পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qbro ধরা পড়িয়াছেন। মাদাম কোকোভ,ৎসেভা এক কসাক রেজিমেন্টের কর্ণেল পদে উন্নীত হইয়া যুদ্ধে বীরত্বপ্রকাশের জন্য সেন্টজর্জের ক্রুশ পুরস্কার পাইয়া সম্মানিত হইয়াছেন। বৰ্ত্তমান যুদ্ধে বীরত্বের জন্য বিখ্যাত এরূপ বহু নারীর নাম বিবিধ সংবদাপত্রে প্রায়ই প্রকাশিত হইতেছে। আমাদের দেশেও বীরনারীর অভাব নাই। রাণী সংযুক্ত, রিজিয়া, অহল্যাবাই, দুর্গাবতী, লক্ষ্মীবাই, বেগম সমরু প্রভৃতি অনেকের নাম করা যাইতে পারে। ইহা হইতে ইহাই প্রমাণ হয় যে কোনো জাতি বা সম্প্রদায় একেবারেই কোনে-একটা কাজের যোগ্য নয়, এমন হইতেই পারে না। সকলের মধ্যেই সকল কাজ করিবার মতন যোগ্যতা আছেই—বেশী কম, সুবিধা ও অভ্যাসের উপর নির্ভর করে মাত্র । শ্ৰীক্ষীরোদকুমার রায় । বিমানবিহার বহু প্রাচীনকাল হইতে মানুষ আকাশপথে ভ্রমণ করিবার বাসনা হৃদয়ে পোষণ করিয়া আসিতেছে। প্রত্যেক জাতির ইতিবৃত্তে ইহার যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। হিন্দুদিগের মহাকাব্য রামায়ণে আছে—ত্রীরামচন্দ্র পুপকরথে লঙ্কা হইতে স্বদেশে প্রত্যাগমন করিয়াছিলেন। গ্রীকপুরাণে আছে—ফ্রিকাশ এবং হেল তাহাদের বিমাতা ইনোর আক্রোশ হইতে নিস্তার লাভ করিবার জন্য এক স্বর্ণরোম মেষের পিঠে চড়িয়া শূন্যপথে পলায়ন করিয়াছিলেন। ইংরেজী গ্রন্থেও এইরূপ একটি পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত দেখিতে পাওয়া যায়। জাটুলাণ্ডের রাজা নিডাঙ্গের আদেশে তাহার অনুচরগণ ওয়েলেও নামক কোন অপরাধীর পদদ্বয়ের শিরা ছিন্ন করিয়া দিয়াছিল ; রাজার অাক্রোশ হইতে পরিaোণ-লাভের আশায় ওয়েলেও পালকের জাম প্রস্তুত করিয়া শূন্যপথে স্বদেশে পলায়ন করিয়াছিল। আরব্য-উপন্যাসের উড্ডয়নক্ষম গালিচা ও পারস্যউপন্যাসের উড্ডয়নক্ষম সিন্দুকের গল্প সকলেরই জানা আছে। এইরূপে প্রত্যেক জাতির পৌরাণিক ইতিবৃত্ত অমুসন্ধান করিলে আকাশভ্রমণের দুই চারিটি কাহিনী প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩২২ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড প্রাপ্ত হওয়া যায়। এই-সকল বৃত্তান্ত হইতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে মানব আদিমকাল হইতে পক্ষীর মত বায়ুমণ্ডলে ভ্রমণ করিবার প্রবল ইচ্ছ। পোষণ করিয়া আসিতেছে এবং বায়ুমণ্ডলে প্রভূত্ব লাভ করিবার জন্য বহু কাল্পনিক উপায় উদ্ভাবন করিয়া আংশিক পরিতৃপ্তি লাভ করিয়াছে। এক দিনের কাল্পনিক বিষয় কালক্রমে আজ সত্যকার বস্তুতে পরিণত হইয়াছে, মানবের বহুদিনের সাধনা চরিতার্থতা লাভ করিয়াছে। মানুষ সাধনাবলে কত বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিয়া, কত জীবনসংগ্রামে জয়লাভ করিয়া সাধনার ফল প্রাপ্ত হয়—জগতের ইতিহাস তাঁহারই সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে । কেমন করিয়া মানুষ ক্রমে ক্রমে প্রাকৃতিক শক্তিসমূহকে আপনার আয়ত্তে আনিয়াছে, সেই রহস্যময় ইতিহাসের অনুসন্ধানে মানব চিরকাল ঔংস্থক্য দেখাইয়াছে। মানবের কল্পনাজগৎ হইতে বাহির হইয়া কিরূপে সেই বেদমযান বাস্তব মূৰ্ত্তি ধারণ করিল ও মানুষের পরিশ্রম-সাফল্যের পরিচয় দিল তাহার বিবরণ বাস্তবিকই কৌতুহলোদ্দীপক । ইটালিদেশীয় লেখক লিয়োনার্দে দা ভিঞ্চি ( ১৪৫২১৫১৯) সৰ্ব্বপ্রথমে তাহার গ্রন্থাবলীতে আকাশপথে ভ্রমণ করিবার একটি উপায়ের উল্লেখ করিয়াছিলেন। বলিতে