পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] নিজেদেরও যেন ভাবিতে লজ্জা হয় ; এমন অবস্থায় হঠাৎ আকাজের গুঞ্জনে সময় নষ্ট করিতে গৌরীকে সে ডাকিবে কি বলিয়া ? কিন্তু তবু আপনার কাছে তাহাকে স্বীকার করিতে হইল যে, এই অলস গুঞ্জনের লোভেই সে আজ কাজের সময়ের আগেই কাজের অভিসারে বাহির হইয় পড়িয়াছিল। শুধু কাজটুকু মনে থাকিলে তাহার অপর দশটা হাতের কাছের কাজ ফেলিয়া এতদুরে সে সবার আগে ছুটয় আসিত না । দুই মিনিট না যাইতেই গৌরী ফিরিয়া আসিয়া বলিল, “মাসিমার এখনও আধঘণ্টা খানেক দেরী আছে । আপনি একলাটি চুপ ক’রে বসে থাকবেন ? কাউকে ডেকে দিলে হয় ন!” ডাকিবার মামুষের মধ্যে মেয়েদের আশ্রমে চঞ্চল ছাড়া আর যে দ্বিতীয় প্রাণী থাকিতে পারে না, তাহা গৌরী ও জানিত, সঞ্জয়ও বুঝিল। কিন্তু চঞ্চলার নামটা করিতে গৌরীর কেমন যেন বাধিয়া গেল। সঞ্জয়ের সহিত তাহার যে কেবল কাজের সম্পর্ক এইটুকু সঞ্জয়কে সে বুঝাইতে চায়, অথচ যাহার কাছে সে এত কাজের সেবা অjদায় করিতেছে তাহাকে কাজের অভাবে অবসর সময়টুকু একলা ফেলিয়া চলিয়া যাইতেও ভদ্রতায় বাধিতেছিল। মনের নিভৃত কোণে এই ক্ষুদ্র অবসর-কালটুকু সঞ্জয়ের সঙ্গে যাপনের যে একটা লোভ লুকাইয়াছিল ভদ্রতাঙ্গান তাহার সহায় হইয়া উঠিল দেখিয়া গৌরী আপনার মনকে শাসন করিবার একটা উপায় খুজিতেছিল। মনে হইল, চঞ্চলাকে ডাকিয়া দিলে তাহার ভদ্রত রক্ষাও হইবে এবং সঞ্জয়ও হয়ত বেশী খুলীই হইবে। কিন্তু তবু একেবারে তাহার নামটা সে করিতে পারিল না, যদি সঞ্জয় মনে করে গৌরী ইহার দ্বারা কিছু ইঙ্গিত করিতেছে, অথবা যদি সে ভাবে গৌরী চঞ্চলাকে হিংসা করে। সঞ্জয় বলিল, “কাকে আর ডাকবেন ? সকলেরই কাজ আছে। তা ছাড়া আশ্রমের মেয়েদের পুরুষ অভ্যাগতদের সামনে আস্বারও নিয়ম নেই।” গৌরী বলিল, “সকলের সামনে আসার নিয়ম নেই বটে, কিন্তু আপনাদের সামনে দুই একজনের আস্থার নিয়ম আছে বৈকি ! চঞ্চল চপলারা ত সৰ্ব্বদা আপনাদের সঙ্গেই কাজ করছে।” ১১২-১৫ জীবনদোল υρα সঞ্জয় এবার একটু ঠেস্ দিয়া বলিয়া ফেলিল, “সেইজন্তেই ত মনে হয় আপনারই মত তাদেরও আকাজে সময় নষ্ট করবার অবসর কম।” গৌরী চুপ করিয়া গেল। কথাট তাহার লাগিয়াছে বুঝিয়। একটু লজ্জিত হইয়াই সঞ্জয় বলিল, “হ্যা, চঞ্চলাকে সেই চিঠিপনার কথা একবার জিজ্ঞাসা করলে হ’ত। তাকে একবার বলে দেখতে পারেন যদি সময় হয় কাজটা সেরে নিই ।” কি কাজ ও কি চিঠি সঞ্জয় যেন তাহ গৌরীকে শুনাইবার জন্যই কথাগুলা ঐভাবে বলিল, কিন্তু তবু গৌরী কোনে। কৌতূহণ না দেখাইয়া শুধু চঞ্চলাকে ডাকিয়া আনিবার জন্য উঠিয়া চলিয়া গেল । কি-একটা আনন্দের সৌরভ সকালবেলা কাজের ছুতা করিয়া সঞ্জয়কে বহুদূর হইতে ডাকিয় আনিয়াছিল ; কিন্তু কাছে আসিতেই সে সুবাসটুকু ফুরাইয়া গিয়া তাহার বেদনার ক্ষতগুলি নানা স্মৃতির কণ্টকক্লিষ্ট হইয়া উঠিল দেপিয়া মনটা তাহার অনেকখানি মুন্ড্রাইয়া গেল । চঞ্চল চিঠিখান হাতে করিয়া আসিয়। ঘরে ঢুকিল । আজ আবার অনেকদিন পরে তাহারা ভীড়ের বাহিরে পরস্পরের কাছে আসিয়াছে, বহুদিন তাহার সুযোগ হয় নাই, একথা বুদ্ধিয়াই গোর দূরে সরিয়া গেল। এই দুইটি মানুষকে গৌরী আগে আপনার কল্পনায় যে-স্থত্রে বাধিয়ছিল, এখন তাহার ভিতর নানা খটুক আসিয়া স্বত্র ছিড়িয়া দিতে লাগিল। তাহার কল্পনা যদি সত্য হইত তাহা হইলে সঞ্জয়ের ব্যবহারে যে-আগ্রহ প্রকাশ পাওয়ার কথা আজ ত সে তাহার বিপরীতটাই দেখিল । আর যদি ইহা মিথ্য। হয় তবে তাহার নিজ কর্ণকেই অবিশ্বাস করিতে হয়। তৃতীয় আর-একটা সিদ্ধাস্ত করা যায় যে, চঞ্চলার জন্মপরিচয় পাইয়া সঞ্জয়ের মন ফিরিয়া গিয়াছে। কিন্তু সঞ্জয়ের মত পুরুষের সম্বন্ধে এ সিদ্ধান্তটা মনে আন অসম্ভব বলিয়াই গৌরীর বোধ হইল। তা ছাড়া সঞ্জয়ের ব্যবহারে কোনো লজ্জা কি কুষ্ঠার পরিচয়ও ত সে দেখে না, যাহাতে মনে হইতে পারে যে, সে চঞ্চলার সহিত বোঝ|-পড়ায় একটা ভুল কি ভ্রান্তি পাকাইয়া বসিয়াছে। আপনার কল্পনাটাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মনে করিয়া তাহার জায়গায় একেবারে নূতন o,