পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩০ ০৮:০৮, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)...~, or, বাঙলার শি • এই বাঙলাদেশ ভারতবর্ষের বিবিধ প্রাদেশিকতা ও বৈচিত্রোর মধ্যে আপনার খামলতা স্নিগ্ধচ্ছায় ও বিচিত্র রস-সৌন্দয্যে ভরপুর হয়ে ভারতের এক প্রান্তে আপনার আসনখানিকে উজ্জল করে রয়েচে । আমরা যখন এই বাঙলার বাইরের দিকে চেয়ে দেপি তপন কেমন একট। নীরস কাঠখোটার ভাব কোথাও উচুউচু কালে কর্কশ পাথরের জমাট পাহাড়ে, কোথাও পা তাবাটে ঘাসে ধরণীর জীবন-রহস্যকে লোপ পাইয়ে দেবার চেষ্টা করচে বলে মনে হয়। আমাদের বাংলার শিল্পের মধ্যে ও এমন একটি অন্তনিহিত রস ও স্নিগ্ধতা আছে যার পরিচয় মোগল, কাংড়া বা রাজপুত কোন জাতীয় শিল্পের মধ্যেই পাওয়৷ যায় না। আমাদের মনে হয় দেশের এই আবি-হাওয়ার সঙ্গে শিল্পের বা কাব্যেরও একটি যোগ আছে । বঙ্গলক্ষ্মীর শ্যামল ক্রোড়ে যে-সকল মানবশিশু জুম্মান তার তারই অনুরূপ কোমলতা এবং স্নিগ্ধতা প্রাপ্ত হন । আমাদের দেশে কবি এবং শিল্পীদের মধ্যে সেই কারণেই বোধ হয় এইরূপ ভাবপ্রবণতা পরিলক্ষিত হয় । আমাদের প্রাচীন কাঠের পাটায় অণক পোটোদের চিত্র দেখলে দেখা যায় যে তাতে মোগল প্রভৃতি ভারতবর্ষের অন্যান্য স্থানের শিল্পীদের মত বর্ণযোজনা বা রেথার সহজ ও সরল গতির অভাব নেই। অজস্ত। প্রভৃতি জগৎ বিখ্যাত প্রাচীন চিত্রশিল্পের রেখা ও বর্ণের মতই বাঙলার চিত্রের রং ও রেখা সরল ও লাবণ্যপরিপূর্ণ। আধুনিক যুগেও আমাদের দেশে এইরূপ অঙ্কনরীতির প্রচলন একেবারেই নেই বললে ভুল বলা হয় । কেননা, বিংশশতাব্দির ইংরেজি শিক্ষার গৌরবাভিমানীদের চক্ষুর অন্তরালে, কলকাতা সহরের একপ্রান্তে কালীঘাটে এখনও সেইরূপ পদ্ধতিতে অঁাকার প্রচলন আছে। তবে, দুঃখের বিষয় সেইসকল শিল্পীদের পরিণাম বা পরিণতির দিকে আমাদের শিক্ষিত-সমাজের কিছুমাত্র লক্ষ্য নেই। এমন কি কালীঘাটের পটের উপর এরূপ অশ্রদ্ধা যে ভদ্রসমাজে নাম উল্লেখ করাও রুচিবহিভূত। যাহোক, আজ যে আমরা সেই বাংলার উপেক্ষিত শিল্পসম্বন্ধে এই বিরাট সাহিত্য প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ লক্ষিত হয় না। [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড 、ヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘヘ。 সভায় একটি কথা বলবার স্থযোগ পেয়েচি এইই-পরম ভাগ্য ! বহুব খসর থেকে মোগলরাজ্যের তিরোধানের অব্যবহিত পরে আমাদের দেশে পাশ্চাত্য শিল্পের একটা প্রভাব চলে আসছিল ; তার মধ্যেও অত্যন্ত সঙ্কীর্ণভাবে দুঃখীদের দ্বারা প্রতিপালিত হয়ে বঙ্গশিল্প এখনও যে জীবনীশক্তির পরিচয় দিচ্চে তা’ পরম আনন্দের বিষয় সন্দেহ নেই। আমরা পূৰ্ব্বে অপরাপর প্রবন্ধে অনেকবার বলেচি এবং এখনও বলচি যে আমাদের শিল্পের অবনতির কারণ বিদেশী শিক্ষ। আমাদের পটুয়ার সৌভাগ্যক্রমে এই বিজাতীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়নি