পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| ७४२ প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ ১ম খণ্ড । eyb আমেরিকায় আচার্য্য জগদীশচন্দ্র -م_-م_-_-_-_r-sي۔ ২য় সংখ্যা ] -z-z-z-z-z ۔م۔م۔می ہمی۔۔-- - --SumitaBot (আলাপ) ০৮:১৫, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি) সন্তানগণের নিকট এত শ্রদ্ধ এত সমাদর লাভ করিয়া ছিলেন। আমেরিকার যেখানেই তিনি গিয়াছেন সেখানেই তথাকার “হিন্দুস্থান-সমিতি” তাহার সম্বৰ্দ্ধনা করিয়াছে, র্তাহার উপদেশ ও পরামর্শ প্রার্থনা করিয়াছে। আচাৰ্য্য জগদীশচন্দ্রও তাহাদিগকে বারম্বার বিশেষ করিয়া বলিয়াছেন—“জীবনের একটা নিদিষ্ট আদর্শ ঠিক করিয়া যতদিন না সে অাদর্শ বাস্তবে ও সত্যে পরিণত হয় ততদিন ক্রমাগত অবিরাম চেষ্টা করিতে থাক। ইচ্ছাশক্তি থাকিলে কিছুই অসম্ভব বা অসাধ্য নয়। দুঃখক্লেশ স্বীকার না করিয়া কখনো কোন বড় কাজ হয় নাই। স্বতরাং যদি বড় কিছু করিতে চাও তবে দুঃখকষ্ট নিৰ্য্যাতন ও লাঞ্ছন। সমস্তই নীরবে সহ করিতে হইবে। কিন্তু মনে রাধিও ঐ দুঃখ ও নিৰ্য্যাতনের মধ্য দিয়া কৃতকাৰ্য্যতা লাভ করাই তোমাদের গৌরব-অধিকার। বড় হইবার সম্ভাবনা প্রত্যেকের মধ্যেই সমানভাবে বর্তমান। প্রতিভা ? স্বগৃঙ্খলার সহিত কঠোর পরিশ্রমে কাজ করিয়া যাওয়া ভিন্ন প্রতিভা আর কিছুই নহে। যদি ইচ্ছা কর তবে তুমিও প্রতিভাশালী হইতে পার।" বস্থ মহাশয় যখন কথা বলেন তখন খুব ধীরভাবে বলেন। কথায় জোর দিবার জন্য তিনি শূন্যে হাতও ছোড়েন না কিম্বা টেবিলও চাপড়ান না। অথচ যেন কি এক বিচিত্র উপায়ে তাহার আন্তরিকতা সমস্ত কথাবাৰ্ত্তার মধ্যে ফুটিয়া উঠে। ভারতীয় ছাত্রদিগকে সম্বোধন করিয়া তিনি বলেন— “স্বদেশের কোন-না-কোন একটা কাজে তোমরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ কর। শুধু নিজে মাহুষ হইয়াই তৃপ্ত হইও না, অপরকেও মানুষ হইয়া উঠিতে সাহায্য কর। জীবনটা নিতান্তই ছোট,—কাজেই বৃথা সময় নষ্ট করিবার অবকাশ বা অধিকার কাহারো নাই। মাধুর্য্যে, আলোকে ও কৰ্ম্মনিষ্ঠতায় এই জীবনকে পূর্ণ ও সার্থক করিয়া তোলাই ८ङांभां८मब्र श्रां★ ट्छेक ।” আচাৰ্য্য জগদীশচন্দ্র ধনী হইবার আকাঙ্ক্ষা করেন না। র্তাহার মতে অর্থসঞ্চয় বা ব্যবসাবাণিজ্যে কৃতকাৰ্য্যতাই মাহুষের শক্তির সত্য বা প্রকৃত পরিচয় নয়। পৃথিবীতে টাক জিনিসটাকেই তিনি পরম বস্ব বলিয়া মনে করেন না। খেতাবপদবীর প্রতিও তাহার কোন আকর্ষণ নাই । তিনি বলেন—“বিজ্ঞানের খাতিরেই বিজ্ঞানচর্চ করা উচিত, কোনরূপ পুরস্কারের আশায় নয়। কোন একটা বড় কাজ করিয়াই এ কথা ভাবিও না যে সমস্ত পৃথিবীর লোক আমনি একেবারে সেটিকে স্বীকার করিয়া লইয়া আনন্দোল্লাসে মত্ত হইয়া উঠিবে এবং চারিদিকে তোমার জয়জয়কার পড়িয়া যাইবে।” ভারতের একতা ও সমস্ত ভারতবাসীর এক মহাজাতিতে পরিণত হইবার কথা কহিবার সময় জগদীশচন্দ্র