পাতা:প্রবাসী (পঞ্চদশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬8 থাকিত, এ কথা স্পষ্ট লেখা আছে। রামপাল নীেকার সেতু করিয়া গঙ্গ। পার হইয়াছিলেন, এ কথা রামচরিতে স্পষ্ট করিয়া লেখা আছে। ইংরেজী ১২৭৬ সালে তাম্রলিপ্তি হইতে কতকগুলি বৌদ্ধভিক্ষু জাহাজে চড়িয়া পেগানে গিয়া তথাকার বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম সংস্কার করেন, একথাও কল্যাণীনগরের শিলালেখে স্পষ্ট করিয়া বলা আছে। কিন্তু মনসা ও মঙ্গলচণ্ডীর পুথিতেই আমরা বাঙ্গল দেশের নৌকাযাত্রার খুব জাকাল খবর পাই,–চোঁদ, পোনের, যোলথানি জাহাজ একজন সদাগর একজন মাঝীর অধীনে ভাসাইয়া লইয়। গঙ্গা বাহিয়া সমুদ্র বাহিয়া সিংহলে যাইতেন এবং তথা হইতেও ১৪১৫ দিন বাহিয়৷ মহাসমুদ্রের মধ্যে নানা দ্বীপ উপদ্বীপে বাণিজ্য করিতে যাইতেন। চাদসদাগরের প্রধান জাহাজের নাম মধুকর। কোন কোন পুথিতে লেখে যে, মধুকরের ১২০০ শত দাড় ছিল । দ্বিজ বংশীদাসের মনসার ভাসানে লেখা আছে, সিংহল হইতে ১৩ দিন মহাসমুদ্রে যাওয়ার পর ভীষণ ঝড় উঠিল, তুলারাশির মত ফেনরাশি নৌকার উপর দিয়া চলিতে লাগিল। চাদসদাগর কাদিয়াই আকুল — তিনি মাঝীকে ধরিয়া টানাটানি করিতে লাগিলেন,—“তুমি ইহার একটা উপায় কর।” মান্ধী তখন মধুকর হইতে কতকগুলা তেলের পিপা খুলিয়া সমূদ্রে ফেলিয়া দিলেন, ঢেউ থামিয়া গেল। এইসকল বই লেখার পরও যখন কেদাররায় ও প্রতাপাদিত্য খুব প্রবল হইয়া উঠিয়াছিলেন, তখন তাহারা সৰ্ব্বদাই নৌকা লইয়া যুদ্ধ করিতেন, অনেক সময় দূরদূরান্তরও যাইতেন। কিন্তু তখন তাহদের সহায় ছিল পর্তুগীজ বোম্বেটের দল। ইহার পরেও আবার যখন আরাকানের রাজা ও পর্তুগীজ বোম্বেটের বাঙ্গলায় বড়ই অত্যাচার আরম্ভ করিল, দেশটাকে সত্য-সত্যই ‘মগের মুল্লুক’ করিয়া তুলিল, তখন আবার বাঙ্গালী মাৰী দিয়াই সায়েস্ত থা তাহদের শাসন করিলেন । বঙ্গসাগরে বোম্বেটেগিরি থামিয় গেল । সপ্তম গৌরব—বৌদ্ধ শীলভদ্র চীনে যন্ত বৌদ্ধ পণ্ডিত জন্সিয়াছিলেন, যুয়াং চুয়াং র্তাহাদের মধ্যে সকলের চেয়ে বড়। তাহারই শিষ্যপ্রশিষ্য এক সময় জাপান, কোরিয়া, মঙ্গলিয়া ছাইয়া কেলিমাছিল। যা চুয়া বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম ও যোগ শিখিবার জন্য ক প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩২২ SMSMSMS MM MSMSMSMSMSMSMSMS MMMMM MMMMMMMS ভারতবর্ষে আসিয়াছিলেন, তাহার চেয়ে ੋਂ শিথিয় যান। যাহার পদতলে বসিয়া তিনি এত শাস্ত্র শিথিয়াছিলেন, তিনি একজন বাঙ্গালী । ইহা বাঙ্গালীর পক্ষে কম গৌরবের কথা নয়। ইহার নাম শীলভদ্র, সমতটের এক রাজার ছেলে। যুয়াংচুয়াং যখন ভারতবর্ষে আসেন, তখন তিনি নালন্দা বিহারের অধ্যক্ষ, বড় বড় রাজা, এমন কি সম্রাট হর্ষবৰ্দ্ধন পৰ্য্যন্ত, তাহার নামে তটস্থ হইতেন। কিন্তু সে–পদের গৌরব, মানুষের নহে। শীলভদ্রের পদের গৌরব অপেক্ষ বিদ্যার গৌরব অনেক বেশী ছিল। যুয়াং চুয়াং একজন বিচক্ষণ বহুদৰ্শী লোক ছিলেন। তিনি গুরুকে দেবতার মত ভক্তি করিতেন। তিনি বলিদা গিয়াছেন যে, নানা দেশে নানা গুরুর নিকট বৌদ্ধশাস্ত্রের ও বৌদ্ধযোগের গ্রন্থসকল