বলেই এখনও পর্য্যন্ত একভাবেই দেশীধরণটি বজায় রেখে পট এ কে আসচে। অবশ্য এইসব শিল্পীদের উন্নতি বা অবনতির কোনই তারতম্য শক্তি জাগিয়ে তোলবার দিকে দেশের শিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রেরই লক্ষ্য রাখা উচিত। শিল্পের প্রধান সহায় । আমরা আশৈশব ইংরেজি শিশুপাঠ্য পুস্তকে, বিদেশী চিত্রপুস্তকে, বিদেশী শিল্পের রূপ দেখতে দেখতে চোপ বিগড়ে ফেলি ; বিদেশী শিল্পের গৌরবের কথা শুনতে শুনতে মনও দেশের দিক থেকে বেঁকে বসে। স্বতরাং তারই ফলে আমাদের মানসলক্ষ্মী বিদেশী মানসপ্রতিমার হুবহু প্রতিরূপে প্রকাশিত না হলেও একটি বিকৃতরূপে ধরা দেয় আমরা যথন ছেলেবেলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চোদ্দ বৎসরকাল যান্ত্রিক নিয়মে ইংরেজি শিক্ষা করে প্রথম সংস্কৃত-সাহিত্যের পথ দিয়ে দেশীয় ভাবরাজ্যে প্রবেশলাভ করার অধিকার পাই, তখন আমাদের মানসপটে বিদেশী মানসলক্ষ্মীর ছবি এরূপ প্রবল হয়ে জেকে বসে যে এমন কি মেঘদূতের কবিবর্ণিত বিরহিণীর "তন্ত্রী খাম শিখরিদশন পঙ্কবিশ্বাধরোষ্ঠী মধ্যে ক্ষাম চকিত-হরিণী-প্রেক্ষণ নিয়নাভি: | শ্রেণী:ভারাদ অলসগমন স্তোকনম্র ওনাভ্যাং য তত্র স্যাদ যুবতি-বিষয়ে সৃষ্টি আদ্যের ধাতু । এই রূপটি ভিনাসের মূৰ্ত্তির উপর হালফ্যাসানের কাপড় পর একটি আধুনিক বিরহবিধুর রমণীমূৰ্ত্তি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। আমাদের যদি অজস্ত প্রভৃতির xামাদের এই শিল্পীদের ক্রমবিকাশের । দেশীয় সাহিত্যই দেশীয় : | | ২য় সংখ্যা] প্রাচীনচিত্র, বরভূধরের মূৰ্ত্তি প্রভৃতি দেশীয় শিল্পের সঙ্গে বিদেশী ভিনাসের ন্যায় পাঠ্যপুস্তক প্রভৃতির মারফতে শৈশবাবধি পরিচয় থাকত। তবে আমরা ইংরেজি শিক্ষার দ্বার বিদেশীর চোখ নিয়ে স্বদেশের শিল্পের বিচার করতে नl। *. এখন বাঙলার প্রাচীন চিত্র ও আধুনিক পোটোদের সম্বন্ধে কিছু বলব। বাঙলার প্রাচীন শিল্পীরা মহাত্মা চৈতন্তের পরবর্তী সময়ে তার ধর্মের দ্বারা অনুপ্রাণিত ইয়েছিলেন এবং সেইকারণেই তাদের ছবিতে তার প্রচুর স্বাভাস পাওয়া যায়। কিন্তু আধুনিক কালীঘাটের পোটোদের তামসিক চিত্রই বেশী অণকতে দেখা যায়। আমাদের দেশীয় সাধারণের অর্থাৎ এইসকল চিত্রের গ্রাহকদের এবং নিরক্ষর পটুয়াদের ধৰ্ম্মশিক্ষা না থাকাই ও নানাপ্রকার কুপ্রথার অনুরক্ত হয়ে পড়াই এই অবনতির প্রধান কারণ। প্রাচীন পটুয়াদের অণক গৌরাঙ্গলীলা প্রভৃতির ছবি এখনও জীর্ণ পুথির পটার উপর বা পাওয়া স্বায় তা দেখলেই হৃদয় পবিত্র ভক্তিরসে আপ্লুত হয়ে পড়ে। পাটীগুলির বর্ণ-বিন্যাস এবং রেখাসম্পাতের মধ্যেও শিল্পীদের অসাধারণ সংযম ও শিক্ষার পরিচয় পাওয়া ৱায়। আধুনিক পোটােদের অন্ধন দক্ষতা ও তৎপরতার প্রতিদৃষ্ট থাকলেও তার ভিতর শৈথিল্যের ভাবও যথেষ্ট स्रोप्नुछ्रे | অজন্তা, মোগল-শিল্প প্রভৃতি জগৎবিখ্যাত শিল্পের স্বায় অসাধারণ কৃতিত্ব