পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"לאס --~~ ~~ হয় না। নূতন প্রকাশিত “আল এস্লাম" নামক বাঙ্গালী মুসলমানদের মাসিকপত্রের বৈশাখ সংখ্যায় "বঙ্গসাহিত্যে মুসলমান রমণীর স্থান" শীর্ষক প্রবন্ধে একস্থানে বলা হইয়াছে—“পৃথিবীর আর কোথাও বিজেতার রমণী বিজিতের লেখনীতে এরূপ বীভৎস নারকীয় চিত্রে চিত্রিত হইয়াছেন কিনা, সন্দেহের বিষয়।" যে দৃষ্টান্তটিকে উদেশ করিয়া এই বাক্যটি লেখা হইয়াছে, তাহাতে বিজেত৷ মুসলমান এবং বিজিত হিন্দু। এই সকল বৃহং ও ক্ষুদ্র কারণে বিজিত ও বিজেত। সম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলা আবশ্বক মনে হইতেছে। ভারতবর্ষের সমুদয় অধিবাসীর অবস্থা এখন এক ; ইংরেজ প্রধান, অন্যেরা অপ্রধান। অপ্রধানদের মধ্যে যদি কখনও কাহারও কিছু কৃত্রিম প্রাধান্য হয়, তাহা ইংরেজদের প্রাধান্যরক্ষার সহায়তা করিবে মাত্র। পৃথিবীর যত দেশ ও জাতির কথা এখন মনে হইতেছে, তাহীদের মধ্যে সকলেই কথন না কথন বিজেতা ব৷ বিজিত হইয়াছিলেন। অবশ্ব ইহাতেও তারতম্য আছে। কিন্তু বিজিত হওয়া বা বিজেতা হওয়া একটা অসাধারণ ব্যাপার নয়। যে একবার বিজিত হয়, সে চিরকাল ছোট থাকে না ; যে বিজয়ী হয়, সেও চিরকাল বড় থাকে না। যদি দুজন কুস্তিগীরের মধ্যে মল্লযুদ্ধ হইয়া একজন আরএকজনকে হারাইয়া দেয়, তাহা হইলে জেতা পালোয়ানের বংশধরেরা, পুরুষানুক্রমে, বিজিত কুস্তিগীরের বংশধরদিগকে হীন জ্ঞান করিবার অধিকার লাভ করে না। কারণ বাস্তবিক পূৰ্ব্বোক্তেরা বলবীৰ্য্যে বরাবর শেষোক্তদিগের চেয়ে শ্ৰেষ্ঠ থাকে না। আমার অতিবৃদ্ধপ্রপিতামহের অতিবৃদ্ধপ্রপিতামহ হয় ত দুৰ্ব্বল ছিলেন, হয় ত তিনি আত্মরক্ষা ও সম্পত্তিরক্ষায় অসমর্থ ছিলেন ; কিন্তু তজজ্য তাহার সমুদয় বংশধরদিগকে, আমাকে ও আমার বংশধরদিগকে, মহুষোচিত গুণে চিরকাল বঞ্চিত থাকিতে হইবে, বিধাতার এমন কোন বিধান নাই। শিশু যখন জন্মে তখন সে ললাটে বিজিত বা বিজেতার ছাপ লইয়া জন্মে না, সে নূতন মানুষ ; পরিবার, সমাজ, সংসর্গ, শিক্ষা তাহাকে বহুপরিমাণে গড়ে, এবং বহুপরিমাণে পুরুষকার দ্বারা সে নিজেও নিজেকে গড়ে। আমার দেশ, আমার জাতি, প্রত্যহ নূতন প্রবাসী-আষাঢ়, ১৩২২ : MMJMJMMM MMMMMMMS [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড করিয়া আমার চরিত্রে, আচরণে, জীবনে, বিজিত বা জয়ী হইতেছে, আমি