গেলে, তিনিই সৰ্ব্বাগ্রে কল্পনার বস্তুকে বাস্তব মূৰ্ত্তি প্রদান কবিবার উপায় লিথিয় গিয়াছেন। তিনি বলেন পার্থীর ন্যায় কতকগুলি বিভিন্ন-অংশযুক্ত ডানা মানুষের শরীরে সংযুক্ত করিয়া দিলে এবং তৎসমুদয় হস্ত ও পদদ্বারা চালনা করিলে শূন্যপথে উঠিবার সম্ভাবনা আছে। যখন উপরে উঠিতে হইবে তখন ডানাগুলিকে প্রসারিত অবস্থা হইতে কুঞ্চিত করিতে হইবে এবং অবতরণ করিবার সময় কুঞ্চিত অবস্থা হইতে প্রসারিত করিতে হইবে । কাগজের সাহায্যে অনেকেই উক্তপ্রণালী অনুসারে পরীক্ষা করিয়াছিলেন ; কিন্তু কেহই কৃতকাৰ্য্য হইতে পারেন নাই। ইহার কিছুকাল পরে ফাউষ্ট ভেরাঞ্জিও নূতন উপায় অবলম্বন করিয়া আংশিকভাবে সফলতালাভ করিয়াছিলেন । সমদৈর্ঘ্য চারিথও কাষ্ঠকে চতুভূজ আকারে দৃঢ়বদ্ধ করিয়া তিনি উহার চারিদিকে একথও অত্যন্ত পুরু বস্ত্রকে উত্তমরূপে সংযুক্ত করিয়া দেন। ইহাতে ছাতার আকারে একটি বেলুন | | ৫ম সংখ্যা ] ফ্রানসিসকো দ্য লান কর্তৃক উদ্ভাবিত বায়ু যান। প্রস্তুত হয়। তাহাতে আরোহণ করিয়া তিনি ভিনিস নগরীর একটি উচ্চ স্তম্ভ হইতে ভূমিতে অবতরণ করিয়া ছিলেন । " ১৬৭৮ খৃষ্টাব্দে বেস্নিয়ে নামক একজন কুলুপ-ব্যবসায়ী দুইটি সমান্তরাল কাষ্ঠদণ্ডকে তাহার স্কম্বোপরি স্থাপন করিলেন এবং ইহাদের প্রান্তদেশে পুস্তকের মত দুইটি পরম্পরযুক্ত সমতল কাষ্ঠ সংবদ্ধ করিলেন। উপরি উক্ত ! कुन९ দুইটি উপরের বা নীচের দিকে টানিয়া ইহাদিগকে পুস্তকের মত এক-একবার আবদ্ধ ও উন্মুক্ত করিতে পারিতেন । এই যন্ত্রের ডান পর্য্যায়ক্রমে মেলিয় ও ডিয়া তিনি উড়িতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। কিছুকাল পরে মাকুই দ্য বাকেভিল এই যন্ত্রটির সংস্কার সাধন করিলেন এবং ১৭৪২ খৃষ্টাব্দে তাহার সৌধের গবাক্ষপথ হইতে উক্ত যন্ত্রে আরোহণ করিয়া নিকটবৰ্ত্তী একটি উপবন অতিক্রম করিয়া সীন নদীতে অবতরণ করিয়াছিলেন। স্বতরাং তিনি এ বিষয়ে অন্য অপেক্ষ অধিকতর কৃতকার্য্য হইয়াছিলেন । এ পর্যন্ত শূন্তপথে ভ্রমণ করিবার যে-সকল যন্ত্র উদ্ভাবিত চুইয়াছিল তাহার সমস্তই পক্ষীর পাথার অনুকরণে প্রস্তুত । ১৬৭০ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্সিসকো ডি লানা নৌকায় শূন্যপথে نتای ভ্রমণের একটি উপায়ের কথা বলেন। তাহার মতে চারিটি বায়ুশূন্ত তাম্রগোলক একখানি হালকা নৌকায় সংবদ্ধ করিয়া উহাতে পাল সংযুক্ত করিতে হইবে। তাম্রগোলক চারিটি বায়ুশূন্য, স্বতরাং উপরে উঠিবার চেষ্টা করিবে। তাম্রগোলকগুলি কত বড় হওয়া উচিত, তিনি তাহার একটি হিসাব করিলেন এবং দেখিলেন যে ২৫ ফুট ব্যাস এবং ৫r ইঞ্চি পুরু গোলকের সাহায্যে সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট ফল পাওয়া যাইতে পারে। এইরূপ বায়ুশূন্ত চারিটি গোলক প্রায় ১৫ মণ ভারী কোন পদার্থকে টানিয়া উপরের দিকে তুলিতে পারে। কিন্তু বাস্তবিক এত অল্প-পুরু গোলক বায়ুর চাপে যে একেবারে ভাঙ্গিয়া যাইবে, তাহা তিনি বুঝিতে পারিলেন না। ডি লানা অনেক যুক্তির সাহায্যে এই আপত্তি খণ্ডন করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। কিন্তু ইহা যে কাৰ্য্যতঃ অসম্ভব, তাহ সকলেই অহুমান করিতে পারেন। মণ্টগলফিয়ের বেলুন । ১৭৮৩ খৃষ্টাব্দে ষ্টিফেন ও যোসেফ মণ্টগলফিয়ে নামক লিয়ন নগরোপকণ্ঠবাসী জনৈক কাগজ-ব্যবসায়ীর দুই পুত্র বায়ুমণ্ডলে মেঘ কিরূপে ভাসমান অবস্থায় থাকে তাহা লক্ষ্য করিলেন এবং মনে করিলেন যে একটি থলিয়া কোন