পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজরোষ শ্ৰী নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত > “অপরাহ্ল কালে প্রয়াগ-সঙ্গমে বালুকাতটে বসিয়া প্রশাস্তু-ললাট নিগ্ৰস্থ নাথপুত্রঞ্চ শিষ্যদিগকে শিক্ষা দিতেছিলেন। র্তাহার সম্মুখে ও দুই পাশ্বে পঞ্চাশ জন শিষ্য বসিয়া নীরবে, অবহিত চিত্তে র্তাহার উপদেশ শ্রবণ করিতেছিলেন। কয়েক জন গৃহস্থও উপস্থিত ছিলেন। গুরু কহিড়েছিলেন, ‘গ্রন্থি ইহ-সংসারে বন্ধন । অনেক প্রকার জটিল গ্রস্থিতে মামুষের স্বভাব আবদ্ধ, চিত্ত স্বচ্ছদে বিচরণ করিতে পারে না। এইসকল গ্রন্থি মোচন করিতে হইলে আয়াস ও সাধনার প্রয়োজন, কিন্তু তাহা ব্যতিরেকে মুক্তির উপায় নাই। যাহার চরণে শৃঙ্খল বন্ধ সে অনায়াসে পথ পর্যটন করিতে পারে না। এই ভার বহন করিয়া জীবনের দীর্ঘ পথ কেমন করিয়া অতিবাহিত করিবে ? সংযম অভ্যাস কর—বাক্যে সংযম, চিত্তে সংযম, আহার-বিহারে সংযম। বাক্য শাণিত অস্ত্রের ন্যায়, সংযম না করিলে অপরের মৰ্ম্মে আঘাত করে। চিত্ত চঞ্চল অশ্বের ন্যায়, বল্লা সংযত না করিলে অপথে-কুপথে ধাবিত হইবে । আহারের জন্য ধরণী নানা সামগ্ৰী দান করে, অপর ভক্ষ্যের কি প্রয়োজন ? মানুষ কি ব্যাঘ্র যে মাংস ভোজন করিবে ? আর বিহার ? সাধু সঙ্গই বিহার। একজন গৃহস্থ প্রশ্ন করিল, 'প্রভু, যাহারা সংসারে লিপ্ত, গৃহস্থ-আশ্রমে রহিয়াছে তাহদের প্রতি কি আদেশ ? ‘গৃহাশ্রমে ত সকলেই রহিয়াছে, কয়জন গৃহ পরিত্যাগ করিতে পারে ? গৃহস্থের পক্ষেও যথাসাধ্য সংযম ব্যবস্থা। সংযম ত্যাগ করিলেই সমূহ বিপদ। এই যে সংসার, ইহা পৰ্ব্বতের পার্থের স্থায়, অত্যন্ত পিচ্ছিল, গমনাগমনের পক্ষে বড় কঠিন। অসাবধান হইলেই পতন ও বিনাশ। কোন

  • নিগ্ৰস্থ নাথপুত্র প্রসিদ্ধ জৈন তীর্থঙ্কর মহাৰীয় ।

জীবের হিংসা করিবে না, পিপীলিকাকেও পদদলিত করিবে না।’ যমুনার কালো জলে অস্তমান স্বর্ষ্যের রশ্মি জলিতেছিল, সিতাসিত সঙ্গমে গঙ্গার শুভ্র, তীব্র স্রোত ও যমুনার অলস, মন্থর, কৃষ্ণ প্রবাহ লক্ষিত হইতেছিল। পূৰ্ব্বদিকের বাতাস, তাহাতে জল ঠেকিয়া ছোট ছোট তরঙ্গ রচনা, যমুনার পারে হরিদ্র-বর্ণ ক্ষেত্র। কিছু দুরে ঘাটে কয়েকটি নেীক বাধা, নাবিকের নৌকায় কিংবা তীরে বসিয়া গল্প করিতেছে, গ্রামের বালকবালিকা বালুকায় খেলা করিতেছে। দুই তিনখানি সজ্জিত রথ বেগে চালিত হইয়া যমুনাতীরে উপনীত হইল। ছয় জন উত্তম-বেশ-পরিহিত যুবক রথ হইতে অবতরণ করিয়া শিয্যপরিবৃত গুরুর অভিমুখে হাস্ত-কৌতুক করিতে করিতে আগমন করিলেন । সকলের অগ্রে যে-যুবক আসিতেছিলেন তাহার বেশ-ভূষার পারিপাট্য কিছু অধিক। উপবিষ্ট শ্রোতার মধ্যে একজন তাহাকে চিনিতে পারিয়া কহিল, ‘রাজা বিরূপাক্ষ । সে নাম শুনিয়া সকলেই কিছু শঙ্কিত হইল। একা নাথপুত্র বিচলিত হইলেন না, নবাগত যুবকদিগের প্রতি দৃষ্টিপাত না করিয়া যেমন মধুর গম্ভীরস্বরে উপদেশ দিতেছিলেন সেইরূপ দিতে লাগিলেন । রাজা বিরূপাক্ষের বয়স চব্বিশ বৎসর। দেখিতে স্বপুরুষ, কিন্তু বিলাসিতার আতিশয্যে চক্ষু কোটরগত, রক্তবর্ণ, মুখমণ্ডল শ্ৰীবিহীন। সাজোপাঙ্গ ও তদ্রুপ। বিরূপাক্ষ ছুশ্চরিত্র, নিষ্ঠাশূন্ত, নিষ্ঠুর, প্রজাপীড়ক, অত্যাচারী । নিকটে আসিয়া সঙ্গের এক ব্যক্তিকে ব্যঙ্গচ্ছলে জিজ্ঞাসা করিলেন, "ইহার কে ? এখানে কি করিতেছে ?” হয়ত সেই ব্যক্তি বিদূষক। মুখ গভীর করিয়া কহিল,