এইরূপ মনে করি। আমি পূৰ্ব্বপুরুষের কলঙ্কের বোঝা-ই বা কেন বহন করিব, র্তাহীদের গৌরব ধার করিয়াই বা কেন নিজের যোগ্যতার অভাবকে ঢাকা দিবার চেষ্টা করিব ? বিধাতা যখন আমাকে স্বতন্ত্র শারীরিক ও মানসিক শক্তি দিয়া সংসারে পাঠাইয়াছেন, পূৰ্ব্ব পুরুষদের একটি প্রতিমূর্তি মাত্র গড়িয়া পাঠান নাই, তখন আমি তাহাদের কাহারও দোষের বা গুণের জন্য হীন বা গৌরবান্বিত হইতে চাই না। তবে যে পূৰ্ব্বপুরুষদের কীৰ্বির কথা মধ্যে মধ্যে বলি, তাহা ইহাই দেখাইবার জন্য যে আমাদের বংশে বা রক্তে অযোগ্যতাই মিশিয়া নাই, যোগ্যতাও আছে, বহুপূৰ্ব্বে এদেশে মানুষের মত মামুন জন্মিয়াছিল, অপেক্ষাকৃত আধুনিক সময়েও জন্সিয়াছে, সুতরাং এখনও জন্মিতে পারে। বাস্তবিকও জন্মিতেছে। বিজেতারা বিজিতদিগের চেয়ে জয়পরাজয়ের সময়েও সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠ থাকে না । রোমানরা যখন গ্রীস জয় করে, তখন গ্রীকরা রোমানদের চেয়ে নানা বিদ্যায় শ্রেষ্ঠ ছিল। আবার যখন গথ প্রভৃতি জাতি রোম জয় করিল, তখন তাহারা জ্ঞানে ও সভ্যতায় রোমানদের চেয়ে নিকৃষ্ট ছিল। রোমানরা গ্রীকদিগের, এবং গথ প্রভৃতি জাতি রোমানদিগের শিষ্যত্ব স্বীকার করিয়াছিল। ইংলও আয়লও জয় করিয়াছিল। কিন্তু প্রাচীন আইরিশরা প্রাচীন ইংরেজদের চেয়ে জ্ঞানী ও সভ্য ছিল। মুসলমানদিগের ভারত আক্র মণের সময়ে হিন্দুরা কিসে শ্রেষ্ঠ ছিল, মুসলমানেরাই বা কিসে শ্রেষ্ঠ ছিল, তাহ ঐতিহাসিকেরা বলিয়া দিতে পারেন । বিজেতার সাধারণতঃ পরদেশ আক্রমণ কি জন্য করেন, তাহ ইতিহাস পাঠকদের অবিদিত নাই। বিজিত দের উপকার করিবার জন্য, তাহাদিগকে মানুষ করিবার জন্য, তাহাদিগকে সভ্য করিবার জন্য, তাহদের মোক্ষ সাধনের জন্য, বিজেতারা তাহদের দেশ অধিকার করিয়া ছেন, কখনও কখনও এরূপ বলেন বটে। কালক্রমে বিজেতাদের দ্বারা সাক্ষাৎ ও পরোক্ষ ভাবে বিজিতদের কিছু উপকারও অনেক স্থলে হয়। কিন্তু পরদেশ বিজয়ের মূখ্য উদেখা যে পরের ধনে ঐশ্বৰ্য্যশালী হওয়া ও পরের | তয় সংখ্যা] ാ উপর প্রভূত্ব করা, ইহা অস্বীকার করা যায় না। পৃথিবীর সব জাতিই কথন-না-কখন এই উদেশ্ব দ্বারা চালিত হইয়াছে। কিন্তু তাহা হইলেও ইহাকে ধৰ্ম্মনীতির দিক দিয়া একটা শ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্য বলা যায় না। সুতরাং বিজেতা হওয়া মানুষের আধ্যাত্মিক শ্ৰেষ্ঠতার পরিচায়ক ইহাও বলা যায় না। বিজেতা হওয়া শক্তিশালিতার পরিচায়ক বটে। কিন্তু গায়ে পড়িয়৷ বিদেশ আক্রমণ ও জয় শক্তির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যবহার নহে । * অনেকের.