, সবটা হেঁটে পার হয়ে । অল্পবস্ত্রের চিন্তা যাতে আমাদের সমস্ত মনোরাজ্য জুড়ে বসতে না পারে, সেই জন্ত সৰ্ব্বাগ্রে তার পাওনা আমাদের মিটিয়ে দিয়ে ভারমুক্ত হয়ে পথে বেরোবার অধিকার অর্জন কতে হবে। মুক্তি অর্জন করবার এই যে উপায়, আজ আমাদের স্ত্রী মহিলা-মজলিসূ—“বাণী-ভবন” Jad: পুরুষ সকলকেই এইটি অবলম্বন করতে হবে। উপার্জনে স্ত্রীপুরুষের সমান অধিকার আছে কি না, উপার্জন স্ত্রীজনোচিত কাৰ্য্য কি পুরুষোচিত কাৰ্য্য সে-সব বিচার না করে দেখতে হবে যে উপার্জনের সাহায্যে আমরা আমাদের নিশিদিনের ক্রমান ভুলে অশ্রুহীন চোখে জগতের দিকে তাকাবার অধিকার পাব । স্ত্রীজাতিকে আমরা অন্নপূর্ণ জগদ্ধাত্রী কত নামেই অভিহিত করি। কিন্তু চোখের সাম্নে আমরা কি গৃহহীনা নিরম অন্নপূর্ণার মূৰ্ত্তি অহরহ দেখছি না? অন্নপূর্ণ জগদ্ধাত্রী নাম ভারতবাসী বৃথাই দেয় নি। জগৎকে লালন করা অন্নদান করা ত নারীজাতিরই কাজ । যতক্ষণ র্তাব ভাণ্ডার পরিপূর্ণ থাকে ততক্ষণ সন্তানকে আশ্রিতকে অন্নদান করায় তার যেমন আনন্দ তেমন আর হয়ত কিছুতে নয়। কিন্তু যার শূন্ত ভাণ্ডারে সন্তানের ক্ষুধা মিটাবার জন্য একমুঠা অন্নও নেই, নিজের দিনান্তের আহারের জন্য যিনি পরের দরজায় কাঙালিনী, অন্নপূর্ণ নামে তাকে অভিহিত করার চেয়ে বড় পরিহাস আর কি করা যেতে পারে ? নারীশিক্ষা-সমিতি নারীজাতির সর্বাঙ্গীন কল্যাণ কামনা করেন । র্তার চান বাঙালীর মেয়ের এই অন্নপূর্ণ নাম সার্থক করতে । বাঙালীর ঘরে ঘরে অন্নপূর্ণর আত্মপ্রতিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে আনন্দে অল্প বিতরণ করুন, এই তাদের ইচ্ছা । তাই গৃহহীন জগদ্ধাত্রী ও নিরয়া অন্নপূর্ণাদের কল্যাণ-কামনায় এই বাণীভবন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। অবশ্ব সেই সঙ্গে একথাও বলা দরকার যে নারীমাত্রেরই কল্যাণ-কামনা আমাদের উদ্দেশ্ব। মানুষের ঘরে অল্প থাকৃলেই তার সকল কামনার অবসান হয় না ; তার অন্য অভাব থাকৃতে পারে। উপার্জনক্ষম মানুষের যে আত্মপ্রসাদ আছে, তার স্বাদ যিনি পেয়েছেন, তিনিই জানেন অবসরকালে সঙ্কুপায়ে ঘরে বসেই অর্থ উপার্জন করতে পারলে মানুষের অন্নবস্ত্রের অভাবই যে কেবল দূর হয় তা নয়, তার মনেরও একটা মন্ত অভাব মেটে। ভগবান তাকে যে হাত পা মস্তিষ্ক দিয়েছেন তার ব্যবহারের ক্ষেত্র যত প্রসারিত হয়, মনও তত মুক্তি পায় । তৃতীয় আর-একটা জিনিষ এতে লাভ হবে, সেটা