পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مخنفيلا হইতেই প্রাঙ্গ উৎপাদনের ব্যবস্থা না করিলে ভাল হইত। প্রজাবৰ্গ সামান্য জ্ঞান প্রাপ্ত হয়, ইহা আবশ্ব দেখিতে হইবে। এই নিমিত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যা ও বিজ্ঞানের মিলন বাঞ্ছনীয় হইতেছে। সাধারণের নিমিত্ত বিশেষ বিদ্যা বিশেষ বিজ্ঞান অনাবশ্যক মনে হইতেছে । সমাজের সহিত এই কথার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে। এখানে সে সম্বন্ধ-প্রদর্শনের লোভ ত্যাগ করিয়া উপস্থিত প্রসঙ্গ অনুসরণ করি। বিলাতে বিজ্ঞানার্থে বিজ্ঞান-চর্চা আছে, এই চর্চার নিমিত্ত যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে ; আর আছে ধনার্থে বিজ্ঞানচর্চা। সে দেশে তিন শ্রেণীর বৈজ্ঞানিক আছেন। কেহ জ্ঞানার্জনেই জীবন যাপন করিতেছেন ; সে জ্ঞানের প্রয়োগ দেখিতেছেন না, ভাবিতেছেন না। ইহারা বৈজ্ঞানিক সন্ন্যাসী। এরূপ সন্ন্যাসী কোন দেশে অধিক হইতে পারেন না। দ্বিতীয় শ্রেণীর বৈজ্ঞানিক কলাশালায় কলার উন্নতি সাধনের ব্যয়লাঘবের চিন্ত৷ করিতেছেন। ইহারা নিজেদের জ্ঞান • দ্বারা কলাস্বামীর সেবা করিতেছেন এবং তদ্বারা ধনোপার্জন করিতেছেন। তৃতীয় শ্রেণীর বৈজ্ঞানিক স্বয়ং কলাস্বামী । ইহার কলায় অভ্যন্ত বিজ্ঞান প্রয়োগ করিয়া ধনোপাজন করিতেছেন। স্বামী ও কী দুইই হইতে হইলে কেবল বিজ্ঞানে কুলায় না, স্বামীত্বের, কলাপ্রবর্তনের জ্ঞানও প্রচুর আবশ্বক হয়। এদেশে আমাদের বৈজ্ঞানিক ছাত্রদিগের নিকট এই তিন ক্ষেত্রের একটাও নাই। দেশে এমন কলাকারখানা নাই, যাহার স্বামী বৈজ্ঞানিক নিযুক্ত করিতে পারেন। এক যে ঔষধ-করণশালা হইয়াছে, তাহাতে কয়েকজন কৃতী রাসায়নিক নিযুক্ত আছেন। কারখানা থাকিলেও বৈজ্ঞানিকের কৰ্ম্মভ্যাস এমন নাই যাহাতে কলার উন্নতি সাধিত হইত। এই কারণে কয়েক বৎসর হইতে কয়েকজন সদশয়ের চেষ্টায় ইয়ুরোপ আমেরিকা ও জাপানে কলা ও মূৰ্ব বিজ্ঞান শিখিবার নিমিত্ত আমাদের শিক্ষিত যুবক যাইতেছেন। কয়েকজন কৃতকৰ্ম্ম হইয়া দেশে ফিরিয়া আসিয়াছেন; কিন্তু আমরা ফলে সন্তুষ্ট হইতে পারিতেছি না। আমার মনে হয়, কর্তৃপক্ষ দুই বিষয়ে যথোচিত মনোযোগী হন নাই। প্রথম এই, কলা-বিজ্ঞান শিকিলেই কলা স্থাপিত হইতে পারে না। দ্বিতীয় এই দেশ ন দেখিয়৷ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ SMMMMMMSMMSMSMMSSSJSJSS T [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড বিদেশে-শেখা কলাবিজ্ঞান সহজে কাৰ্য্যকারী হয় না। বস্তুত: কলা-প্রবর্তনের চারি পাদ আছে। ধন, নিৰ্ব্বাহন, কল । জ্ঞান, ও উপাদান। এই চারি পাদের একটির অভাব ঘটিলে কলা চলে না। যুবকের কলাজ্ঞান লাভ করিয়৷ প্রত্যাবৰ্ত্তন করিতেছেন। কিন্তু অপর তিন পাদ পূর্ণ করিবে কে ? আমরা নানা সময়ে, প্রায় সৰ্ব্বদা, কলা বিজ্ঞানালয় প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত সরকারের নিকট প্রার্থনা | করিতেছি। কিন্তু অন্য তিন পাদ কোথা হইতে জুটিবে তাহ ভাবিতেছি না। বোধ হয় এখন আমরা