অধ্যয়ন করিয়া, তাহার যে-সকল সন্দেহ কিছুতেই মিটে নাই, শীলভদ্রের উপদেশে সেইসকল সন্দেহ মিটিয়া গিয়াছে। শীলভদ্র মহাযান বৌদ্ধ ছিলেন, কিন্তু বৌদ্ধদিগের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সমস্ত গ্রন্থই তাহার পড়া ছিল । তিনি ব্রাহ্মণদের সমস্ত শাস্ত্র ও আয়ত্ত্ব করিয়াছিলেন। পাণিনি তাহার বেশ অভ্যাস ছিল এবং সে সময় উহার যে-সকল টকা-টিপ্পনী হইয়াছিল, তাহাও তিনি পড়াইতেন। ব্রাহ্মণের আদি গ্রন্থ যে বেদ, তাহাও তিনি যুয়াং চুয়াংকে পড়াইয়া দিয়াছিলেন। তাহার যেমন পাণ্ডিত ছিল, তেমনি মনের উদারতা ছিল। যুয়াং চুয়াংএর পাণ্ডিতা ও উৎসাহ দেখিয়া যখন নালন্দার সমস্ত পণ্ডিতবর্গ তাহাকে দেশে যাইতে দিবেন না স্থির করিলেন, তখন শীলভদ্র বলিয়া উঠিলেন, "চীন একটি মহাদেশ, যুয়াং চুয়াং ঐখানে বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম প্রচার করিবেন, ইহাতে তোমাদের বাধা দেওয়া উচিত নয়। সেখানে গেলে ইহার দ্বারা সদ্ধৰ্ম্মের অনেক উন্নতি হইবে, এখানে বসিয়া থাকিলে কিছুই হইবে না।" আবার যখন কুমাররাজ ভাস্করবর্শ্ব যুয়াং চুয়াংকে কামরূপ যাইবার জন্য বার বার অনুরোধ করিতে লাগিলেন এবং তিনি যাইতে রাজী হইলেন না, তখনও শীলভদ্র বলিলেন, "কামরূপে বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম এখনও প্রবেশলাভ করিতে পারে নাই, সেখানে গেলে যদি বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের কিছুমাত্র বিস্তার হয়, তাহাও পরম লাভ ” এইসমস্ত ঘটনায় শীলভদ্রের ধৰ্ম্মাহুরাগ, দূরদর্শিতা ও নীতিকৌশলের যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। [ ১৫শ ভাগ, ১ম খণ্ড T ১ম সংখ্যা ] র্তাহার বাল্যকালের কথাও কিছু এখানে বলা আবশ্বক। পূৰ্বেই বলিয়াছি যে, তিনি সমতটের রাজার ছেলে, তিনি নাকি ব্রাহ্মণ ছিলেন। বাল্যকাল হইতে র্তাহার বিদ্যায় অনুরাগ ছিল এবং খ্যাতি-প্রতিপত্তিও খুব হইয়াছিল। তিনি বিদ্যার উন্নতির জন্য সমস্ত ভারতবর্ষ ভ্রমণ করিয়া ত্রিশ বংসর বয়সে নালন্দায় আসিয়া উপস্থিত হন। সেখানে বোধিসত্ত্ব ধৰ্ম্মপাল তখন সৰ্ব্বময় কৰ্ত্তা। তিনি ধৰ্ম্মপালের ব্যাখ্যা শুনিয়া তাহার শিষ্য হইলেন এবং অল্প দিনের মধ্যেই ধৰ্ম্মপালের সমস্ত মত আয়ত্ত করিয়া লইলেন। এই সময় দক্ষিণ হইতে একজন দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত মগধের রাজার নিকট ধৰ্ম্মপালের সহিত বিচার প্রার্থনা করেন। রাজা ধৰ্ম্মপালকে ডাকাইয়। পাঠাইলেন । ধৰ্ম্মপাল যাইবার জন্য উদ্যোগ করিলেন। শীলভদ্র বলিলেন, “আপনি কেন যাইবেন ?" তিনি বলিলেন, “বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের আদিত্য অস্তমিত হইয়াছে। বিধৰ্ম্মীর চারিদিকে মেঘের মত ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। উহাদিগকে দূর করিতে না পারিলে সদ্ধৰ্ম্মের উন্নতি নাই ।” শীলভদ্র বলিলেন, “আপনি থাকুন, আমি যাইতেছি।” শীলভদ্রকে দেখিয়া দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত হাসিয়া উঠিলেন,—“এই বালক আমার সহিত বিচার করিবে ?” কিন্তু শীলভদ্র অতি