পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ brや পিলসার এবং ফরাসীরাজ্যে ফারবার গ্রহণ করিয়া তাহার প্রসার সম্যকরূপে বৃদ্ধি করিলেন । পিলসারের পরে এতদতিরিক্ত মৌলিক গবেষণা ইংলণ্ডে কেহই করেন নাই। কেবল কোডি এবং এ ভি রো এই দুইজন বিমানবিহার একটি ট্রাইপ্লেন ব্যবহার করিয়াছিলেন । রাইট নামে দুই ভ্রাতা লিলিয়েস্থলের গবেষণাপ্রণালী পাঠ করিয়৷ একথান। উন্নত ধরণের বাইপ্লেন উদ্ভাবন করিলেন। ১৮৯৪ খৃষ্টাব্দে ফার্বার নামক একজন ফরাসী সেনানায়ক লিলিয়েস্থালের প্রণালী অবলম্বনে ব্যোমযানে অনেকগুলি পক্ষ সংবদ্ধ করিয়া ইহার সঙ্গে মোটর এবং ঘূর্ণায়মান পক্ষ সংযোগ করিলেন এবং উহার সাহায্যে ভ্রমণ করিয়া তাহার অধ্যবসায়ের সার্থকত প্রদর্শন করিলেন । রাইট বাইপ্লেন । ১৯০৬ খৃষ্টাব্দে সেনটচ-ডুমণ্ট নামক এক গগন পর্য্যটক পরীক্ষা-ভূমিতে অবতীর্ণ হইলেন। ৮৩ ফুট দীর্ঘ স্থান ভ্রমণ করার জন্য তিনি আবৃক্কডেকন পুরস্কার লাভ করিলেন। বলিতে গেলে এডার ব্যতীত ইউরোপে তিনিই সৰ্ব্বপ্রথম অত্যন্ত কৃতকাৰ্য্যতার সহিত আকাশপথে ভ্রমণ করিয়াছিলেন। এক মাস পরে তিনি প্রায় ৭৪০ ফুট ভ্রমণ করিতে সমর্থ হইলেন। ১৯০৮ সালে হেনরি ফার্মান ৩৩০০ ফুট পরিধির একটি ত্রিকোণাকার ভূমি পরিভ্রমণ করার জন্য তিন লক্ষ টাকার আরূক্ডেকন-ডিট্রক্স পুরস্কার লাভ করিলেন। এই সময়ে ফরাসী-ভূমিতে ব্যোমবিহারের জন্য বহু যন্ত্র প্রস্তুত হইতে থাকে। তন্মধ্যে অনেকগুলি পরীক্ষাকালে বিনষ্ট হওয়ায় বহু লোকের প্রাণনাশ ঘটে। ১৯০৮ প্রবাসী—ভাদ্র, »७२२ [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড I খৃষ্টাব্দে আমেরিকায় উইলবার রাইটু বোমযানের সাহায্যে অনেক অত্যাশ্চৰ্য্য ব্যাপার সম্পন্ন করায় কিছু কালের জন্য সকলের দৃষ্টি আমেরিকার দিকে আকৃষ্ট হইল। কিন্তু ইহার পরে যখন ফারমান সেলনস্ হইতে রিম্স্ নগরে ১৭ মাইল পথ ভ্রমণ সমাপ্ত করিয়া উপস্থিত হইলেন, তখন আবার ইউরোপের দিকে সকলের দৃষ্টি পতিত হইল। ইহার অব্যবহিত পরে ! লুইস ব্রেরিয়ট ১৯ মাইল ভ্রমণ করিয়! আবার যথাস্থানে প্রত্যাগত হইলেন। ১৯০৯ খৃষ্টাব্দের জুলাই মাসে লেথাম্ ইংলিস চ্যানেল অতিক্রম করিবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু প্রথমবার বিফলপ্রযত্ন হওয়ার পরে ব্রেরিয়টের নিকট । র্তাহার যন্ত্রটি বিক্রয় করিয়া ফেলিলেন । ব্রেরিয়ট ২৫ শে জুলাই তাহার সাহায্যে সৰ্ব্বপ্রথম ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম জামে ন নৌ-প্রদর্শনীতে জেপেলিন। | করিলেন । ইহার পরে কোম ডি লাম্বার্ট পারী নগরীর উপরে ঈফেল স্তম্ভের চতুর্দিকে ১০০০ ফুট উচ্চে ভ্রমণ করিলেন । এবং ১৯০৯ খৃষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর তারিখে মরিস ফারমান | ৫০ মিনিটে ৪ ৭ মাইল পথ অতিক্রম করিলেন । ইহার পরবর্তী সময়ে পূৰ্ব্ববর্ণিতরূপ বোমপথে ভ্রমণ অনেকেই করিয়াছিলেন। ব্যোমযানে সুদীর্ঘ ভ্রমণ করা ইহার পরে সহজ হইয় উঠে। তবে যাহারা আকাশে অত্যন্ত উচ্চে উঠিয়াছিলেন, তাহাদের মধ্যে লেথাম এবং কেভেজের নামই উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ইহঁাদের পরেও লেগাগনে ১০৭৪৬ ফুট উচ্চে উঠিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। লিলিয়েস্থলের সময় হইতে জাৰ্ম্মানীতে প্রথম বেলুন নিৰ্ম্মাণের সূচনা হয় এবং তৎপরে দ্রুতগতিতে এই কাৰ্য্য 2b" ৫ম সংখ্যা] বিমান চলিতে থাকে। খুব সম্ভব জাৰ্ম্মান কর্তৃপক্ষ অন্যান্য দেশের অজ্ঞাতসারে যুদ্ধবিভাগে ব্যবহারার্থ বোমধান নিৰ্ম্মাণে উৎসাহ দান করিয়া আসিতেছিলেন এবং বিপুল অর্থব্যয়ে ও প্রভূত যত্ন সহকারে অল্প কালের মধ্যে ইহাকে অত্যাশ্চৰ্য্য উন্নত অবস্থায় আনয়ন করিয়া সমস্ত জগৎকে বিস্মিত করিয়া দিয়াছেন। উনবিংশ শতাব্দীর শেয়-ভাগ হইতে জাৰ্ম্মানীতে ব্যোমযানের উন্নতি সাধনের উদ্বেশ্বে বিপুল আয়োজন ও পরীক্ষা চলিতে থাকে। এই কৰ্ম্মান্দোলনের মধ্যে ১৯০০ খৃষ্টাব্দে কাউন্ট জেপেলিন অবতীর্ণ লইলেন এবং ব্যোমবিহারের এক অদ্ভূত যন্ত্ৰ নিৰ্ম্মাণ করিয়া সকলকেই বিস্মিত করিয়া দিলেন। তাহার নিজের নামানুসারেই এই যন্ত্রের নাম রাখিলেন-জেপেলিন । ইহার জীবনকাহিনী বড়ই বিস্ময়কর। আত্মবিশ্বাসবলে মানব কিরূপে বহু বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিয়া নিৰ্ভীকচিত্তে স্বকাৰ্য্য সাধনে অগ্রসর হইতে পারে আমরা ইহার জীবনে তাহারই পূর্ণ অভিব্যক্তি দেখিতে পাই। " ১৮৩৪ খৃষ্টাব্দে কাউন্ট জেপেলিন কনষ্টেন হ্রদে একটি গির্জায় জন্ম গ্রহণ করেন। কোন প্রণয়-ব্যাপারে আবদ্ধ হইয়া যৌবনে আমেরিকায় আগমন করেন এবং প্রায় ২৫ বৎসরের সময় আমেরিকার স্বপ্রসিদ্ধ ‘ঘরোয় যুদ্ধে যোগদান করেন। এই সময়ে তিনি জীবনে সৰ্ব্বপ্রথম ব্যোমযানে আরোহণ করিবার স্বযোগ প্রাপ্ত হন এবং ইহার ফলেই ব্যোমযান-বিদ্যায় সামান্য অভিজ্ঞতা লাভ করিয়া ভাবীজীবনে জগৎব্যাপী যশ অর্জন করিতে সমর্থ হইয়াছেন। আমেরিকার যুদ্ধ শেষ হইলে তিনি জাৰ্ম্মানীতে প্রত্যাগমন করেন এবং পরবর্তী সময়ে অষ্টিয়া এবং প্রশিয়া ও অষ্ট্রিয়া