পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] সত্তর বৎসর ○○> আমাদের বাড়ীর পুরোহিত ঠাকুর যখন নিজে আসিতেন, তখন তিনি এই পুরাণ-পাঠ উপলক্ষে “অধ্যাত্ম রামায়ণ” কিছু কিছু পড়িতেন , অন্তসময়ে তাহার পুথিখান বধিয়া জলচৌকির উপর সাজাইয়। রাথিতেন। তাহার অবর্তমানে আমাদের বাসায় যখন পুরাণ-পাঠ হইত, তখন কোন শাস্ত্রীয় গ্রন্থ পৰ্য্যস্ত এইরূপে বাধা থাঙ্কিত না। আমার মনে পড়ে, দু একবার আমার জেঠতুত ভাই— ইনি বাবার মুহুরী ছিলেন এবং বাবার সংসারের কাজকৰ্ম্মের তত্ত্বাবধান করিতেন-বাংলা নজীর থাড়োয় দিয়৷ মুড়িয়া পুরাণ বলিয়া এই পাঠের সময় রাখিতেন । এই প্রচ্ছন্ন নজীরকেই লোকে প্রণাম করিয়া প্রণামী দিয়া যাইতেন । কখনও কখনও—আমাদের পরিবারে হয় নাই—কিন্তু অম্বত্র এমনও শুনা গিয়াছে যে, দুষ্ট বালকের ছেড়া চটি এইরূপ মুড়িয়া পুরাণের আসনে স্থা ন করিত। লোকের ধৰ্ম্মবিশ্বাস কতটা যে নষ্ট হইয়া গিয়াছিল, এইসকল ঘটনা এবং কাহিনীতে ইহার প্রমাণ পাওয়া যায় । পুরাণ পাঠের উদ্দেশ্য ছিল, অর্থ সংগ্ৰহ করা । সহরে যখন যেখানে পূজাপাৰ্ব্বণ হইত অথব; যাত্রাগfনাদি হইত সেখানেই নিমন্ত্রিতদিগকে নিজেদের অবস্থা অমুযায়ী প্রণামী দিতে হইত। র্যাহারা নিজেদের বাড়ীতে পূজা-পাৰ্ব্বণ বা যাত্রাগানাদির ব্যবস্থা করিতেন তাহার এই সুত্রে তাহদের প্ৰেণামীর টাকা ফেরত পাইতেন। যাহাঁদের ষাড়ীতে যে বৎসর পূজাপাৰ্ব্বণ বা যাত্রাগানাদি হইত না, তারা এই পুরাণ পাঠের উপলক্ষে এই টাকা ফেরত পাইতেন। কেহ কেহ পুরাণপাঠের প্রণামী নিজেরাই আত্মসাৎ করিতেন ; কিন্তু অধিকাংশ সম্পন্ন গৃহস্থের এই প্রণামীর টাকা নিজেদের গুরুপুরোহিতকেই দান করিতেন । و&& শ্রীহট্টে থাকিতেই আমি হিন্দুয়ানীর বন্ধন ছিড়িতে আরম্ভ করি । আমার ধৰ্ম্মবিশ্বাসের যে বিশেষ পরিবর্তন হয়, তাহা নহে। ফলতঃ তখন পৰ্য্যন্ত আমার অস্তুরে কোন ধৰ্ম্মজিজাসার উদয়ই হয় নাই । জিজ্ঞাসা জাগে সন্দেহু হইতে। তখন পর্ধ্যস্ত ধৰ্ম্মবিশ্বাস সম্বন্ধে আমার অস্তরে বাস্তবিক কোন সন্দেহ জাগে নাই। কালী দুর্গ। প্রভৃতি দেবতা সত্যই আছেন কি নাই ; এ প্রশ্ন মনে ওঠে নাই। পরজীবনেও কখনও উঠিয়ছিল কি না মনে নাই। ঈশ্বর আছেন একজন, যিনি দুনিয়ার মালিক, সকল হিন্দুতেই এ বিশ্বাস করেন । আমার বাবাও এই ঈশ্বরে বিশ্বাস করিতেন । এই একেশ্বরে বিশ্বাসের সঙ্গে কালী দুর্গ প্রভৃতি দেবতায় বিশ্বাসের যে কোন বিরোধ আছে, ইহা তিনি ভাবিতেন না । ফলতঃ যখন তিনি দুর্গোৎসবের সময় দুর্গাপ্রতিমার নিকটে প্রণাম করিতেন, তখন এই দেবতা যে ঈশ্বর নহেন এই সন্দেহই তাহার অস্তরে জাগিত না। আবার কালীপূজার সময়ে কালী যে ঈশ্বর নহেন, ইহা তিনি ভাবিতেন না। দোলের সময় রাধাকৃষ্ণ যে ঈশ্বর নহেন, এরূপ কল্পনাও করিতেন না । যখন যাহার পূজা করিতেন, তখন তাহাকেই ঈশ্বর জ্ঞান করিতেন, অথবা ঈশ্বরের শক্তি জ্ঞান করিতেন । এই হাওয়ার মধ্যেই আমি বাড়িয়া উঠিয়াছিলাম। যেমন হিন্দুর দেবদেবী সম্বন্ধে তেমনি মুসলমানের উপাস্ত সম্বন্ধেও বাবার ঈশ্বর-বুদ্ধি দৃঢ় ছিল। ঈশ্বর যে এক, এই ঈশ্বর যে মাটী ও খড়ের প্রতিমা নহেন, এই ঈশ্বর যে রক্তমাংসের মানুষ নগেন, এসকল সামান্ত কথা তিনি জানিতেন ও বুঝিতেন । মোসলেম সাধনার সংস্পর্শে আসিয়া তাহার অন্যরূপ বিশ্বাস পোষণ করা সম্ভব ছিল না। ধৰ্ম্মে ধৰ্ম্মে যে কোন যিরোধ আছে, তাহার কথায়-বাৰ্ত্তায় কখনও এ ভাব প্রকাশ পাইত না । মুসলমানের ঈশ্বর এক ও হিন্দুর ঈশ্বর অন্ত, একল্পন তিনি কখনও করেন নাই । এইজন্ত মুসলমানের পৰ্ব্বাহে তিনি মুসলমান বন্ধুদিগের সঙ্গে স্বচ্ছদচিত্তে লৌকিকতার আদান-প্রদান করিতেন । বৰঘূ-ঈদের সময় প্রতিবাসী মুসলমান জমীদারের বাড়ীতে ভেট পাঠাইতেন। বোধ হয়, খৃষ্টমাসের সময়ে জজসাহেবের বাড়ীতেও আমাদের বাড়ী হইতে এইরূপ ভেট ফাইত। ኟፃ প্রচলিত হিন্দুধৰ্ম্মে অবিশ্বাস না জন্মিলেও, হিন্দুর আচারবিচারের বাধার্যাধির বিরুদ্ধে অতি স্বল্পবয়স