পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

J বেশাখ দেবেন ? আমাকে কেউ দিত ত আমি সারা পৃথিবী ঘুরে আসতাম।” তপন হাসিয়া বলিল, “বাব টাকা না দিলে কি আর যাওয়া যায় না ? আমি নিজেই না হয় দেব। মাটি কুপিয়ে একলা মানুষের খরচ কি আর জমাতে পারব না ?” শিবুর আত্মসম্মানে ঘা লাগিল, বলিল, “অল রাইট, আমিও মাটি কুপিয়ে টাকা রোজগার করব । এই পড়াট] শেষ হোক না, দেখুন ঠিক আপনার চেলা হব।” স্বধীন্দ্র বাবু এতক্ষণ নীরবেষ্ট দলের সঙ্গে ঘুরিতে ছিলেন, তিনি বলিলেন, “গুটি কতক মেয়েকেও তোমার চেলা ক'রে নাও মা তে তপন ; মেয়ের যদি কাজে না নামে ত ময়েদের টেনে তুলবে কে ?” হৈমন্ত্রী ও সুধা সা গ্রহে তপনের মুথের দিকে তাকাইল । সুধ কিছু বলিতে পারিল মা ; হৈমন্তী বলিল, “আমার পূড় শেষ হয়ে গেলে আমি আপনার গ্রামে কাজ করতে আসিব ।” মহেঞ্জ বলিল, “আমাদের দেশ এখনও এতটা উন্ন হয় নি যে ঘর ছেড়ে অল্পবয়স্ক মেয়ের বাইরে কাজ করতে এলে সেটাকে ভাল চোখে দেখবে । তোমার বাবা কখনই এ সব পঢ়ুম করবেন ন; * マリ হৈমন্থী বলিল, “যখন যথেষ্ট বড় হব, তখন ভাল কাজে যদি বাব বাধা দেন, তাহলেণ্ড কি বাবার কথা মেনেই চলতে হবে ?” মহেন্দ্র বলিল, “অবশু হবে । তুমি যে অন্ন বস্ত্র সব কিছুতেই তার মুখাপেক্ষী ।” হৈমন্থী বলিল, “আচ্ছা, দিন ਬਿ, দেখা যাবে । বাবা বাধা দেবেন, আগে থেকে ধরে নিতে চাহ না, আর দিই দেন তখন অন্য পন্থা আছে কি না সেই দিমই ভাবব ।” মহেন্দ্র সুধাকে জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি কি বলেন ?" তপমও যেন স্বধার উত্তর শুনিবার জন্য সরিয়া তাহার গছে আসিয়া দাড়াইল । স্বধার মুখ লাল হইয়া উঠিল। স একটু খামিয়া একটু ঘামিয়া অনেক কষ্টে বলিল, “আমার এখনও জবাব দেবার সময় আসে নি। আমি এই পৰ্য্যন্ত লভে পারি যে ঘরে বসে যথাসাধ্য এই কাজে আমি আপনাদের সহায় হ'তে চেষ্টা করব ।”

  • *.

অলখ-ঝেণরণ ५ جنسb তপন যেন একটু নিরাশ ভাবে অন্যদিকে তাকাইল । স্বধা ব্যথিত হইয়া বলিল, “আমার ঘরের কৰ্ত্তব্য বড় কি বাইরের কৰ্ত্তব্য বড়, আমি এখনও ভাল ক'রে ঠিক করতে পারি না। মন ত যুক্তিতর্কের ধার ধারে না, মন এখনও ঘরকেই বড় ক'রে রেখেছে।” e স্বধীন্দ্র বাবু বলিলেন, “তুমি খুব ওজন ক'রে কথা বল দেখছি । মেয়েদের পক্ষে ঘরের কৰ্ত্তব্য ফেলে বাইরে চলে আসা সহজ নয়। তুমি যে উৎসাহের মুখে সে কথাটা ভুলে বড় কথা বলতে চেষ্টা কর নি, দেখে আশ্চৰ্য্য লাগছে।” মহেন্দ্র বলিল, “কিন্তু ঘরকে ফেলে আসবার শক্তিও এক দল মেয়ের থাক চাই, না হ’লে দেশকে দেখবে কে ? যুদ্ধের সময় স্বামী পুত্রের কৰ্ত্তব্য ভুলে যেমন পুরুষকে মরণের মুথে এগিয়ে যেতে হয়, আমাদের এই দুৰ্গতির দিনে মেয়েদেরও তেমনি ক’রে ঘর তুলে পথে নেমে আসতে হবে ।” হৈমন্ত্ৰী বলিল, “কথাটা সত্যি। ঘরকে ভোলার সাধনাও আমাদের করা দরকার । দেখি আমি পেরে উঠি কি না ।” বাগানের পর তিন-চারটা পুকুরের মাঝখানে বঁাকা বাকী আলের মত পথ দিয় তাহারা ছেলেদের কুস্তির আখড়া দেখিতে চলিল । পুকুরগুলা এত কাছে কাছে যে মাঝের পথটুকু কাটিয় দিলেই এক হইয়া যায়। পথে পাশাপাশি দুই জন চলা যায় না, একের পিছনে এক করিয়া চলিতে হয় । পুকুরের জলে মেয়ের বাসন মাঞ্জিতে, কাপড় কাচিতে, গা ধুইতে নামিয়াছে, আবার কেহ ঘড়া করিয়া সেই জলই ঘরে তুলিয়া লইয়া যাইতেছে। নিখিল বলিল, “আমাদের দেশে মানুষ এত মরে কেন না ভেবে, এত্ততেও বেঁচে আছে কি ক'রে তাই ভাব উচিত। দেখছ ত কি থাচ্ছে আর কিসে মুখ ধুচ্ছে!” তপন বলিল, “তৰুত এ গ্রামে থাবার জলের 'बामद्र। একটা আলাদা পুকুর রেখেছি।” আখড়ার কাছে তেঁতুলতলায় বাধানো বেদীতে পাচ বৎসর হইতে পচিশ ত্রিশ বৎসরের নানা বয়সের মানুষ কাজকৰ্ম্ম ফেলিয়া জটলা পাকাইতেছে, আর গল্প করিতেছে, কেহ বা বসিয়া অবাক হইয়া শুধু শহরের মেয়ে দেখিতেছে।