পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૧૧tr খ্ৰীষ্টারে সওঁ অহসারে, ইংলণ্ড বেলজিয়মকে রক্ষা করিতে বাধ্য। এই কথাটির প্রতি বিশেষভাবে পাঠকদিগের মনোযোগ আকর্ষণ করিতেছি; কারণ হালের যুদ্ধের প্রারম্ভে কাইজার প্রভু একেবারে নেকা সাজিয়া বলিয়াছিলেন, যে, বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে অগ্রসর হইলে ইংলও যে কেন যুদ্ধে নামিবেন তাহ তিনি জানিতেন না। নিজের স্বার্থরক্ষা করা ছাড়াও যে আগেকার সন্ধি অনুসারে বেলজিয়মকে রক্ষা করিতে ইংলণ্ড ধৰ্ম্মতঃ বাধা, এ কথা বিসমার্কের মুখেই স্বীকৃত। যাহা হউক বিসমার্কের চতুরতায় সে সময়ে রুষিয়ার সহিত ইংলণ্ডের পূর্ণমিত্রতালাভ ঘটে নাই। বলকান রাজ্যে অষ্ট্রিয়ার ক্ষমতা বাড়াইয়া দিয়। ঐ প্রদেশে কুষিয়ার প্রভাববিস্তারের পথ রুদ্ধ করিয়াও যে-কুটনীতির চক্রে বিসমার্ক রুষসম্রাটকে ভুলাইয়া আপনার দলে রাখিয়াছিলেন, সে কথা বলিতে গেলে পুথি বাড়িয়া যায়। ফ্রান্স তখন ইংলণ্ডের দুইশত বৎসরের প্রাচীনশত্র হইলেও ইংলণ্ডের সহিত তাহার রাজনৈতিক মিত্রত করিবার সুবিধা হইয়াছিল। ইতিহাসে একথা তেমন অঙ্গীকৃত নহে, যে,১৮৭০ খ্ৰীষ্টাব্দের যুদ্ধের সময়ে ফ্রান্সকে রসদাদি যোগাইয়। ইংলণ্ড কিঞ্চিং রাজনৈতিক নিয়ম লঙ্ঘন করিয়৷ জৰ্ম্মানির বিষচক্ষে পড়িয়াছিলেন। মৈত্রীস্থাপনের সময় ইংলণ্ড ফ্রান্সকে বুঝাইয়া দিয়াছিলেন, যে, নিউফাউণ্ডল্যাণ্ডের মাছ কিংবা শ্যামরাজ্যের পণ্যের জন্য বিবাদ করা মূখতা। ফ্রান্স ইলেণ্ডের মিত্র হইলেন, বিধ্বস্তরাজ্য স্বসজ্জ করিয়া পাকা রকমের শাসননীতি স্থাপন করিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে কি উপায়ে আলসেটিয়ান এবং লোরেইনারদিগকে জন্মানউৎপীড়ন হইতে রক্ষা করিতে পারেন তাহাও ভাবিতে ज्ञांठिोंtज़न। ভূতপূৰ্ব্ব কাইজারের রাজত্বকালের মধ্যে কিংবা বিদ মার্ক জীবিত থাকা পৰ্য্যস্ত রুযিয়ার সম্রাট জৰ্ম্মানির মিত্রতার মোহজাল কাটাইতে পারেনু নাই। জৰ্ম্মানি অষ্টিয়াকে মিত্র করিয়া বলকানদিগকে পদদলিত করিবার চেষ্টায় ছিল এবং সুযোগ লাভ করিয়া আড়িয়াটিককুলে বন্দর খুলিবার উদযোগ করিতেছিল এবং রুষিয়ার পথ রোধ করিয়া ক্ষমতার শিখরে উঠতে চেষ্টা করিতেছিল, তবুও রুযিয় কিছু করে নাই। এখনকার বর্তমান কাইজার যখন দেখিলেন অথবা প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ ভাবিলেন যে রুষিয় তাহার বিরুদ্ধে শক্ৰত করিতে । পরিবে না এবং তাহার রাজ্যের পশ্চিমে ইউরোপের কোন অংশে আসিয়া সামরিক বল দেখাইবার তাহার কোন ক্ষমতা নাই, তখন তিনি রুষসম্রাটকে তুচ্ছ করিতে লাগিলেন । বুদ্ধিমান ব্যক্তি তৃণের সাহায্যও উপেক্ষা করে ন৷ কিন্তু এখনকার মহাসমরের অশান্তি এবং পাপের প্রবর্তৃক কাইজার অতিদপে রুষকে শক্ৰ করিয়া তুলিলেন । জৰ্ম্মানি বিপুল প্রভূত লাভ করিলে রুষিয়া এবং ফ্রান্সের যে অকল্যাণ হয় ফ্রান্স তাহ সহজেই রুযিয়াকে বুঝাইতে