পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ぐ〉や হইতে বাটীতে পৌছিলেন। তখনও মানদাসুন্দরীর ক্রোধের কিছুমাত্র উপশম হয় নাই। স্বামীর নিকট সতুর বিরুদ্ধে একখানিকে পাঁচখানি করিয়া বেশ লাগাইলেন। যোগীনবাবু তাতিয়া পুড়িয়া আসিয়াছিলেন, পত্নীর কথাগুলি সেসময় তার বড় ভাল লাগিল না। "বলি হাগা, সত্যুর বিপক্ষে কেবল তুমিই ত বল শুনি, কই, আর ত কেউ কোন কথাই বলে না ?” এই কথা শুনিয়া আদরিণী দ্বিতীয় পত্নী অভিমানে গর্জিয়া উঠিলেন। হাত নাড়িয়া, মুখ ঘুরাইয়। বলিলেন,— “তবে কি আমি মিথ্যে বলছি? মিথ্যে বলি তো দুটি চক্ষের মাথা খাই। যেন তে-রাত্তির না পোহায় ।" যোগীনবাবু। সত্যমিথ্য তুমিই জান। আমি তে। দেখতে আসি না। তবে একটি কথা বলি, সতু ছেলেমানুষ, তার কোন কথা কি গায়ে মাথতে আছে ? তার মা নেই, তুমিই এখন তার মা। কেবল যেমন তোমার, তেমনি সতুও ! 4. মানদা। (নাসা কুঞ্চিত করিয়া) পোড়াকপাল অ্যান ছেলের ! কথাটা শুনিয়া যোগীনবাবুর একটু রাগ হইল। বলিলেন,—“তবে কি বলতে চাও সতুকে মেরে ফেলব ?" মানদা। ওমা! আমি কি তা বলছি ? অামার কথায় ছেলেকে শাসন কৰ্ত্তে যাবে কেন ? বলে, “গায়ে মানেন। আপনি মোড়ল ।” আমার তাই হয়েছে! আমি বাড়ির দাসী বাদী বই তো নয়! তোমার ছেলেকে শাসন কর, না কর, অামার কি ? তবে আমি ভাল বই মন্দ বলিনি ; ছেলের লেখা নেই, পড়া নেই, দিন রাত্তির টে-টো করে ঘুরে বেড়ায়, দেখতে পারিনি, তাই বলি। ত, আমার বলাই ঝঙ্কুমারি । আর যদি কখনও বলি, তো আমার মুখে মুড়ে জেলে দিও!” যোগীনবাবু মনে মনে ভারি চটলেন। তিনি তখনই সতুকে ডাকাইয়া পাঠাইলেন। সতু তখন মাঠে, গাছের তলায় কতগুলি ছেলেমেয়ের মাঝখানে বসিয়া গাহিতেछ्लि, “ওলো ও নাগরি রাই কিশোরি, পায়ে ধরি ত্যজ মান ।” প্রব।ণী—শ্রাবণ, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ ১ম খণ্ড বিমাতার প্রহারের কথা সতুর মনেই ছিলনা। সরল বালক অশ্ৰুজল মুছিয়া হাসিতে হাসিতে আবার খেলাধূলায় মাতিষ্ঠাছিল! যোগীনবাবুর আদেশমত ভৃত্য তাহাকে ডাকিয়া আনিল। পিতাকে দেখিয়া সতু আনন্দে ছটিয়৷ তার পিতার পাশ্বে গিয়া দাড়াইল । হাসিতে হাসিতে দুই হাতে পিতার কোমর জড়াইয়া ধরিল । আবদার করিয়া বলিল,—"র্হ্য। বাব, আজ তুমি এত দেরী করে এলে কেন ?" যোগানবাবুর মেজাজ তখন ভাল নয় ; রুক্ষশ্বরে বলিলেন—"সে কথ। পরে হবে, এখন আমার কথার উত্তর দে। তুই কেব লাকে মেরেছি, তোর মাকে গাল দিয়েছিস, এসব কি ? শুয়ার! তুমি দিন দিন ভারি পাজী হচ্ছ!” পিতার সেই আকস্মিক কঠোরত