পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] চণ্ডীদাস-গণ 8\సి সহিত দ্বিজ চণ্ডীদাসের ভণিতায় উল্লিখিত আছে। এইসকল ঘটনা দৃষ্টি আমাদের ইহাও সন্দেহ হয় যে, দীন চণ্ডীদাসের অনেক পদ দ্বিজ চণ্ডীদাসের ভণিতায় পরিবৰ্ত্তিত হইয়াছে। কাজেই এই দীন চণ্ডীদাস সম্বন্ধে অমুসন্ধান না করিয়া আমরা দ্বিজ চণ্ডীদাস সম্বন্ধে শেষ কথা বলিতে পারিতেছি না। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৮৯ নম্বরের পুথিতে দীন চণ্ডীদাসের রচিত একথান। গীতি-কাব্যের ২১ পত্র সংগৃহীত আছে। ইহার বিস্তৃত বিবরণ আমরা সাহিত্য পরিবদের মাসিক অধিবেশনে পাঠ করিয়াছি, এবং তাহা পরিষদ পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছে। এইস্থামে ঐ কাব্যের অতি সংক্ষিপ্ত পরিচয় মাত্র প্রদত্ত হইল । তাহাতে প্রায় ৬০টি পদ আমরা পাইয়াছি। ঐ ২১ পত্রের মধ্যে ৭৫০ নম্বরের পত্রে ২ • • ১ সংখ্যক পদ পাওয়া যায়। কাজেই বুঝিতে হইবে যে, এই দীন চণ্ডীদাসের একমাত্র এই কাব্যখানিতেই যত পদ আছে, তাহা চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতির নামে প্রকাশিত পদাবলীর সংখ্যার প্রায় সমান । উক্ত ৬৫টি পদের মধ্যে কয়েকটি পদে "দিন চণ্ডীদাস” “দিনখিন চণ্ডীদাসের"ভণিতা দৃষ্ট হয়,কিন্তু “বড় চণ্ডীদাস” কি “দ্বিন্ধ চণ্ডীদাস,” ভণিতাযুক্ত পদ, একটিও পাওয়া যায় না, এবং কোথাও বাসলীর নাম উল্লেখ করা ভণিতা নাই। এইসকল কারণে আমরা বলিতে বাধ্য হইতেছি যে, দীন চণ্ডীদাস বাসলীগণের বড়ু চণ্ডীদাস হইতে ভিন্ন ব্যক্তি । নরোত্তম বিলাসে নরোত্তম ঠাকুরের চণ্ডীদাস নামে এক শিষ্যের নাম পাওয়া যায়। র্তাহার সম্বন্ধে উক্ত গ্রন্থে লিথিত আছে— জয় চণ্ডীদাস যে মণ্ডিত সৰ্ব্বগুণে । পাষণ্ডী থগুনে দক্ষ, দয়া অতি দীনে। এই চণ্ডীদাসই যদি দীন চণ্ডীদাস হন, তাহা হইলে আমরা দেখিতেছি যে, বড়ু চণ্ডীদাসের অনেক পরে তিনি জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। ই হার পদগুলি পাঠ করিয়াও আমাদের এই ধারণ হয় যে, তিনি পরবর্তী কালেরই লোক । কিন্তু দীন চণ্ডীদাস ষিনিই হউন না কেন, তিনি যে শক্তিশালী লেখক ছিলেন তাঁহাতে অকুমাত্র সন্দেহ নাই । যে ৬০টি পদ আমরা পাইতেছি, তাহার একটি পদ চণ্ডীদাসের পদাবলীতে দ্বিজ চণ্ডীদাসের ভণিতায় উদ্ধৃত হইয়াছে। কৃষ্ণের বংশীধ্বনি শ্রবণ করিয়া ব্ৰজদেবীগণ রাস উৎসবে যোগদান করিবার জন্য যে ভাবে ছুটিয়াছিলেন তাহার বর্ণনা পদাবলীর ৩৯৩ নম্বরের পদে এই ভাবে রহিয়াছে— কেহ বা আছিল ছুঞ্জ আবর্তনে চুলাতে রাখি বেশালি। ত্যজি আবর্তন হই আগুয়ান ঐছন সে গেল চলি । কেহ শিশু লয়ে কোলেতে করিয়ে দুগ্ধ করায় পান। শিশু ফেলি ভুমে চলি গেল ভ্ৰমে শুনি মুরলীর গান। ইত্যাদি প্রায় এইরূপেই এই পদটি আমাদের দীন চণ্ডীদাসের পুথিতে পাইতেছি । ইহাতে এই সন্দেহটাই আমাদের মনে উঠিতেছে, যে, দীন চণ্ডীদাসের পদ লইয়াই দ্বিঙ্গ চণ্ডীদাসের স্বষ্টি হইয়াছে। যে কবির দুই হাজারের বেশী পদের সন্ধান আমরা একখানা পুথিতেই পাইতেছি, তাহার সমস্ত রচনা প্রকাশিত হইলে নিশ্চয়ই এই প্রশ্নের স্বমীমাংসা হইবে । কিন্তু দ্বিজ চণ্ডীদাস সম্বন্ধে আরও একট। শেব কথা আমরা এই স্থানে বলিয়া রাখতেছি । অনন্তপ্রায় পদাবলী সাহিত্যের মধ্যে আমরা দ্বিজ ভণিতার কবি প্রায় পাইতেছি না । বৈষ্ণব কবিগণের প্রচলিত ভণিতা "দীন হীন” “অধম” “মূৰ্খ" দাসাচুম্বাস” ইত্যাদি। এইরূপ বিনয়ের সহিতই বৈষ্ণু র কবিগণ নিজকে ধ্যক্ত করিয়াছেন। ইহাদের মধ্যে কোন বড় কবিই নিজকে “দ্বিজু” আখ্যায় বিভূষিত করেন নাই । বস্তুতঃ বৈষ্ণব ধৰ্ম্মের স্রোত যে-ভাবে বঙ্গদেশকে প্লাবিত করিয়াছিল, তাহাতে গা ভাসাইয়। যে ব্যক্তি “দ্বিজ” আখ্যা লইয়। গৌরব অনুভধ করিতে পারে, সে কবিও নহে, বৈষ্ণবও নহে, ইহা দৃঢ়ম্বরে বলা যাইতে পারে। তবে কিনা "দ্বিজ মাধব” “দ্বিজ ভীম” “দ্বিজ শুামাদাস” প্রভৃতি গুটিকতক নগণ্য কবির দুই একটি বৈষ্ণব পদ অাছে, তাহ জানা যায়। ইহার কেহই দীক্ষিত বৈষ্ণব ছিলেন বলিয়া আমরা বিশ্বাস করিতে পারি না । তাহার। ব্রহ্মণ্যধর্মের গণ্ডীর মধ্যে থাকিয়াই দুই একটি বৈষ্ণবপদ রচনা করিয়াছিলেন