এইরূপ ধারণ আছে, যে, মুসলমানেরা তরবারির সাহাধ্যে নিজের ধৰ্ম্ম প্রচার করিতেন ; অর্থাৎ তাহা দের বিদেশজয়ের একটি উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। যদি এই ধারণ সত্য হয়, তাহা হইলে, এই প্রকারে ধৰ্ম্মপ্রচারের প্রণালী ভাল বা মন্দ যাহাই হউক, কোন কোন মুসলমান বিজেতার উদেশ্ব ভাল ছিল বলা যাইতে পারে। কিন্তু মুসলমানের নিজেই বলিতেছেন যে তাহার এরূপ উপায়ে ধৰ্ম্ম প্রচার করেন নাই ; যথা বৈশাখ মাসের আল-এস্লামের এস্‌লাম-প্রচার নামক প্রবন্ধে— একদল লোকের ধারণা, এস্লম ধৰ্ম্ম প্রধানতঃ তরবারির সাহায্যেই প্রচারিত হইয়াছে। মুসলমানগণ এক হস্তে কোরআন ও অপর হস্তে কৃপাণ ধারণ করিয়াই ধৰ্ম্ম প্রচারে অগ্রসর হইয়াছিলেন । এস্লামের পরম হিতৈষী ও মুসলমানগণের চিরস্থস্থল খৃষ্টান পাস্ত্রী সাহেবান, এ সম্বন্ধে উহাদের মিশন ফণ্ডের অনায়াসলন্ধ কাগজ কলমের যথেষ্ট সদ্ব্যবহার করিয়া গিয়াছেন। তাহদের তালে তাল দিয়া ও সেই স্বরে তুর মিলাইয় আমাদের প্রতিবেশী হিন্দু লেখকগণও আপনাদের স্বপক্ষ লেখনীপ্রথম গঙ্কের রচনাচতুৰ্য্যের অন্তরালে, পদ্মের উদ্দীপনাময় শঙ্কারের আড়ালে, নভেল নাটকের ভাষার সৌন্দর্য ও রসাল ভাবমাধুর্ঘ্যের অন্তর্ভাগে, ইতিহাসের ঘটনাপ্রসঙ্গে ও বর্ণন-বিস্তাসে, এসলাম প্রচারের এই অদ্ভূত কল্পনাকাহিনী অতি হকৌশলে লিপিবদ্ধ করিয়া দিয়াছেন। এই বিদ্বেষমূলক ও ভিত্তিহীন কল্পিত কাহিনীর প্রচারবাহুল্যের ফলে, খৃষ্টান মুসলমান ও হিন্দু মুসলমানের মধ্যে অষপ হিংস বিদ্বেষের সৃষ্টি হইয়াছে, সকলের একান্ত বাঞ্ছনীয় একতা ও সম্প্রীতি স্থাপনের পক্ষে মহা অস্তুরায় উপস্থিত হইয়ছে। এরূপ অকল্যাণকর ক্রটির জঙ্গ যে খৃষ্ঠান পাঞ্জ ও হিন্দু লেখকগণ সম্পূর্ণরূপে দায়ী, তাহ স্বলাই বাহুল্য। প্রকৃত প্রস্তাবে উপরোক্ত ধারণ যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ওঁ ঐতিহাসিক প্রমাণশূন্ত, তাই অতি সহজেই প্রতীয়মান হইবে। অতএব, মুসলমানদিগের বিদেশ আক্রমণের প্রধান বা অন্যতম উদেখা ছিল ধৰ্ম্ম প্রচার, ইহা আমরা বিশেষ প্রমাণ নাপাইলে সত্য বলিয়া মনে করিতে পারি না। কতকগুলি