পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

woole প্রবাসী—আষাঢ়, ১৩৬৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড ( & ) চাকরী উপলক্ষে ১৫২০ বৎসর নানাস্থানে যাতায়াত ৰরিতে হইয়াছিল। অনিয়মিত চাকরী করিতে হইত বলিয়া সঙ্গীতচর্চ নিয়মিতভাবে হইতে পারে নাই। কলিকাতায় যে দুই তিন বার ছিলাম তাহাতে সেখানে ভবানীপুর, বহুবাজার, ইটালী, সিমল। প্রভৃতি স্থানে মধ্যে মধ্যে গান-বাজন হইয়াছিল। তখন দুই চারি জন ভাল গায়ক এবং মৃদঙ্গী এমন দেখ। গিয়াছিল যাহারা স্বরলিপির গায়ক ছিলেন না। তখন হারমোনিয়ম যন্ত্রটি মাত্র দুই এক স্থানে দেখা দিতেছে, কিন্তু স্বরলিপি প্রথাও আরম্ভ হইয়াছে। ওস্তাদের যেমন গুরুমুথে শিক্ষ। করিয়াছেন সেইরূপ গান করেন ; স্বরলিপি দেখিয়া কেহ গান করেন না। কলিকাতা হইতে মজঃফরপুরে আসিয়া স্বরলিপির প্রাধান্ত দেখিলাম। এ স্থানের একজন জমিদার প্রযুক্ত চারুচরণ মুখোপাধ্যায় উক্ত স্বরলিপির বড়ই পক্ষপাতী। তিনি স্বরলিপি করিয়া গান করিতে পারিতেন ; কৃষ্ণধনবাবুও ঐরূপ ছিলেন, কিন্তু তিনি হারমেনিয়ম বাজাইতে পারিতেন না । চারুবাবু হারমোনিয়মে সেইগুলি নকল করিয়া লইতেন, পরে এস্রাজে তুলিতেন। আমার নিকট হইতে প্রায় একশত ধ্রুপদ গান স্বরলিপি করিয়া শিক্ষা করিয়াছিলেন ; গtiহতেও পারিতেন কিন্তু তাহার পুস্তক দেখিয়া কেহ ঐগুলি শিক্ষা করিতে পারে নাই। যে বিদ্য। সাধনসাপেক্ষ, সাধন করিলেও যে সকলেই সফলমনোরথ হইবেন তাহা নহে, সেই বিদ্য পুস্তক দেখিয়া শিক্ষা করা যায় না। এসম্বন্ধে আমি চারুবা বুকে বহু প্রকারে বুঝাইয়াছিলাম, কিন্তু তিনি বুঝিয়াও পুস্তকে ছাপাইবার লোভ সংবরণ করিতে পারেন নাই। তিনি বহু অর্থ ব্যয় করিয়া শিক্ষণ করিয়াছেন, কিন্তু কাহাকেও শিক্ষণ দিতে সমর্থ হন নাই । বোধ হয় তাহার স্বরলিপি-পুস্তক বৃথাই হইল। মজঃফরপুর হইতে কাশীধামে চাকুরীর শেষ কয়েক বৎসর কাটাইলাম। মনে করিয়াছিলাম যথাসময়ে চাকুরী হইতে অবসর লইয়া সঙ্গীত-চর্চ। উত্তমরূপে করিব এবং ছুই একটি ছাত্ৰ তৈয়ার করিব, কিন্তু শারীরিক অস্থস্থত। বশতঃ পরিশ্রমে অসমর্থ হওয়ায় তাহ হইল না। ১•॥১৫ বৎসর কঠোর পরিশ্রম করিয়া যাহা শিক্ষা করিয়াছি তাহ। পুস্তকাকারে প্রকাশ করিব স্থির করিয়া “স্বরলিপি-সংগ্রহ* পুস্তক লিখিতেছি এমন সময়ে শুনিলাম কাশীতে “সঙ্গীত মহাসম্মেলন” হইবে । শুনিয়া আনন্দ হইল বটে, কিণ্ড তৎক্ষণাৎ বরোদ ও দিল্লীর সভার কথা মনে হওয়াতে সম্মেলন সভা একটা বাহ আড়ম্বর মাত্র মনে হইল। বন্ধুবান্ধবদিগের মধ্যে কেহ কেহ আমাকে সঙ্গীত সম্বন্ধে কিছু লিখিবার বা বলিবার নিমিত্ত অনুরোধ করায় আমি একটি ছোট লেখা সভার কর্তৃপক্ষকে পাঠাইয়ু দিলাম। কিন্তু তাহদের মধ্যে কাহারও কাহার ও মনোনীত ন! হওয়ায় উক্ত লেখাটি (স্বরলিপি প্রথায় বিরোধী ) সভাস্ক পঠিত হয় নাই। আমি উহা পুস্তকাকারে “প্রাচ্য সঙ্গীততথ্য” নামে সাধারণকে জ্ঞাত করিয়াছি। কর্তৃপক্ষের} হিন্দু-সঙ্গীতকে ইংরাজী ছাচে ঢালাই করিতে চাহেন। তাহাতে যে আমাদের সামগ্ৰীটির স্বরূপ পরিবর্জিত হইতেছে তাহ কেহ দেখিয়াও দেখিতে ছেন না। অামার, বক্তব্যের সারাংশ এই যে, স্বরলিপির দ্বারা আমাদের সঙ্গীতের আসল রূপটি প্রকাশ হইতে পারে না এবং বাহী রক্ষা করা যাইতে পারে তাহা কাগজে কলমে থাকিলেও কণ্ঠে কেহ ঠিক বাহির করিতে পারেন না। প্রথমে ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী, পরে কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাহার পরে চারুচরণ মুখোপাধ্যায় এবং অন্যান্য অনেকে স্বরলিপি দ্ব র নিজেদের শিক্ষার উপায় করিয়াছেন বটে, কিন্তু অন্য কেহ সে উপায় অবলম্বনে কৃতকাৰ্য্য হইয়াছেন বলিয়া মনে হয় না। গুরুহীন বিদ্য। কখনো হইতেই পারে না এবং স্বরলিপিকর্তাগণ অত্যাবগুকীয় পরিশ্রম ও সাধনার ( গুরু সমক্ষে এবং স্বাধীনভাবে ) লাঘব করিবার তথাকথিত একটি উপায় বাহির কবিয়া ধ্রুপদের ধ্বংস করিবার উপায় বাহির করিয়াছেন ; এই অামারু ধারণ।। কাশীতে মহাসম্মেলনের সময় পণ্ডিত বিষ্ণুনারাংশ ভাতখণ্ডে মহাশয় আসেন এবং আমার নিকট চারখানি ধ্ৰু পদ ( চারি রাগের ) স্বরলিপি দ্বারা শিক্ষা করেন । আমি তাহাকে গান করিতে বলায় তিনি “পরে হইবে।” বলিয়া চলিয়া যান। পরে তিনি অনেকবার এদিকে