বুঝিতেছি, হঠাৎ কিছু করিতে পারা যায় না ; দেশে একটা কিছু করিতে গেলে অন্য কিছুও করা আবশ্যক হয়। অথচ নিশ্চিন্ত মনে চুপ করিয়া বসিয়া থাকিলেও দেশে বিজ্ঞান-বিস্তার ঘটিবে না। যখন বিজ্ঞান-বিস্তার খুজি, তখন কেবল জ্ঞানমার্গে চলি না। বিজ্ঞানের সাহায্যে দেশের ধনবৃদ্ধিও খুজি । এই কথায় কেহ কেহ চমকাইতে পারেন। তাহারা বিজ্ঞানের পদচ্যুতির শঙ্কায় কাতর হইতে । পারেন। কিন্তু জিজ্ঞাসা করি বিজ্ঞানের উদেখা কি ? বিজ্ঞানালোচনার আনন্দে যাহার দিন চলে না, তাহাকে বিজ্ঞানার্থে বিজ্ঞান বলায় নিৰ্ম্মমত হয় না কি ? বিদ্যার্থে বিদ্যা কথাটায় নিষ্কাম ত্রতের উচ্চ ধ্বনি শুনিতে পাই বটে কিন্তু যে সংসারে বাস করিতেছি সেটা অগ্রাহ করা বুদ্ধি । মানের যোগ্য নহে। আমাদের ছাত্রেরা কি শিশু নিৰ্ব্বোধ ধে তাহারা হিতাহিত বিবেক করিতে পারে না ? তাহার কি মনে করে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাইবার অন্য পন্থা নাই বলিয়াই কলেজের দ্বারস্থ হইয়াছে ? তাহারা জানে ডিগ্রি না পাইলে বৃত্তিহীন হইয়৷ অৰ্দ্ধাশনে থাকিয়া ঘরে বাহিরে লোকগঞ্জনায় দিন কাটাইতে হইবে ? যখন পিতা মাতা ভ্রাতা-ভগিনী কাতরস্বরে বলেন, "হায় সে ফেল । হইয়াছে",সে বৈজ্ঞানিক হইল না, মুখ হইয়া রছিল,এই শোকে কি হাহারব করেন ? সকাম হইয়া ধৰ্ম্মাচরণ করিলে ফল হয় ন, ইহা বিশ্বাস করি না। যে কাজ করিয়া ধনমান লাভ হয় না, সে কাজে কয় জন অভিনিবিষ্ট হইতে পারে ? কবি সিংহ মনে মনে কাব্য রচনা করিয়া কিংবা নির্জনে লিথিয় নিজে পড়িয়া তৃপ্ত হন না ; ধনের আশা না করিলেও যশের আশা করেন, কাব্য ছাপাইয়া প্রচারিত করেন। ১ম সংখ্য। ] "নিষ্কাম" বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার দ্বারা ঘশের আশা করেন। ठूला প্রতিদ্বন্দ্বীর ঈর্ষাভাগী হইতেন না। যিনি সৌভাগ্যসম্পংকরী সকল-বিভবসিদ্ধি , বাগ দেবীর পূজা করেন, তিনি বিদেশে মান্য স্বদেশে ধন্ত হন। পরা বিদ্যা নির্জনে সাধনীয়া ; অপর বিদ্যা লোকসমাজের হিতের নিমিত্ত, নিজেরও হিতের নিমিত্ত, একারণ শিক্ষণীয়। বিদ্বান সৰ্ব্বত্র পূজাতে, ইহা আমাদেরই দেশের নীতি , আর আমরাই বিদ্যাং দেহি ধনং দেহি যশো দেহি বলিয়া ঠাকুরের পায়ে পুষ্পাঞ্জলি দিই। বিদ্যাহীন মাহুষ পশুর সমান, এ কথা সবাই জানে। বিদ্য চাই নতুবা বাচিতে পারি না। জ্ঞানের গরিম অবশ্য আছে। জ্ঞানের নিকট সংসারের মান-অপমান কিছুই নহে। কিন্তু জ্ঞানীর জীবন-সংগ্রাম মায়াময় নহে। মূৰ্ত্ত বিজ্ঞানের সাহায্যে আজি-কালি কি অভাবনীয় কাও সাধিত হইতেছে, তাহ আমাদের অবিদিত নাই। বিলাতী দীপশলা হইতে তড়িং দীপের উদ্ভাবনা পৰ্য্যন্ত চিন্তা করিলেই মাথা ঘুরিয়া পড়ে। শস্ত্র-চিকিৎসায়, বিযের প্রতিষেধে, অণুজীব-ধ্বংসের উপায়ে নূতন যুগ প্রবর্তিত হইয়াছে। বিলাতী মূৰ্ত্ত-বিজ্ঞান বিশেষতঃ মূৰ্ত্তরসায়ন ও চিকিৎসা-বাৰ্ত্তার উন্নতির নিমিত্ত বহু বহু লোক অহোরাত্রি পরিশ্রম করিতেছেন। অমূৰ্ত্ত বিজ্ঞান হইতে মূৰ্ত্ত বিজ্ঞানের জন্ম। কিন্তু মূৰ্ত্ত বিজ্ঞান হইয়াছে বলিয়৷ অমূৰ্ত্ত