যেন তাহার সমস্ত শক্তি, মনীষা, ও প্রাণ তাহাতে ঢালিয়া দেন। এ সম্বন্ধে তাহার বক্তব্য এই—“সৰ্ব্ব প্রথমে তোমার সাধনার বস্তু হউক খাটি ভারতসন্তান হওয়া। তাহার পর সঙ্কীর্ণ প্রাদেশিকতাকে ছাড়াইয়া উঠিয়া ভারতবর্ষের একত্বকে ধারণা করিতে শিক্ষা কর। ভারতে এক প্রদেশ আর-এক প্রদেশ হইতে শ্রেষ্ঠ, এক প্রদেশবাসী আর-এক প্রদেশবাসী হইতে বেশী বুদ্ধিমান, এরূপ মত ও ধারণা পোষণ নিতান্ত নিৰ্ব্বদ্ধিতার পরিচায়ক। নবগঠিত ভারতে পাঞ্জাবী, মারাঠা কিম্বা বাঙ্গালী থাকিবে না-থাকিবে কেবল ভারতবাসী ।” একদিন কোন ধনী বিকানীরবাসীর এক পুত্র আচাৰ্য্য বস্থ মহাশয়ের Autograph বা “হাতের লেখার" জন্য তাহার হোটেলে দেখা করিতে যান। জগদীশচন্দ্র তাহাকে জানাইলেন যে তিনি সচরাচর তাহার “হাতের লেখা" কাহাকেও দেন না এবং দিলেও তার মূল্য খুব বেশী লইয় থাকেন। এই কথা বলিয়। বণিক-পুত্রটিকে জিজ্ঞাসা করিলেন “আচ্ছ, তুমি আমায় কত দিবে ?" উত্তর আসিল “আমি ভারতের সেবায় আমার জীবন দিব।" যুবকের এই উত্তর শুনিয়া জগদীশচন্দ্র কি করেন তাহা দেখিবার জন্য সকলে তাহার দিকে ব্যগ্র দৃষ্টিতে তাকাইলেন। আচাৰ্য্যবরের চক্ষু আনন্দে উজ্জল হইয়া উঠিল ; তিনি বিকানীর যুবককে সম্বোধন করিয়া তৎক্ষণাৎ বলিয়া উঠিলেন—“এই নাও আমার হাতের লেখা।" আমাদের দেশের যুবকদের আমেরিকায় শিক্ষালাভ সম্বন্ধে তাহার মত জিজ্ঞাসা করাতে জগদীশচন্দ্র বলেন“আমার মতে বি এস্ সী পাশ না করিয়া আমাদের দেশের কোন ছাত্রেরই এ দেশে শিক্ষালাভের জন্য আসা উচিত নয়। ছাত্রদের চরিত্র ও ক্ষমতার দিকে দৃষ্টিপাত ন৷ করিয়া শুধু কেবল দলে দলে জাহাজ বোঝাই করিয়া তাহদিগকে এ দেশে পাঠানো কোন মতেই সমীচীন নয়। সংখ্যায় বেশী ছাত্র না পাঠাইয়। কয়েকজন বাছা বাছা ভাল ছাত্র পাঠানো বাঞ্ছনীয় ” আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় ভাল কি ইংল্যাণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয় ভাল, বস্ব মহাশয়কে এই প্রশ্ন করাতে তিনি বলেন "ইংরেজ ও মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় দুই-ই আমার ভাল লাগে। উভয়েরই সুবিধা ও অস্ববিধা দু-ই আছে। তবে আমার মনে হয় আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অর্থবল বেণী এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগারগুলির বন্দোবস্ত আরো ভাল। মার্কিন যুক্তরাজ্যে অনেক মেধাবী অধ্যাপক আছেন কিন্তু তাহাদের বড় বেশী থাটানো হয় বলিয়া মনে হয় ;– অন্তত: তাহারা তাহাদের ছাত্রদের অপেক্ষা বেশী পরিশ্রম করেন। আমেরিক গণতান্ত্রিক দেশ, কাজেই সাধারণ লোকের পক্ষে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষান্ময়গুলিতে প্রবেশলাভ ইংল্যাণ্ডের অপেক্ষা অধিক সহজসাধ্য। কিন্তু এই নৃতন দেশের পশ্চাতে শুচির কালের সঞ্চিত ইতিহাস বা “ট্রাডিসন নাই।" আচাৰ্য্য জগদীশচন্দ্রের