পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] সম্পাদকের চিঠি ©ÞᏄ লোকে যখন দরিদ্র হয় তখন বাইরের দিকে গৌরব খুজে বেড়ায়। তখন কথা ব’লে গৌরব করতে চায়, তখন পুথি থেকে শ্লোক খুটে খুটে গৌরবের মাল-মসলা ভগ্নস্তপ থেকে সঞ্চয় করতে থাকে। এমনি ক’রে সত্যকে ব্যবহার থেকে দূরে রেখে যদি গলার জোরে পুরাতন গৌরবের বড়াই করতে বসি তবে আমাদের ধিক্ ! অহঙ্কার করবার জন্তে সত্যের ব্যবহার সত্যের অবমাননা । আমার মনের একান্ত প্রার্থনা এই যে, সত্যবাণীকে কাধে ঝুলিয়ে জয়ঢাক ক'রে তাকে যেন বাজিয়ে ন৷ বেড়াই ; বাইরের লোককে চমক লাগাবার জন্তে যেন তাকে অলঙ্কার মাত্র না করি, যেন নিজেরই একান্ত আস্তরিক প্রয়োজনের জন্তেই তার সন্ধান ও সাধনা করতে পারি। জাভায় যখন যাব তখন মনকে অহঙ্কারমুক্ত ক’রে সত্যের অমৃতমস্ত্রের ক্রিয়াটি দেখে যেন নম্ৰ হ’তে পারি। সেই মৈত্রীর মহামন্ত্রটি নিজের মধ্যেই পাওয়া চাই তাহ’লেই আমার চিত্তে যেখানে অরণ্য সেখানে মন্দির উঠবে, যেখানে মরুভূমি সেখানে সৌন্দর্ঘ্যের রসবৃষ্টি হবে, জীবনের তপস্যা জয়যুক্ত হ’য়ে সার্থক হ’য়ে উঠবে। .جيج=s==ee সম্পাদকের চিঠি ( > . ) ভিয়েনাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রশাস্তচন্দ্র মহলানবিশ, নিৰ্ম্মলকুমারী দেবী ও আমি ইম্পরিয়াল হোটেলে ছিলাম । বার্লিনে ও প্রাগে যে যে হোটেলে ছিলাম, ভিয়েনার এই হোটেলের বিল তার চেয়ে কম হয় নাই ; কিন্তু অন্য দু-জায়গার হোটেলের মত স্থবিধা এখানে আমি সব বিষয়ে পাই নাই । আগের চিঠিতে লিথিয়াছি, প্রাগ হইতে ভিয়েন আসিবার পথে রবীন্দ্রনাথ অস্বস্থ বোধ করেন। ভিয়েনায় আসিয়া দেখা গেল, তাহার জর হইয়াছে। তথাকার বিখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক ওয়েস্কেব্যাক্কে ডাকা হইল। ভিনি আসিয়াই কবির ভিয়েনায় যে-বক্তৃত৷ দিবার বন্দোবস্ত হইয়াছিল, তাহা বন্ধ করিয়া দিলেন, এবং পোল্যাও ও রুশিয়৷ যাইতেও নিষেধ করিলেন । ঐ দুই দেশে যাইবার জন্ত প্রাগ হইতে পাসপোর্ট লওয়া হইয়াছিল। কবি ও র্তাস্থার সঙ্গে সাত জন লোকের রুশিয়া যাইবার নিমন্ত্রণ ছিল। তাহার মধ্যে আমিও ছিলাম। কবির যাওয়া বদ্ধ হওয়ায় আমারও যাওয়া বদ্ধ হইল। কিন্তু কবি যদি যাইতেন, তাহা হইলেও আমার যাওয়া ঘটিত না ; কারণ আমি কয়েক দিন পরেই পীড়িত হই। আমার আর কখনও ইউরোপ যাইবার সম্ভাবনা কম। স্বতরাং এ যাত্র রুশিয়া দেখা না হওয়ায় আর হয়ত সে-দেশ দেখা হইবে না। সেখানে মুট্যে মজুর কারিকর চাবার এখন অন্য কোন শ্রেণীর লোকদের চেয়ে নিকৃষ্ট বিবেচিত হয় না ; সকলের রাষ্ট্রীয় অধিকার সমান, সামাজিক মৰ্য্যাদাও সমান। কাগজে এইরূপ পড়িয়াছি। এরূপ দেশের প্রকৃত অবস্থা কিপ্রকার এবং সকল রকম কাজকৰ্ম্ম কেমন চলিতেছে, তাহা সাক্ষাৎ দেখিবার জিনিষ ; কিন্তু দেখা হইল না। অধ্যাপক ওয়েঙ্কেব্যাক্ কেবল চিকিৎসক নহেন। নানা বিষয়ে তাহার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আছে, এবং র্তাহার কথোপকথনের ক্ষমতা তাহার লোক-প্রিয়তার অন্যতম কারণ। বস্তুতঃ তিনি কবিকে দেখিতে আসিয়া এত গল্প করিতেন, যে, তাহাকে খুব বড় ডাক্তার বলিয়া না জানিলে লোকে মনে করিতে পারে, যে, তাহার অবসর অসীম, কোন কাজ-কৰ্ম্ম নাই। তাহার চিকিৎসানৈপুণ্য ও কথোপকথন-প্রিয়তা কলিকাতার কোন প্রসিদ্ধতম ডাক্তারের কথা আমাদিগকে স্মরণ করাইয়া দিয়াছিল। একদিন তিনি কবিকে দেখিতে আসিয়৷