পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৬ প্রবাসী—আষাঢ়, ১ওe৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড, ভবানী বলিল, “ত হোক, ও কি আর এইটুকুই থাকবে নাকি ? বড় হয়ে পরবে। তোমার শাশুড়ী কেমন আছে ?” শোভাবতী মুখ ঘুরাইয়া বলিল, "আছে একরকম ভালই, তবু কাউকে বাড়ী থেকে নড়তে দেবেন । তাকে না ব’লেই এক রকম পালিয়ে এসেছি, গিয়ে গাল খাব এখন "* থোকা চারিদিকের আনন্দ কোলাহল সম্পূর্ণ উপেক্ষ করিয়া নিশ্চিস্ত মনে ঘুমাইতে লাগিল। দুপুরের দিকে তাহার দর্শনপ্রার্থীর দলও কমিয়া আসিল । মিসেস মিত্র স্নানাহার সারিয়া, এক মুখ পান চিবাইতে চিবাইতে আসিয়া দর্শন দিলেন। ভবানীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি গো এখনও নাওয়া খাওয়া হয়নি নাকি ? বড় যে শুক্নে দেখাচ্ছে। পো-পোয়াতি ভাল ত ?" ভবানী বলিল, “ভালই আছে মা। এতক্ষণ লোক জনের ভীড়ে নাইবার খাবার সময় পাইনি।” তারপর ফিশ ফিশ করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “খুী কেমন আছে ?” মিসেস মিত্র বলিলেন, “দিব্যি ঘুমচ্ছে, বেশ ষ্ট্রং বাচ্চ, তার জন্যে কোনো ভাবনা নেই। গিয়েই রাধুনী মাগীকে বিদায় করেছি, এরপর আর কাকপক্ষীও জানবেন । চল এখন রুগীকে দেখি ।” রোগিনী ভালই ছিল, তাহাকে বেশী কিছু দেখিতে হইলনা । খানিকক্ষণ গল্পস্বল্প করিয়া লেডী ডাক্তার বিদায়ু লইতে উঠিলেন। ভবানী তাহাকে পাশের ঘরে লইয়া গিয়া বলিল, “বাকি টাকাও নিয়ে যাও মা, দেন। পাওনা শিগগির শিগগির চুকিয়ে নেওয়া ভাল।” বলিয়া সে টাকা বাহির করিতে লাগিল । মিসেস মিত্র ইতস্তত: করিতে লাগিলেন । তাহার পর বলিলেন, “আচ্ছা দাও বাছ, মেয়েটার জন্তে নিলুম। তা না হ’লে আমি আর পাপের বোঝা বাড়াতুমন। আমি ত বড় মাতুষ নই, একটা বাচ্চ ভাল ক’রে মানুষ করতে খরচ কত ।” ভবানী কঁাদিতেছিল, বলিল, “রাগে আর লোভে প’ড়ে মহাপাপ করেছি মা, রাজার মেয়েকে পথে বসিয়েছি । তার যাতে কোনদিক দিয়ে কষ্ট না হয়, তুমি দেখো। টাকার জন্তে ভেবোন, যত টাকা লাগে আমি যেমন ক’রে পারি জুটিয়ে দেব ।” মিসেস মিত্র বলিলেন, আর বাছ, কেঁদে কি হবে ? যা হবার তা হয়ে গেছে। অযত্ব অনাদর কিছুই হবে না, যতদিন আমি বেঁচে আছি। তারপর ভগবানের ইচ্ছা ।” তিনি টাকা লইয়া বিদায় হইয় গেলেন। ভানুমতী ভবানীকে ডাকিয়া বলিল, “হ্যারে, সবাই চ’লে গেল নাকি ? মেজদি কোথায়, ডাকৃনা একটু গল্প করি ।* ভবানী বলিল, “বেশী কথা তোমার এখন না বলাই ভাল বাছা । আচ্ছ, দিচ্ছি ডেকে শোভাকে ।” শোভাবতী আসিতেই ভামু বলিয়া উঠিল, “আচ্ছা, থোকার কি নাম হবে ভাই ? খুব স্বন্দর দেখে একটা নাম বল না ?” শোভাবতী বলিল, “রোস, একটু ভেবেত বলতে হবে ? তোর শশুরবাড়ীর ধাচের নাম রাখবি নাকি ?” ভানুমতী ব্যস্ত হইয়া বলিল, “না, ন, ও সব মেয়েলী নাম, আমার একটুও ভাল লাগেনা । ছেলের নাম হবে ঠিক ছেলের মত। বড় হ’য়ে ধেন লোকের কাছে নাম বলতে লজ্জ না পায়।” শোভাবতী বলিল, “তবে ঘটোৎকচ কি বীরবাহ এই রকম একটা রাখ কিছু। মেঘনাদও রাখতে পারিস ইচ্ছা করলে । ছেলের যা গগা হয়েছে, এনামটা দিব্যি মানবে I* ভানুমতী বলিল, “যা ষা, সব তাতে চালাকি ] কেন শুনতে স্বন্দর অথচ বেশ ছেলের মত নাম ভূভারতে নেই নাকি ? আচ্ছা বেশ, বীরবাহু না হোক, আমার ছেলের নাম রইল সুবীর ।” শোভাবর্তী বলিল, “বেশ ত, মন্দ কি ? তা বীরপুরুষ যে ভয়ানক চেঁচাচ্ছে, ওকে একটু ঠাণ্ড কর।” কয়েকট দিন কাটিয়া গেল। খবর পাইয়া প্রমদারঞ্জন রোগঞ্জীর্ণ শরীর টানিয়া কোন গতিকে কলিকাতায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। একটি আকৃবরী মোহরের মালা দিয়া শিশুর মূখ দেখিয়া, তাহাকে কোলে লইয়া অনেকক্ষণ বসিয়া রহিলেন। র্তাহার চোখে জল চকু চকু