সহিত তাহার পত্নী ও প্রাইভেট সেক্রেটারী আমেরিকায় আসিয়াছেন। তাহার পত্নী অতি রমণীয়া ও ধীরস্বভাব মহিলা। যে-সমুদ্রয় ভারতবাসী বিদেশে বেড়াইতে আসেন তাহদের মধ্যে অনেকেই যেমন বিদেশী পরিচ্ছদ পরিধান করেন বস্বজায়া তেমন করেন নাই। তিনি তাহার জাতীয় পরিচ্ছদ বজায় রাপিয়াছিলেন । গোলাপী রংয়ের জ্যাকেটের উপর র্তাহার স্তরবিন্যস্ত জরীপাড় সাড়ী বড়ই স্বত্র ও শোভন দেখায়। র্তাহার উন্নত ললাট স্বন্দর ঘন কেশরাশিতে মুণ্ডিত, র্তাহার চক্ষুদুটি এক অপূৰ্ব্ব আলোকে পূর্ণ। বস্তুজায়ার জন্ম ও শিক্ষা যদিও ভারতবর্ষে তথাপি পাশ্চাত্যসমাজে তিনি বেশ স্বচ্ছন্দভাবে চলাফেরা করিয়৷ থাকেন। আচাৰ্য্য-পত্নীর কথা কহিবার শক্তি বড়ই চমৎকার এবং উহার কণ্ঠস্বরটিও অতি মনোরম। যুরোপ আমেরি কার ভিতরকার জীবনটির সহিত তাহার পরিচয় থাকায় যখনই তিনি সে সম্বন্ধে কোন কথা বলেন তখনই তাহা শুনিবার জন্য বড়ই আগ্রহ হয় । পাশ্চত্যসভ্যতার বাহিরের জাকজমক বহুজায়ার নয়ন ধধিয়া দেয় নাই। তাহার মতে পাশ্চত্যদেশবাসীরা অর্থের পূজায়, ভোগের লালসায়, খেতাবের আকাঙ্ক্ষায় উন্মত্তপ্রায় ;—সামাজিক দ্বন্দ্রসংঘর্ষে নিরস্তর ব্যতিব্যস্ত । যেমন পূৰ্ব্বদেশে তেমনি পশ্চিমদেশে জাতিভেদ। পশ্চিমের জাতিভেদ অর্থের উপর, আর পূর্বের জাতিভেদ জন্মের উপর প্রতিষ্ঠিত—এই মাত্র যা তফাৎ।-পশ্চিম থে-পথে চলিয়াছে সে-পথে বেশী দিন আর সে চলিতে পারবে না। ছুদিন আগেই হৌক দুদিন পরেই হোক তাহাকে ফিরিতেই হইবে। তখন আর-একবার তাহাকে পূৰ্ব্ব-জগতের নিকট আসিয় দাড়াইতে হইবে । --- শ্ৰীমতী বস্বজায়া ভারতবর্ষকে ভালবাসেন বটে কিন্তু তাই বলিয়া অন্য • দেশকে বিদ্বেষের চক্ষে দেখেন না। র্তাহার মনে বিদ্বেষের লেশও নাই। এমন কি যে-সমুদয় সঙ্কীর্ণমনা ভারতপ্রত্যাগত খ্ৰীষ্টীয় মিশনারী ভারতের মিথ্যা কুৎসা রটনা করিয়া বেড়ান তাহদের প্রতি পৰ্য্যন্ত র্তাহার কোন বিদ্বেষভাব নাই। তিনি তাহদের কৃপানেজে দেখিয়৷ থাকেন এই পৰ্য্যন্ত । ভারতনারীর শিক্ষা সম্বন্ধে আলোচনা বস্থজায়ার বড়ই মনোমত । ঐ বিষয়টি তাহার বিশেষ প্রিয়। গুজব এই তিনি নাকি আমাদের দেশে প্রচলনের জন্য আমেরিকা ও ইংল্যাণ্ডের স্ত্রীশিক্ষাবিধি বিশেষভাবে অধ্যয়ন ও আলোচনা করিতেছেন। ইতিমধ্যেই তিনি তাহার বিদ্যালয়ের কাৰ্য্যে সাহায্যের জন্য উইসকন্সিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক মার্কিন মহিলাকে নিযুক্ত করিয়াছেন। একদিন মধ্যাহ-আহারকালে আলোচনাপ্রসঙ্গে যুরোপীয় ও মার্কিন মেয়েদের কথা উঠিল। বহুজায়ার মতে যুরোপের মেয়েদের অপেক্ষ আমেরিকার মেয়েরা বেশ স্বাধীনচেতা, উদারমনা ও চিত্তানন্দদামিনী। একজন তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন—“আপনি কি যুরোপীয় ও ভারতবর্ষীয়দের মধ্যে বিবাহ হওয়া বাঞ্ছনীয় মনে করেন ?” বিদ্যুতের মত উত্তর আসিল—“কখনই নয় । বিদেশীরা