ভারতবর্ষের অন্যান্য অনেক যায়গার তুলনায় বাঙলার প্রাচীনচিত্রেই বেশী দেখা যায়। সমগ্র এসিয়াখণ্ডের মধ্যে জাপানী ও চীনা শিল্পের মধ্যে প্রাচ্যের এই বিশেষত্বটি দেখা যায়। বাঙলার শিল্পের সঙ্গে চীন ওজাপানী শিল্পের এক এক স্থানে একটা বেশ একতা দেখা যায়। বাঙলার শিল্পে অঙ্কন-পদ্ধতির বিশেষ কোনো মুক্তিবদ্ধ নিয়ম নাই বলেও হয়, শিল্প অবলীলাক্রমে শিল্পীর হাতে খেলার মত সহজে সংসাধিত হয়। এমন কি-সময় সময় তার প্রথাগত নিয়মকেও ( traditions) ছাড়িয়ে যেতে দেখা যায়। যারা বাঙলার প্রাচীনচিত্র অধিক পরিমাণে দেখবার সুযোগ পেয়েচেন তার। এটা সহজেই বুৰতে পারবেন। দেশের মূল প্রকৃতিগত বিশেষত্বকে

বাঙলার শিল্প ജാ বজায় রেখে শিল্পী নিজের বিশেষত্বের ২৩৯ ৷ मिश्र या প্রকাশ করবেন তাই যথার্থ শিল্পনামের যোগ্য -এ বিষয়ের অভাবই শিল্পের দৈন্যের লক্ষণ । জাপান আধুনিক । ইউরোপীয় শিক্ষায় বেশী বিধিবদ্ধ নিয়ম পালন করতে গিয়ে তার অমূল্য শিল্প-র বিসর্জন দিতে বসেছিল। স্বৰ্গীয় মহাত্মা ওকাকুর প্রভৃতি শিল্পরসজ ব্যক্তির মিলে এই দেশীয় শিল্পের শক্তির হ্রাস হবার পূৰ্ব্বাহেই সাবধান হবার চেষ্ট করেচেন । আমাদেরও এ বিষয়ে দৃষ্টি রাখা উচিত । কেহ কেহ বলেন আধুনিক বঙ্গদেশে এই ভারতশিল্পের পুনরুখানের যুগে মোগল কাংড়া প্রভৃতির অক্ষকরণে ভারত-শিল্পের ঐসাধন করা উচিত। কিন্তু কেহই বাঙলার নিজের কোনো সম্পদ ছিল কিম্বা আছে সেদিকে দৃষ্টি দেন না। মোগল প্রভৃতি শিল্প বাঙলার শিল্পে তার স্বল্প-সৌন্দর্ঘ্য ও কলানৈপুণ্য দিতে পারে, কিন্তু বাঙলার স্বাভাবিক ভাবপ্রবণতা ও স্নিগ্ধরস দিতে পারে কিনা সন্দেহ। আমাদের উচিত প্রাচ্য-শিল্পসমূহের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা এবং সেই সঙ্গে নিজের দেশের স্বাভাবিকতাকে বজায় রাখা । আশ্চর্য্যের বিষয় ছয়শত বৎসর মুসলমানের রাজত্বেও বাঙলার শিল্পকে মোগলশিল্প অধিকার করে বসতে পারেনি। বৈষ্ণবসাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গে বৈষ্ণৱশিল্প বাঙলায় নিজের প্রভুত্ব বিস্তার করে 5लहिल । রাজপুত, কাংড়া প্রভৃতি ভারতের অপর সকল স্থানের শিল্পের মধ্যে এই মোগল-শিল্পের প্রভাব যথেষ্ট আছে। কিন্তু এ স্থানে একটি কথা স্মরণ রাখা উচিত যে মোগলশিল্প এবং পারস্য-শিল্পের মধ্যে একটি বিশেষ যায়গায় পার্থক্য আছে । মোগল-শিল্প কেবল মুসলমানদের দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত নয়। হিন্মুৱাই মোগলবাদশাহের সভা-শিল্পী ছিল এবং তাদের দ্বারাই প্রবর্তিত এটি একটি নতুন ধরণের শিল্পের স্বষ্টি। মুসলমানরাজ্যের অভূখানের যুগে পারস্যের শিল্প ভারতে যা এসেছিল তা থেকে এখানকার প্রধানত হিন্দুরাই কয়েকটি মুসলমান-শিল্পীর সঙ্গে মিলে তাদের প্রাচীন রীতিটি বজায় রেখে পারস্ত-শিল্পের স্বল্পভাবটি গ্রহণ করে এই অভিনব মোগল-শিল্পের শাখাটির প্রবর্তন করেছিলেন। এখন -