পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২s প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড আশ্চর্ঘ্যের বিষয় এই যে, ভারতের ক্ষঞ্জিয় রাজার পরম্পরের সহিত যুদ্ধ-বিগ্রহ ও জয়পরাজয় লইয়াই শত শত বৎসর কাটাইয়া দিলেন, অথচ একজন ক্ষত্রিয় বীরও আপনার বিজয়বাহিনী লইয়া বহি ভারতে বিশ্বজয়ে বাহির হওয়া দূরে থাকুক, ভারতের সীমারেখাটি পৰ্য্যস্ত অতিক্রম করিলেন না। অবশ্য ইতিহাস অনুসন্ধান করিয়া এই সাধারণ উক্তির দুই চারিটি ব্যতিক্রম নির্দেশ করা যাইতে পারে। দৃষ্টাস্ত স্বরূপ কাশ্মীররাজ মুক্তাপীড় ললিতাদিত্যের (খৃঃ ৭৩৩-৬৯ ) বিজয়-অভিযানের কথা উল্লেখ করা যায়। তিনি তুর্থার বা তুরস্করাজ্য এবং তিব্বতের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিয়াছিলেন ; কিন্তু কতখানি স্বীয় রাজ্যরক্ষার অমুরোধে ও কতথানি বিজয়-গৌরব লাভের অভিলাষে তাহার এই সমরাভিযান, ইহা নিশ্চয় করিয়া বলা যায় না। কাশ্মীরের ইতিহাস ভারতবর্ষের সাধারণ ইতিহাস হইতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও স্বতন্ত্র ; এবং কাশ্মীর ভারতের এক সীমা-প্রাস্তে অবস্থিত ও প্রায় তিন দিকেই বহির্ভারতীয় বিভিন্ন রাজ্যের দ্বারা বেষ্টিত । স্বতরাং কাশ্মীররাজ কর্তৃক দুই এক বার বহির্ভারতে যুদ্ধযাত্রা ভারতবর্ধের সাধারণ ইতিহাসের ব্যতিক্রম বলিয়াও সঙ্গতরুপে ধরা যায় না । এই গেল স্থলপথের কথা । জল-পথেও যে ভারতবর্ষ দুই এক বার রাজ্য-বিস্তারের প্রয়াস করে নাই তাহা নয় । এই ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে তামিল দেশের চোল রাজাদের কথা উল্লেখ করিতে পারি। তামিল-সম্রাট প্রথম রাজেন্দ্র চোলের (খৃঃ ১০১৮-৩৫ ) নৌবাহিনী বঙ্গ সাগর অতিক্রম করিয়া নিম্ন ব্রহ্মদেশের অন্তর্গত পেগু ও মার্ভাবান নামক স্থান দুইটি তামিল সাম্রাজ্যের অন্তভূক্ত করিয়া লইয়াছিল ; আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জও তামিল নৌবাহিনী কর্তৃক অধিকৃত হইয়াছিল। তথাপি স্থল-পথেই হোক বা জল-পথেই হোক ভারতীয় সৈন্যদল কর্তৃক ভারতবর্ষের বাহিরে রাজ্যজয়ের দৃষ্টান্ত ইতিহাসে নাই বললেই চলে। ভারতীয় রাজার। চিরকালই পরস্পরের সহিত প্রতিদ্বন্দ্বি ভায় ও যুদ্ধ-বিগ্রহে অৰ্থাৎ আত্ম-কলহেই ব্যাপৃত ছিলেন, এ কথা অনায়াসেই বলা যায়। আমি জানি, এইখানে অনেকেরই মালয়-উপদ্বীপ ( বৌদ্ধ মহানাবিক বুদ্ধগুপ্ত ), কাম্বোজ ( প্রোণপুত্র অশ্বখামার বংশোদ্ভব শৈব ধৰ্ম্মমহারাজগণ), বর্ণিও (রাজা মূলবর্ধনু ), ঘবদ্বীপ, স্বমাত্রী ( ঐবিজয়ের শৈলেন্দ্র রাজবংশ ), এবং মধ্য-এশিয়া প্রভূতি স্থানে ভারতীয় উপনিবেশ-সমূহের কথা মনে হইবে । সত্য বটে এইসকল স্থানে ভারতীয় হিন্দুর উপনিবেশ স্থাপন ও আধিপত্য লাভ করিয়াছিল এবং তথায় নুতন নূতন রাজবংশেরও উৎপত্তি হইয়াছিল । কিন্তু এই সকল দেশ কোনও ভারতীয় রাজশক্তির দ্বারা বিজিত হয় নাই ;. ভারতীয় জনসাধারণ বাণিজ্যের জন্যই হোকৃ, ধৰ্ম্মপ্রচারের, উদ্দেশ্যেই হোক অথবা অন্ত ঘে-কোন কারণেই হোক, ঐসকল স্থানে উপনিবেশ স্থাপন করিয়াছিল এবং সেই স্বত্রেই সে-সকল স্থানে তাহাদের আধিপত্যও স্থাপিত হইয়াছিল। ফলে তথায় নব নব রাজবংশেরও আবির্ভাব হইয়াছিল । কিন্তু এইসকল ঔপনিবেশিক রাজ্যের উৎপত্তি, স্থিতি ও বিনাশ ভারতীয় ইতিহাস হইতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও স্বতন্ত্র ভাবে সংঘটিত হইয়াছিল ; ভারতীয় রাজশক্তির সহিত ইহাদের কোন সংস্রব ছিল এমন প্রমাণ, পাওয়া যায় না। স্ববর্ণ দ্বীপের শৈলেন্দ্রবংশীয় নরপতি, শ্ৰীবালপুত্র দেব খৃষ্টীয় নবম শতাব্দীতে নালন্দায় একটি বৌদ্ধবিহার নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন এবং উiহারই অমুরোধে বাঙলার তৎকালীন পাল রাজা দেবপাল উক্ত বিহারবাসী ভিক্ষুসঙ্ঘের ব্যয়নিৰ্ব্বাহের জন্ত পাচটি গ্রাম দান করিয়াছিলেন, এইরূপ দুই-একটি দৃষ্টাত্ত দেওয়া যাইতে পারে । কিন্তু এইরূপ অতি সামাঙ্ক সম্পর্ককে রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বলিয়া গণ্য করা যায় না । তাহt. ছাড়া এইসকল দেশ সভ্যতায় ও শক্তিতে অপেক্ষাকৃত অবনতই ছিল ; এৰং তথা উপনিবেশ ও হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করিতে ভারতবাসীদের যে খুব বেশী যুদ্ধবিগ্রহ ও সামরিক শক্তি প্রয়োগ করিতে হইয়াছিল, এমন কোন প্রমাণ পাই না । স্বতরাং এইসমস্ত ঔপনিবেশিক রাজ্য-সমূহকে কিছুতেই দিগ্বিজয়লিপ্ত ভারতীয় রাজশক্তির বিজয়-প্রচেষ্টার ফল বলা যাইতে পারে না। বস্তুত ভারতবর্ষের ইতিহাসের একটি বিশেষত্বই এই যে, এখানকার প্রবল প্রতাপশালী সম্রাটগণেরও দিগ্বিজঃ