বিজ্ঞানের প্রসার বাড়িয়াছে। প্রকৃতির শক্তি কাড়িয়া লইতে হইলে সে শক্তির পরিচয় প্রথমে চাই। গেলিলিও লণ্ঠন দুলিতে দেখিয় দোলকের দোলনস্থত্র আবিষ্কার করিয়াছিলেন। তিনি জ্ঞানভিক্ষু ছিলেন। র্তাহার আবিস্কারে সংসারের কি হিত হইবে, তাহা তিনি ভাবেন নাই । অন্য দিকে, টেলিগ্রাফের ইতিহাস স্মরণ করুন। ভল্ট তাড়িত-প্রবাহ আবিষ্কার করিলেন। তাহার পর কেহ চুম্বকের প্রতি তাড়িতপ্রবাহের ক্রিয় দেখাইলেন । টেলিগ্রাফি স্বষ্টি হইল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে গবেষণার প্রয়োজন হইল। নূতন পরিমাণ যন্ত্র, যুগ্ম-যন্ত্র, মান প্রভৃতি আবখ্যক হইল। ক্লার্ক মাক্স, ৰেল এই ক্ষেত্রে বিচরণ করিতে করিতে ঈথারের তরঙ্গ সিদ্ধ করিলেন । ইহা হইতে ক্রমে বিনা তারে বার্তাপ্রেরণ দেশে বিজ্ঞান-প্রতিষ্ঠা —I. >○○ সম্ভাবিত হইয়াছে। অমৃত বিজ্ঞান নূতন কিছুর সংবাদ শোনায় ; মৃত-বিজ্ঞান তাহার প্রয়োগ বৃদ্ধি ও পুষ্টি করে। একের সহিত অন্যের এই অভেদ্য বন্ধন আছে বলিয়াই আমরা বিজ্ঞান বিজ্ঞান রব করিতেছি। বিজ্ঞান দ্রব্য গড়ে না, কলা গড়ে। বিজ্ঞান কলা গড়িবার সন্ধান বলিয়া দেয়। বিজ্ঞান জ্ঞান লইয়া সস্তুষ্ট, কলা-বিজ্ঞান ( কলার অস্তনিহিত বিজ্ঞান ) জ্ঞান ও কৰ্ম্মের যোগ ঘটায়। কৃষি চিকিৎসা প্রভৃতির অন্তনিহিত বিজ্ঞান বাৰ্ত্ত-বিজ্ঞান। কল-বিজ্ঞান ও বাৰ্ত্তা-বিজ্ঞান মূৰ্ত্ত-বিজ্ঞান। অমৃক্তবিজ্ঞান বিস্তীর্ণ, জগৎব্যাপী ; আকাশের নাড়ী নক্ষত্র হইতে পাতালের নীচে কুম ছিল কি না, তাহার অনুসন্ধান করে। এই বিশাল বিজ্ঞানের মধ্যে দিশাহারা হইয়া পড়িতে হয়। এই কারণে বিজ্ঞানের নানা শাখা-কল্পনা। ইহাদের মধ্যে কিমিতি-বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান অন্য শাখারও উপস্তম্ভ। এই দুই বিজ্ঞান অধিকাংশ মূতবিজ্ঞানের আদি, মূত-বিজ্ঞান ক্ষুদ্র ; আমার তোমার যাহাতে হিত হইতে পারিবে তাহার বিজ্ঞান। এই কারণে খণ্ডিত। কিন্তু অধিকারী-ভেদ ত আছে। যে জ্ঞান কেবল জ্ঞান না থাকিয়া ফলদায়ক হয় এবং যাহা লাভ করিতে ছাত্রের উৎসাহ হয়, তাহা মূত-বিজ্ঞান হউক, কলাবিজ্ঞান হউক, তাহ হিতকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকাল কলেজ, টিচার-ট্রেনিং কলেজ, ল-কলেজ, এ-সব কলেজের ছাত্রদিগের জ্ঞান ও বিনয় হয় না, বলিতে পারি না। ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকাল কলেজ ধরুন । এখানে বাৰ্ত্তার আবশ্যক নানা বিজ্ঞান শেখানা হয়, সবই খণ্ডিত ; মেডিকাল কলেজে স্বস্থ দেহের রক্ষা ও রুগ্ন দেহের আরোগ্য এই দুই বিষয় লইয়াই বিশাল বিজ্ঞান শেখানা হয়। কিন্তু এই দুই কলেজের উত্তীর্ণ ছাত্র ও অমৃত-বিজ্ঞান-কলেজের উত্তীর্ণ ছাত্রের তুলনা করুন। শেষোক্ত ছাত্র জীবনসংগ্রামের যোগ্য নহে। বিশ বৎসরের যুবক বি-এ, বিএসসি পাশ করিয়া খণ্ডিত জ্ঞানের সংসার-ধৰ্ম্মে অনভিজ্ঞ থাকে। - > বিলাতের কথা স্বতন্ত্র। সেখানে মূত-বিজ্ঞান শিখিবার কলেজ আছে, অমৃত-বিজ্ঞান শিখিবারও আছে। জৰ্ম্মানীর বর্তমান আস্পদ্ধা ও বাহবাস্ফোটে অমৃত-বিজ্ঞান