দেখিয়া, স্তু একটু দমিয়া গেল। পিতার মুখে তেমন কর্কশ বাক্য সে কখনও শুনে নাই। তার মুখখানি সহসা বিবর্ণ হইয়া গেল। পিতার কোমর ছাড়িয়া দিয়া সভয়ে সে দুই প। পশ্চাতে হটিয়া দাড়াইল । যোগীনবাবু চোথ পাকাইয়া বলিলেন,— “চুপ করে রইলি যে, তোর মাকে গাল দিয়েছিস কেন ? বল ।” ". শুদ্ধমুখে বলিল—“মাকে ত আমি গাল দিইনি বাবা ।” “দিসনি, দিসনি। ওমা! কি মিথ্যেবাদী ছেলে গো ! একরত্তি ছেলের এত মিথ্যে !"—এই বলিয়৷ মানদাসুন্দরী সাশ্চর্য্যে গণ্ডে অঙ্গুলি স্থাপন করিলেন। যোগীনবাবুর আর সহ হইল না। পত্নীর উপর রাগ করিয়া সতুর পৃষ্ঠে দুই-ঘা বেত বসাইয়া দিলেন । বেতগাছটা পিঠে সজোরে পড়িলেও সতু চীৎকার করিয়া কাদিয়া উঠিল না। অফ টুম্বরে কেবলমাত্র ‘উ: করিয়া উঠিল। কিন্তু চোখ দুটি তার জলে ভরিয়৷ গেল। সে নীরবে কঁদিল বটে, কিন্তু তার ব্যথিত ক্ষুদ্র মৰ্ম্মের ভিতর ঘূর্ণবায়ুর মত যে একটা দারুণ দীর্ঘশ্বাস উঠিল, তাহ কেহ দেখিল কি ? কে দেখিবে ? মাতৃহীন শিশুর সজল চক্ষে যে কতখানি বিষাদ, কতখানি করুণ আবেদন, কতখানি সহানুভূতির আকাঙ্ক্ষা লোকের মুখ চাহিয়া থাকে, জগতের লোকে কে তার সন্ধান লয় ? l ৪র্থ সংখ্যা ] তার পরদিন রবিবার। প্রত্যুষে উঠিয়া সতু কাহাকেও কিছু না বলিয়া চুপি চুপি বাটার বাহির হইল। কেহু দেখিল না। সে কোনদিন অত ভোরে উঠে না। তার মুখখানি বড় বিষগ্ন। তখন সবে পূৰ্ব্বাকাশপ্রান্তে প্রভাতহুর্য্যের রত্বরেণুলেপিত মধুর হাসিটি মাত্র ফুটিয়া উঠিয়াছে। সূৰ্য্য উঠে নাই। দিকৃদিগন্তের কোলে তখনও উষার সে রঙ্গতজ্যোতির সম্পূর্ণ প্রসার হয় নাই। তখনও পল্লীর ঘুমের ঘোর ভাঙ্গে নাই। আধঘুম—আধজাগরণ। তথন পার্থী জাগিয়াছে, কৃষক জাগিয়াছে, আর দুই এক বাটার বোঝি জাগিয়াছে। তখনও ভূতনাথ মুীর দোকানের ঝ"াপ বন্ধ। সতু মাথাটি নীচু করিয়া চলিয়াছে। পথে এক কৃষকের সহিত সাক্ষাৎ । কৃষক ঈষৎ হাসিয়া বলিল,—“কমনে গো গানে মোশায়! আজ গা যে ভারি গীত গাইবার লাগছোনি ?” - সতু তাহার কথায় কোন উত্তর না দিয়া পাশ কাটাইয়া চলিয়া গেল। সতুর এ ভাব দেখিয়া কৃষক একটু বিস্থিত হইল। কিছুদূর গিয়া, নদী তীর। সেখানে আর-একজনের সম্মুখে পড়িল। সে, হরিধন মুখোপাধ্যায়ের বিধবা কন্যা নবদুর্গ। নবদুর্গ। প্রাতঃস্নান করিয়া বাট ফিরিবার উদ্যোগ করিতেছিল। সতু দূর হইতে তাহাকে দেখিতে পাইয়া থমকিয় দাড়াইল। পাছে নবদুর্গ তার বিষন্ন বদন দেখিয়া কোন কথা জিজ্ঞাসা করে, এই আশঙ্কায় সে শুষ্ক মুখখানিকে একটু সরস করিবার চেষ্টা করিল। অনিচ্ছসত্বেও একটি গান ধরিল । গাহিল,— আমি সই, আর রব না বৃন্দাবনে। যেথ। আমার গেছে কাহু, যাব তারি অন্বেষণে ॥ সেই শান্ত প্রভাতপ্রারম্ভে নীরব পল্লীর বুকে যে করুণস্বর কঁপিয়া উঠিল, যদি কেহ তাহা একটু মনোযোগের সহিত শুনিত, তাহ হইলে, অনায়াসেই সে বুঝিতে পারিত যে সে গানের ভিতর তিলমাত্র প্রফুল্লতা নাই! শুধু অভিমান, বিচ্ছেদ ও নিরাশমথিত মরমের উচ্ছ,সিত ব্যাকুলতা! সতুকে দেখিয়া নবদুর্গ বলিল,—“সতু, আজ যে এত সকালে উঠেছিস্ ?” সতু গান বন্ধ করিয়া বলিল,-“ফুল তুলতে যাচ্ছি।" সতু SAMMAMAMASJJMJMMJJAMAMMAMMAMAAAS &y A ০৮:৩৫, ১৯ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)~ সতু হাজার লুকাইবার চেষ্টা করিলেও, নবদুর্গ তার পৃষ্ঠে বেত্রাঘাতের চিহ্ন দেখিতে পাইল। চমকিত হইয়। বলিল,—“হারে, তোর পিঠে ও কিসের দাগ ?” সতুর মুখ একটু স্নান হইল। মাথাটি নীচু করিয়া বলিল,- “গাছ থেকে পড়ে গিয়েছিলেম, তারই দাগ।” নবদুর্গার বিশ্বাস হইল না। বলিল,—“কই, কাছে আয় দেখি !" সতু ঈষৎ হাসিয়া বলিল,—“পরে দেখো, এখন আমি ঘুরে আসি।" এই বলিয়া আবার গান ধরিল,— “আমি সই, আর রব না বৃন্দাবনে!” আর সে সেখানে দাড়াইল না। গাহিতে গাহিতে ছুটিয়৷ পলাইল। নবদুর্গার প্রাণ একটু চঞ্চল হইল। সতুকে যে নিশ্চয়ই কেহ প্রহার করিয়াছে, সে বিষয়ে তার কোন সন্দেহ রহিল না। সেই মাতৃহীন বালককে নবদুর্গ একটু বেশী ভালবাসিত। যতক্ষণ সতুকে দেখা গেল, সে অনিমিষ ৷ নয়নে সেই দিকে চাহিয়া রহিল। - সেদিন সতু আর গ্রামে ফিরিল না। গ্ৰামময় হলুস্থল পড়িয়া গেল ! অনেক সন্ধান হইল। নবদুর্গার কথাচুযায়ী নদীর তীর তন্ন তন্ন করিয়া খোজা হইল, কিন্তু কোথাও সতুকে পাওয়া গেল না। সন্ধ্যা হইয়া গেল, তখনও তার দেখা নাই। যোগীনবাবু বড় অস্থির হইয়া পড়িলেন। সন্ধ্যার পর এক রাখাল আসিয়া সংবাদ দিল, যে, অপরাষ্ট্রে সে সতুর মত একটি বালককে নদীর ধারে একাকী বসিয়া থাকিতে দেখিয়াছে। সে অনেক দূর। দুইটা গ্রামের । শেষ। এই সংবাদ পাইবা মাত্র যোগীনবাবু তার ভৃত্যকে সেই রাখালের সঙ্গে পুত্রের অন্বেষণে পাঠাইলেন ; এবং বলিয়া দিলেন, যে, সতুকে আনিয়া দিলে, প্রত্যেককে দশ টাকা করিয়া পুরস্কার দিবেন। নবদুর্গার নিকট বিদায় লইয়া সতু নদীর ধার ধরিয়া অনেক দূর গেল। কত ঘর, কত গাছ, কত ধানের ক্ষেত, কত মরাই, কত নালা পশ্চাতে পড়িয়া রহিল,—সতু চলিল। কোথায় যাইতেছে, সে লক্ষ্য নাই। পা চলে না, তবু চলিতেছে। অনেক হাটিল । দুইটা গ্রামের সীমা পার হইয়া বালক একটু ক্লান্ত হইয়া পড়িল। বেচার হাফাইতে