পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७१>~ প্রবাসী—ভাদে, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড কোর্তা আর কোমরে ভারা সোনার পাতায় তৈরী কোমরবন্ধ, তার মাঝে দুই পাশে দুই হাতীতে কুম্ভে করে মাথায় জল ঢালছে এই রকম লক্ষ্মীমূৰ্ত্তি খোদাই করা, তার একটা ছোটে। গান আমাদের শোনালে। এইরূপে কবির সঙ্গীদের বিশেষ ভাবে সৌজন্য দেখানো হ’ল। সমস্ত জিনিষটি এমনি সহজভাবে হ’ল যে কি আর ব’লবো। ভারী হৃদ্য আর মনোজ্ঞ লাগ ল এদের এই আতিথ্য । তামিল রস্কনচৌকীর দলে একটি ছোকুর সানাই বাঞ্জাচ্ছিল, খালি গায়ে সোনার হার আর বালা পর। কালে রঙের উপরে এই সোনার রেখায় তার স্বত্র মুখ নিয়ে ছোকরাকে ভারী নয়নাভিরাম দেখাচ্ছিল ;–এই বাজনার দলের ছবিও নেওয়া হ’ল । এইরূপে মাদ্রাজে পৌছে প্রথম দিনেই এই চমৎকার কবিত্বপূর্ণ উৎসবঅকুষ্ঠানটি দেখে পরম পরিতোব লাভ করা গেল। যে সব জিনিস আমরা এখন প্রাচীন ভারতের কল্পলোকে ফেলে কাব্যরসাস্বদের কোঠায় রেথে দিয়েছি, আমাদের বাঙালী হিন্দুর ব্যবহারিক জীবনে যে-সমস্ত স্বন্দর শোভন রীতি লোপ পেয়েছে, রক্ষণশীল তামিলদের মধ্যে সেগুলি কত সহজ, কত অবলীলভাবে এখনও বিদ্যমান। Tradition বা চিরাচরিত রীতি ধ’রে চ’লে আসছে এইসব মনোহর কবিত্ব-মাধা অনুষ্ঠান ; তাই উৎসবের সহজ ও স্বাভাবিক অঙ্গ হিসাবে এর মধ্যেকার সরলতাটুকু ঠিক র’য়ে গিয়েছে। প্রাচীনের সঙ্গে এই স্বত্র ছিড়ে ফেলার পরে যদি আমরা এখন এই জিনিসটির পুনরানয়ন করবার চেষ্টা করি,—যে বর-কনেকে দোলায় বসিয়ে দোল খাওয়ানো হবে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ীর মেয়েদের দিয়ে বিবাহের.মাঙ্গলিক গীতি গাওয়৷ চ’লবে— ত৷ হ’লে বহু স্থলে এটা কত-নী "আধুনিক” আর বিসদৃশ ঠেকৃবে—এর সাহূল্যের বদলে একটা সচেতন কৃত্রিমতা এসে জিনিসটিকে একেবারে অন্যরকম করে তুলবে। বাঙ্গালী হিন্দুর ঘরে প্রাচীন পদ্ধতির মধ্যে মাঙ্গলিক গীতি গিয়েছে, নাচ গিয়েছে—মেয়েদের মধ্যে সখীপরিবৃত হয়ে দোলায় চড়ার পাটও নেই। শুনলুম মাত্রাজে সমস্ত ভদ্রঘরে এই দোলন-পিড়ির ব্যবস্থা আছে— মেয়েরা দেখা-সাক্ষাৎ করতে এলে আবখ্যক মতন এই দোল টাঙানো হয়, ধীরে ধীরে দুলতে দুলতে তারা কথাবার্তা রহস্যালাপ কাজকৰ্ম্ম ক’রে থাকেন। এইরূপ দোলার ব্যবহার উত্তরভারতে কোথাও কোথাও এখনও আছে, গুজরাটে আছে, মহারাষ্ট্রেও আছে। বাঙল দেশের মেয়ের এই আনন্দ-রস থেকে এখন একেবারে বঞ্চিত । আমাদের ভাগ্যে তামিল জীবনের সঙ্গে প্রথম শুভ-পরিচয় এইরূপে ঘটিল, বর-কনের দোলায় চড়া দেখে। তারপর আমরা কপালেশ্বরের মন্দির দেখে এলুম। প্রকাও এক “টেপ্পকুলম্‌” বা মন্দিরের সাম্নেকার পুষ্করিণী—চারদিকে লম্বা অনেকগুলি ক’রে ধাপ, এত লস্ব সোজ-সোজা রেখার সমাবেশ চোথকে ধেন পীড়া দেয়। সাধারণ যেমন গোপুরম্-যুক্ত দ্রাবিড়রীতির মন্দির হয়, মন্দিরটি তেমনি। পাথরের কাজগুলি মন্দ নয়-চলনসই রকমের প্রাচীনকালের পাথরের মূৰ্ত্তির উপর হালে বালি-চুণকাম করে আর রং দিয়ে সেগুলিকে মুন্দর থেকে কিভূত, এমন কি বর্বর ক’রে ফেলা হয়েছে। শিবের মন্দির ; ভিতরে লিঙ্গমূৰ্ত্তি, তার সাম্নে বৃষ নদীর মূৰ্ত্তি । ননীর পিছনে দু’হাভ আন্দাজ উচু দুই হাতে মস্ত প্রদীপ ধরে রয়েছে এক চমৎকার পুরুষমূৰ্ত্তি, পিতলের । মন্দির প্রদক্ষিণ করবার সময়ে দেখলুম ছোটোখাটো পার্থের মন্দিরের মধ্যে বড়ে বড়ো সব পি ভলের মূৰ্ত্তি—ময়ুরে-চড়া কার্ভিকেয় দক্ষিণ মূৰ্ত্তি শিব, পাৰ্ব্বতী, আর ১.৮ শৈব ভক্তদের স্বনার স্থনর মূৰ্ত্তি,-দু’সেট-একটি পিতলের, আর একটি পাথরের । দক্ষিণে দেবতার ভক্তি এখনও পুরোপুরি বিদ্যমান—মম্বিরে - আগত পূজার্থীদের মুখ দেখলেই সে কথ। বোঝা যায়। বড় মন্দিরের আঙিনার মধ্যেই আলাদা মন্দিরে দেবীর মূর্তি ; দূর থেকে দেখা গেল, চমৎকার কালে পাথরে কাটা মামুষের আকারের একটি প্রমাণ মূৰ্ত্তি। মুখখানি আর হাতগুলি ছাড়া কাপড় পরানো ব’লে সৰ্ব্বাঙ্গ ঢাকা । দেবীর বাহন সিংহ সামনে আছে, আর সিংহের পিছনে শিবের মন্দিরের দীপধারী পুরুষের অনুরূপ দীপধারিণী নারীর অপূৰ্ব্ব এক পিতল-মূৰ্ত্তি। ভ্রাবিড়দেশে এইরকম