গুণে বিজেতারা বিজিতদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ मा इ३८ल छग्र%त्राञ्जग्न इ३८उद्दे भा८न्न मा । सूक्षरकोणत्र, বিবিধ প্রসঙ্গ-বিজিত ও বিজেতা ৩২৯ ഹാ উংকৃষ্ট অস্ত্ৰ নিৰ্ম্মাণ, সাহস, দৈহিক বল ও কষ্টসহিষ্ণুতা, নেতৃত্ব, ঐক্য, নেতার আনুগত্য, স্বদেশ স্বজাতি বা স্বদলের প্রতি একান্ত অনুরাগ, কূটনীতি, প্রভৃতি সমুদয় বিষয়ে বা অধিকাংশ বিষয়ে কোন জাতি বা সম্প্রদায় শ্রেষ্ঠ না হইলে তাহারা জয়ী হইতে পারে না। হিন্দুরা কিসে নিকৃষ্ট ছিল, তাহার আলোচনা এখানে করিব না। তবে মোটের উপর ইহা বলা যাইতে পারে যে তাহদের শক্তি ও সাহসের অভাব ছিল না ; সুতরাং তাহারা অবজ্ঞেয় ছিল না। মুসলমানদের ভারতবিজয় সম্বন্ধে কয়েকটি কথা স্মরণ রাখা কৰ্ত্তব্য। তাহারা কোন সময়েই সমগ্র ভারতবর্ষ জয় করিতে পারেন নাই। মোটামুটি ইহা বলা যাইতে পারে যে, তাহারা এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার যে যে দেশ জয় করিয়াছিলেন, তাহা সম্পূর্ণরূপে সমস্তটাই জয় করিয়াছিলেন। সাতশত বৎসরের প্রাধান্ত সত্ত্বেও ভারতবর্ষকে যে র্তাহারা এইরূপে জয় করিতে পারেন নাই, তাহাতে প্রমাণ হইতেছে যে ভারতবর্ষের এমন কোন বিশেষত্ব ছিল ও আছে, যাহা মুসলমানদের বিজিত অঙ্ক দেশগুলির ছিল না। মুসলমানেরা ভারতবর্ষ ছাড়া আর যত দেশ জয় করিয়াছিলেন, তাহার অনেকগুলির সমুদায় অধিবাসী মুসলমান হইয়া গিয়াছিলেন ; অবশিষ্ট প্রায় সকল দেশগুলিরই অধিকাংশ অধিবাসী মুসলমান হইয়া- - ছিলেন। ভারতবর্ষে এরূপ হয় নাই। হিন্দুদের এই রক্ষণশীলতা ইহাই প্রমাণ করে যে র্তাহাদের অধিকাংশ লোক রাজাচুগ্রহ এবং ঐহিক স্ববিধা ও ঐশ্বৰ্য্য অপেক্ষা স্বধৰ্ম্মের জন্য কষ্ট স্বীকার করাই শ্রেয়ঃ মনে করিতেন। ইহা তাহদের দৃঢ়চিত্ততা ও ধৰ্ম্মপ্রাণতার পরিচায়ক। এরূপ দেশ ও এরূপ জাতি অবজ্ঞার পাত্র নহে। অনেক সময় জ্ঞানহীন, স্থলবুদ্ধি, আধ্যাত্মিকতাহীন অসভ্য জাতির ধৰ্ম্মের উচ্চ সত্য গ্রহণ করিতে পারে না বটে ; কিন্তু হিন্দুরা জ্ঞান বুদ্ধি ও আধ্যাত্মিকতায় মোটের উপর মুসলমানদের চেয়ে নিকৃষ্ট ছিলেন বলিয়া আমরা মনে করি না। পক্ষান্তরে ইহাও বলা উচিত ষে মুসলমানের ষে ভারতবর্ষের মত দেশ ও হিন্দুর মত সাহসী দৃঢ়চিত্ত ও ধর্শ্বপ্রাণ জাতিকেও অনেকটা পরাজিত করিতে পারিয়াছিলেন, তাহা তাহদের পক্ষে ক্ষাঘার বিষয়।