অল্পেই তাহাকে সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত করিয়া দিলেন। সে শীলভদ্রের না যুক্তি খণ্ডন করিতে পারিল, না বচনের উত্তর দিতে পারিল, লজ্জায় অধোবদন হইয়া সে সভা ত্যাগ করিয়া গেল। শীলভদ্রের পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হইয়। রাজা তাহাকে একটি নগর দান করিলেন। শীলভদ্র বলিলেন, "আমি যখন কাষায় গ্রহণ করিয়াছি, তপন অর্থ লইয়৷ কি করিব ?" রাজা বলিলেন, “বুদ্ধদেবের জ্ঞানজ্যোতি ত বহুদিন নিৰ্ব্বাণ হইয়া গিয়াছে, এখন যদি আমরা গুণের পূজা না করি, তবে ধৰ্ম্ম কিরূপে রক্ষা হইবে ? আপনি অনুগ্রহ করিয়৷ আমার প্রার্থন আগ্রাহ করিবেন না।" তখন শীলভদ্র তাহার কথায় রাজী হইয়া নগরটি গ্রহণ করিলেন এবং তাহার রাজস্ব হইতে একটি প্রকাও সঙ্ঘারাম নিৰ্ম্মাণ করিয়া দিলেন। যুয়াং চুয়াং একজায়গায় বলিতেছেন যে, শীলভদ্র বিদ্যা, বুদ্ধি, ধৰ্ম্মানুরাগ, নিষ্ঠা প্রভৃতিতে প্রাচীন বৌদ্ধগণকে ছাড়াইয়া উঠিয়াছিলেন। বাঙ্গলার প্রাচীন গৌরব ു~~ഹ 6טאג তিনি দশ-কুড়িখানি পুস্তক লিখিয়াছিলেন। তিনি যে-সকল টীক। টিপ্পনী লিথিয় গিয়াছেন, তাহ অতি পরিস্কার ও তাহার ভাষা অতি সরল। অষ্টম গৌরব—বৌদ্ধ লেখক শাস্তিদেব আমি মনে করি যে, যিনি বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের কয়েকখানি খুব চলিত পুথি লিখিয়া গিয়াছেন, সেই মহাত্মা বাঙ্গালি ছিলেন। কিন্তু তারানাথ আমার বিরোধী। তিনি বলেন, শান্তিদেবের বাড়ী সৌরাষ্ট্রে ছিল। দুঃখের বিষয় এই যে, আমি শান্তিদেবের যে অমূল্য জীবন-চরিতথানি পাইয়াছি, তাহাতে কে তাহার জন্মভূমির নামটি কাটিয়া দিয়াছে।-- এমন করিয়া কাটিয়াছে যে, পড়িবার যো নাই। কিন্তু র্তাহার লীলাক্ষেত্র মগধের রাজধানী ও নালন্দা। তিনি যখন বাড়ী হইতে বাহির হন, তাহার মা বলিয়া দিয়াছিলেন, "তুমি মথুজ্ঞান লাভ করিবার জন্য মঞ্জুবন্ধু সমাধিকে গুরু করিবে ।” সৌরাষ্ট্রে মঞ্জুশ্রীর প্রাদুর্ভাব বড় শোনা যায় না। সেখানে বৌদ্ধধৰ্ম্মের প্রাদুর্ভাব বড় কম ছিল। এমন কতকগুলি বাঙ্গলা গান আছে, যাহার ভণিতায় লেখা আছে “রাউতু ভণই কট, ভূস্বকু ভণই কট।” এই রাউতু, ভূস্বকু ও শাস্তিদেব একই ব্যক্তি। আরও এক কথা, শান্তিদেব তিনখানি পুস্তক লিখিয়াছেন :-(১) স্বত্র-সমুচ্চয়, (২) শিক্ষাসমূৰ্চ্চয় ও (৩) বোধিচৰ্য্যাবতার। শেষ দুইখানি পাওয়া গিয়াছে ও ছাপা হইয়াছে। প্রথম খানি এখনও পাওয়া যায় নাই। কিন্তু ভুস্বকুর নামে আমরা আর একখানি বই পাইয়াছি, উপরের দুইখানির মত এইখানিও সংস্কৃতে লেখা, তবে মাঝে মাঝে বাঙ্গলা আছে। উপরের দুইখানির মধ্যেও আবার শিক্ষা-সমুচ্চয়ে অনেক অংশ সংস্কৃত ছাড়া অপর আর-এক ভাষায় লেখা। আরও কথ, একটি ভূস্বকুর গানে আছে,—“আজ ভুস্বকু তু ভেলি বাঙ্গালী । নিজ ঘরিণী চণ্ডালী নেলী।" আজ ভুমুকু তুই সত্য সত্য বাঙ্গালী হইয়াছিস ইত্যাদি। তেজুর গ্রন্থে লেখা আছে, শাস্তিদেবের বাড়ী জাহোর। জাহোর কোথায় জানি না, তবে উহার সন্ধান হওয়া অবশ্যক। নবম গৌরব—নাথ-পন্থ আমাদের দেশে এখন যে-সব যোগীরা আছেন, তাহাদের সকলেরই উপাধি নাথ। তাহারা বলেন, “আমরা