পাতা:প্রবাসী (পঞ্চবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] ভরিয়া ভোগ করুক। আমার পক্ষে কোনো-প্রকার দুখ-ভোগের অস্তিত্ব নাই, শান্তিও নাই।” “জীবন দুঃখময়, মৃত্যুই জীবনের নিয়তি।”—স্তোপেনহাউবুও এই কথাই বলিয়াছেন । ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, রাজনীতি,এগুলি দৰ্শন-বিজ্ঞানের মাঝে পড়ে এবং এগুলি সত্য-মিথ্যায় পূর্ণ। দর্শনেবিজ্ঞানে জীবনের যে-প্রশ্নের উত্তর মিলিল না, ঐগুলিতে সে-উত্তর মিলিবার নয়। লস্টয় অবশেষে নিঃসন্দেহ বুঝিলেন,যে-প্রশ্ন সৰ্ব্বাপেক্ষ সরল মনে হইয়াছিল, বস্বত: তাহাই সৰ্ব্বাপেক্ষা জটিল, তাহারই উত্তর কখনও মিলে নাই, হয়ত মিলিবে না। উত্তর না পাইলে বাচিয়া থাকা দুরূহ, কিন্তু তবুও বাচিয়াই থাকিতে হইবে, কারণ আত্মহত্যাই শ্রেয় বলিয়া জানিয়া ও সে-কর্য্যে অগ্রসর হইতে সাহস হয় না। চারি জাতির লোক আছে । প্রথম যাহারা জীবনের সম্বন্ধে ভাবে নাই, যাহাদের জীবনে জীবন-সম্বন্ধীয় পরম প্রশ্নটি উত্থাপিত হয় নাই তাহারা অজ্ঞ, তাহারা অবোধ, তাহারা মূঢ় এবং জীবনে সুখ-দুঃখ উভয়ের অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও তাহারা স্বর্থীই বলিতে হইবে । তাহারা মৃত্যুকে প্রতিনিয়ত দেখিতেছে, কিন্তু মৃত্যুর সম্বন্ধে ভাবে না, মৃত্যুকেই আপনার পরিণাম বলিয়া বুঝিয়া দেখে না । দ্বিতীয় জাতির লোক জীবনের পরিণাম বুঝিয়াছে, জীবনের কথা ভাবিয়াছে, কিন্তু কোনো মীমাংসায় না পৌছিয়া warests of Totto, “Fat, drink and be merrywhile you live* "যাবজ্জীবেৎ স্বথং জীবেং, ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ । ভস্মীভূতস্ত দেহস্ত পুনরাগমনং কুতঃ ?” তৃতীয় জাতির লোকের জীবনের কথা ভাবিয়াছে, বুঝিয়াছে এবং প্রকৃত বুদ্ধিমানের মতন পথটি লইয়াছে। তাহারাই সাহসী, তাহারা আসল ব্যাপারটি বুঝিয়া ভরা যৌবনেই আপনার হাতে আপনার জীবনটি শেষ করিয়া দিতে কুষ্ঠিত হয় না, তাহার স্বচ্ছন্দে আত্মহত্যা করে ; বর্তমান যুগে তাহাদের সংখ্যা বাড়িয়া যাইতেছে। টলস্টয়ের মতে র্তাহার তৃতীয় পন্থা লওয়াই উচিত ছিল, কিন্তু সাহসের অভাবে তিনি শেষ পথেরই পথিক হইয়াছেন। সলোমন, খোপেনহাউর এবং কেন জানি না ٩ =سسو88 টলস্টয়ের আত্মকথা అశ్రీ) বুদ্ধদেবকে পৰ্য্যন্ত তিনি সেইদিকেই টানিয়াছেন। মরিতে সাহস হয় না, তাই সকলের অপেক্ষা অধিক জানিয়াশুনিয়া, অধিকতর ভাবিয়া-বুঝিয়া, তবুও বাচিয়া থাকা, ইহাই তাহাদের জীবন । হিংস্র জন্তুতে তাড়া করিয়াছে, অতল কুপে পড়িলাম, কুপের তলে একটা রাক্ষস মুখ ই করিয়া আছে। পড়িতে-পড়িতে অসহায়ের অবলম্বন বলিতে মিলিল একটি কাটা-গুল্ম, পরে দেখি তাহার একদিকে একটি শ্বেত মূষিক, অপরদিকে এক কৃষ্ণ মূষিক । শিকড় কাটিয়া ফেলিতেছে, জীবনের পরম দুঃখের যেটুকু আয়ু তাহাও দিন ও রাত্রি প্রতিনিয়তই হরণ করিতেছে। ইতিমধ্যে দেখিলাম, ঐ গুন্মের একটি পাতায় দুইৰিন্দু মধু, তখন তাহাই লেহন করিয়া লইতেছি, তৃষ্ণ মিটে কি না, রস মিলে কি না কে জানে ? কিন্তু জীবনের ছুটি বিন্দু মধুর লোভ পরম সঙ্কটেও ত্যাগ করিতে পারি না। এইরূপে টলস্টয়ের অস্বস্তির জীবন কাটিতে লাগিল ; দিনরাত্রি আসিতে-যাইতে লাগিল। তখন তিনি ভাবিলেন, “কিন্তু তাহা হইলে আীে এজগৎ টিকিয়া আছে কিরূপে ? কেবল আমি বুঝিয়াছি আর খোপেনহাউর ও সলোমন বুঝিয়াছেন, এমন নাও হইতে পারে। জগতের অনেক লোকেই জীবনের তত্ব বুঝিয়াছে, কারণ জীবন যে তাহাদেরও, কিন্তু তবুও ত জগৎ টিকিয়া আছে এবং আরো বহু-বহু কাল টিকিয়া থাকিবার লক্ষণ দেখাইতেছে।.তবে বিজ্ঞান বা দর্শন পুস্তকের পাতায় নয়, কিন্তু নিখিল মানব-জীবনের পাতাতেই জীবনের তত্ত্ব অধ্যয়ন করিতে হইবে। তাহা হইলে হয়ত মীমাংসা পাওয়া যাইবে।” এইরূপে নূতনভাবে অহুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইয়া টলস্টয় অবাক হইয় দেখিলেন, সত্যই নিখিল জনসাধারণ জীবনের তত্ত্ব বোঝে এবং তাহারা জীবন লইয়। তবুও টিকিয়া আছে। কিসে তাহার টিকিয়া আছে, সেও এক পরম আশ্চৰ্য্য ব্যাপার। তাহারা ধৰ্ম্ম-বিশ্বাসের (faith) দ্বারাই টিকিয়া আছে, সেই বিশ্বাসই তাহাদিগকে জীবনের অর্থ বুঝাইয়া দিয়াছে, যাহা টলস্টয় নিখিল দর্শনশাস্ত্র খুজিয়াও বাহির করিতে পাবিলেন না । এই ধৰ্ম্মবিশ্বাসকে (faith) তিনি আপনার সমশ্রেণীর সমাজে দেখিয়াও দেখেন নাই। সে-সমাজে বিশ্বাস-বিশ্বাসই