এবং ফ্রান্সের মধ্যে যে যুদ্ধ উপস্থিত হয় এই উভয় যুদ্ধে তিনি উপস্থিত থাকিয়া বীরত্ব প্রদর্শন করেন। যুদ্ধকার্য্যে যদিও তিনি একজন অসাধারণ স্বদক্ষ দৈনিকপুরুষ ছিলেন, তথাপি তাহার মন যুদ্ধব্যবসা হইতে আবিষ্কারব্যাপারে নিযুক্ত হইবার জন্য চঞ্চল হইয়৷ উঠিতেছিল। ২৫ বৎসর সৈনিকবিভাগে কাজ করিবার পর ব্যোমন্ত্রমণবিষয়ে অনুশীলন করিতে মন:প্রাণ নিয়োগ করিবেন বলিয়া জেনারেলের পদ পরিত্যাগ করিয়া উক্ত বিষয়ে আত্মনিয়োগ করিলেন । এই জন্য র্তাহাকে \ა পঞ্চাশাধিক বয়ঃক্রমকালে তড়িংবিজ্ঞান, শক্তিবিজ্ঞান ( Mechanics) azt stafuta (Meteorology) উত্তমরূপে আয়ত্ত করিতে হইল। ইহার পরে তিনি মনস্থ করিলেন যে বোমযান রাখিবার জন্য এবং বহুপ্রকার ব্যয়সাধ্য পরীক্ষা সাধন করিতে একটি স্ববৃহৎ গৃহ নিৰ্ম্মাণ করিবেন। এই অভিপ্রায়ে কনষ্টেন হ্রদের নিকটবৰ্ত্ত ফ্রিড্রিকসাফেন নামক স্থান নির্দিষ্ট করিলেন এবং ব্যোমযান হইতে পতনজনিত দুর্ঘটনা নিবারণ করিবার জন্য উক্ত হ্রদের উপরে এমন এক নৌসেতু নিৰ্ম্মাণ করিলেন, যে, ইহাকে ইচ্ছামত চারিদিকে ঘুরাইতে পারা যাইত। পরীক্ষাকালে বাত্যাপ্রবাহ ব্যোমযানের উপর পতিত হইলে অনিষ্টের সম্ভাবনা বা বাধা জন্মিতে পারে এই আশঙ্ক দূর করিবার জন্ত নৌসেতুখানি ইচ্ছামত ঘুরাইয়া বায়ুপ্রবাহের অভিমুখে স্থাপন করিতেন। পরীক্ষা আরম্ভ করিবার পূৰ্ব্বে কাউন্টের ৩৭৫০•• টাকার সম্পত্তি ছিল। কিন্তু তিনি উগ্ৰ অল্পকালের মধ্যে পরীক্ষা সম্পন্ন করিতে নিঃশেষ করিয়া ফেলিলেন। কাজেই তিনি উক্ত বিষয়ে আরও অধিক অনুশীলন করিবার জন্য বন্ধুবান্ধব, সমস্ত স্বদেশহিতৈষী ব্যক্তি এবং সৰ্ব্বশেষে সম্রাট কাইজারের নিকট অর্থ প্রার্থনা করিলেন। অবশেষে । ১৯০৮ খ্ৰীষ্টাব্দে তাহার অদৃষ্টের গতি পরিবর্তিত হইল। । জাৰ্ম্মানগবর্ণমেণ্ট বহুদিন হইতে কাউন্টের কার্য্যপ্রণালীর দ্রুত উন্নতি পৰ্য্যবেক্ষণ করিয়া আসিতেছিলেন। অনতিবিলম্বে জাৰ্ম্মান-সম্রাট কাইজারের আহুকূল্যে জাৰ্ম্মানীর সমস্ত সহর ও নগরে একটি জেপেলিন অর্থভাণ্ডার স্থাপিত । হইল। প্রায় একমাসেই পয়তাল্লিশ লক্ষ টাকা উক্ত ভাণ্ডারে সঞ্চিত হইল। এই অর্থের সাহায্যে কাউন্ট তাহার কার্য্যপ্রণালীর অত্যধিক প্রসার সাধন করিতে সমর্থ হইলেন এবং অল্প কালের মধ্যেই অসংখ্য বোম্যান নিৰ্ম্মাণ করিয়া ফেলিলেন। - কিন্তু প্রথমাবস্থায় পরীক্ষাকালে ভূমিতে অবতরণের সময় । বাত্যাপ্রবাহ ও বহুবিধকারণে অনেক যন্ত্ৰই নষ্ট হইয়৷ গেল । কাউন্ট প্রথমাবস্থায় যখন আবিষ্কার-কধ্যে লিপ্ত ।