পারিয়াছিলেন। এ সম্বন্ধে রাজনীতির কথা আরও অনেক আছে; সহজে এই কথা বলিলেই যথেষ্ট হইবে, যে, ১৮৯০–১৮৯৪ পৰ্য্যন্ত জৰ্ম্মানিতে নূতন মন্ত্রণ চলিল এবং সেই সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় রাষ্ট্রবিপ্লব রহিত করিবার জন্য ইংলণ্ড ফ্রান্স এবং রুষিয় একত্রে মৈত্রী স্থাপন করিলেন। এই সময়ে আল সেটিয়ান এবং লোরেইনারগণ প্রকাখ্যভাবে আন্তর্জাতিক সভায় উপস্থিত হইয়া আপনাদের স্বাধীনতার জন্য যে-সকল প্রস্তাব উথাপন করিলেন, তাহাতে কাইজার স্বায়ত্তশাসনের কোন ব্যবস্থা না করিয়া বরং জাতি পিষিবার নীতি উগ্রতর করিলেন। একদিকের কথা এই পর্য্যন্ত বলিয়াই অন্যদিকের কয়েকটি কথা বলিতেছি। তাহার পর সকলদিকের কথা মিলাইয়া সমরের উদযোগ পর্কের কথা বুঝিতে সুবিধা হইবে । বাণিজ্য এবং উপনিবেশ ঘটত কথা। এ যুগে বিসমার্কের মত পাকা রাজমন্ত্রী দেখা যায় না ; অনেকগুলি প্রদেশ যখন একসঙ্গে জমাট বাধিয়া নূতন জৰ্ম্মনরাজ্য দৃঢ় ভিত্তিতে স্থাপিত হইল, এবং ফ্রাঙ্গকে পরাজিত করিবার পর যখন নবজার্মানি সামরিকগৌরবে ইউরোপে স্বপ্রতিষ্ঠিত হইল, তখন দেশের ধনসম্পদ বাড়াইবার দিকে বিবিধ উদযোগ চলিতে লাগিল। জৰ্ম্মানির বণিকসম্প্রদায় জিদ ধরিলেন যে, তাহার। ইংরেজের মত বহিৰ্ব্বাণিজ্যে বড় হইবেন, এবং নূতন নূতন উপনিবেশ স্থাপন করিয়া দেশের প্রসার বাড়াইবেন । সুচতুর বিসমার্ক দেখিলেন জৰ্ম্মানির লোকবল এবং অস্ত্রবল থাকিলেও নৌবল নাই। বিদেশবাণিজ্য বাড়াইতে গেলে সহজে সাগরপথে যাতায়াতে সুবিধ চাই, কিন্তু দেশের ভৌগোলিক [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড ২য় সংখ্যা -- স্থিতি, উপযুক্ত এবং যথেষ্ট বন্দর লাভের প্রতিকূলে। তাহার উপর আবার বাণিজ্য রক্ষা করিতে গেলে, এবং উপনিবেশের উপযোগী স্থান লাভ করিতে গেলে, নৌসমরের উপযোগী যথেষ্ট যুদ্ধজাহাজ চাই ; কিন্তু জৰ্ম্মানির তখন এ-সকল কিছুই ছিল না। উপযুক্ত-সংখ্যক জাহাজ গড়িতে হইবে, বলটিকসাগরপথে জাহাজ যাতায়াতের জন্য প্রশস্ত করিয়া কীল-কেনাল কাটিতে হইবে, এবং আরও আনুসঙ্গিক অন্য উদযোগ করিতে হইবে ; তবেই একাৰ্য্য সিদ্ধ হইতে পারে। বিসমার্ক এ-সকল কথা দেশের লোককে বুঝাইলেন, এবং সিদ্ধিলাভের জন্য সকলপ্রকার উযোগই করিতে লাগিলেন, কিন্তু বণিকদিগের পক্ষে অধিকদিন চুপ করিয়া থাক। অসম্ভব হইয়। উঠিল । বিস্মর্কের বিচারে, বাণিজ্য এবং উপনিবেশের দিকে দৃষ্ট না দিয়া, কৃষি এবং শিল্পের উন্নতি করাই প্রশস্ততর ছিল। এত বড় রাজশাস্ত্রদক্ষ ব্যক্তির এই নীতির কথা আমাদের ভাল করিয়৷ বিবেচনা করা উচিত। আমরা চকুচকে বিদেশবাণিজ্যের দিকে তাকাইয়া, অৰ্ব্বাচীনযুগে একটি প্রবাদ সৃষ্টি করিয়াছি, যে, লক্ষ্মী বাণিজ্যেই প্রতিষ্ঠিত। হয়েন, এবং কৃষিকৰ্ম্মের গৌরব বাণিজ্যের অর্ধেক । এ দেশের নৈসর্গিক অবস্থা দেখিয়া কি বলিতে পারি না, যে, কৃষকের ক্ষেত্রই চঞ্চলার যথার্থ অচল আসন ? থাকুক সে কথা, এখন জৰ্ম্মানির কথাই বলি । বিসমার্কের নীতি অনুসরণ করিয়া কৃষি এবং শিল্পজাত সামগ্ৰী অতিরিক্ত বাড়াইয়৷ কেলিবার পর, বিদেশের হাটে, উছার বিক্রয়ের সুবিধার জন্য, দেশের লোক ব্যগ্র হইয়া উঠিল। এই সময় কৰ্ম্মহীন এবং কৰ্ম্মপ্রার্থী লোকসংখ্যাও খুব বাড়িয়াছিল। ১৮৭২–১৮৮৩ পর্য্যন্ত বিসমার্ক দেশের লোককে চাপিয়া রাখিয়াছিলেন ; কিন্তু আর পারিলেন না। এই সময়ে জাহাজাদিরও কিঞ্চিৎ উন্নতি হইয়াছিল ; কাজেই অবস্থার পরিবর্তনে রাজমন্ত্রী বাণিজ্য এবং উপনিবেশবিষয়ে সতর্কভাবে দেশের লোককে সাহায্য করিতে লাগিলেন । জৰ্ম্মানির বহিৰ্ব্বাণিজ্য এবং উপনিবেশস্থাপন আরন্ধ হইবার পূর্বের কয়েকটি ঘটনা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ক্ষধিয়া যাহাতে আপনাদের শ্লাব জাতির লোকের সহিত ס\ל ইউরোপীয় মহাসম্বর - ヘヘヘヘヘペシー ఎ*న .-- -- মিলিবার ছলে বলকান রাজ্যের দিকে অগ্রসর না হয় অথচ জৰ্ম্মানির সহিত বন্ধুত্ব রাখে তাহার জন্ত বিসমার্ক বাহাদুর তাহাকে গুপ্তপরামর্শ দিয়া তুর্কীর কনস্তান্তিনোপল অধিকারের দিকে উৎসাহিত করিলেন। আড়াই পাক ঘুরাইয়া বেশ ঘোড়ার চালের বন্দোবস্ত করিয়া ছিলেন। বিসমার্ক জানিতেন ইংরেজ তাহাকে একাৰ্য্য করিতে দিবেন না, এবং উহা লইয়া লাভের মধ্যে রুষে ও ইংলণ্ডে মৈত্রীর ব্যাঘাত ঘটবে। বলা বাহুল্য যে ১৮৭৬ এবং ১৮৭৭ খ্ৰীষ্টাব্দের ঘটনায় বিসমার্কের মন্ত্রণাই ফলবর্তী হইয়াছিল। ইহার পরে আবার রুষকে কাবুল এবং ভারত দেখাইয়া কৌটিল্য মহাশয় থাস দাবার চাল চালিয়াছিলেন । রুষ, মব দখল করিবার পর ইংলণ্ডে যে রুষবিদ্বেষ জাগিয়া উঠিল তখনকার একজন ইংরেজ মন্ত্রী তাহাকে nervousness শব্দের সাদৃশ্বে mnervousness —নাম দিয়াছিলেন। মধ্য-এসিয়ার দিকে লোলুপদৃষ্টি পড়ায়, পোলাও, ও বলকানের দিকে রুষিয়ার দৃষ্টি পড়িল না ; কাজেই সুযোগ পাইয়ু মন্ত্রীপ্রবর, অষ্টিয়াকে নবিবাজার পর্য্যন্ত প্রভাব বিস্তার করিতে দিলেন। " ইংরেজিতে যাহাকে “বিড়ালের থাবা" বলে, জৰ্ম্মানি অষ্টিয়াকে তাহাই করিয়া আসিতেছে। বালা অনুবাদে ইহাকে পরের মাথায় কাটাল-ভাঙ্গা বলিতে পারি। উত্তর আফ্রিকায় জৰ্ম্মানির উপনিবেশের প্রয়োজন ছিল না ; ভারতরাজ্যের স্বার্থের এবং বাণিজ্যের সুবিধার জন্য ইংরেজ অনায়াসেই মিসরের জন্য লোলুপ হইবে জানিয়া, বিসমার্ক ইংলণ্ডকে মিসর লাভে উদযোগী করাইয়াছিলেন। ইহাতে একদিকে স্বলতান আবদুল হামিদ ইংরেজের শক্ৰ হইলেন, অন্যদিকে ফরাসিও ক্ষুদ্ধ এবং ক্রুদ্ধ হইয়া রছিলেন। এসকল যে এক বিস্মার্কের চাতুরীতে ঘটিয়াছিল, তাহ ইউরোপের ইতিহাসে স্পষ্টাক্ষরে লিখিত আছে। ইংরেজকে মিসর দেখাইয়া দিয়,বিসমার্ক ফ্রান্সকে টিউনিস্ দেখাইয়া দিলেন, এবং উহা লাভের উপায়ও দেখাইয়া দিলেন। ঐ স্থানের প্রতি ইটালীর দৃষ্টি ছিল ; কিন্তু মিসর লাভের পর ফ্রান্সকে একটু ঠাণ্ডা করিবার জন্য ইংরেজকে ফ্রান্সের টিউনিস্ লাভে সম্মতি দিতে হইয়াছিল বলিয়া, ইটালী কোন কথা কহিতে সাহস পাইল