পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্য ] শস্ত্র প্রস্তুত করিতে হইলে কতকগুলি মানসিক ও নৈতিক গুণের প্রয়োজন । শিক্ষা ব্যতিরেকে বুদ্ধির উৎকর্ষ সাবিত হয় না, উহা মার্জিত হয় না। শিক্ষণ দান ও লাভ করিতে হইলে, জ্ঞানবান হইতে হইলে, কতকগুলি মানসিক ও নৈতিক গুণের প্রয়োজন। একতার জন্তও কতকগুলি গুণের প্রয়োজন । পাশ্চাত্য জাতিসকলের, সকল রকম কৃতিত্বের মূীভূত গুণসমূহের প্রতি মনোনিবেশ এবং আমাদের অন্তর্নিহিত সেইসব গুণের সম্যক বিকাশ সাধন আমাদের পক্ষে একান্ত আবস্ত্যক । তাহার পরিবর্তে আমাদিগকে উত্তেজিত করিয়া যে পাশ্চাত্যের দোষ আবিষ্কার ও বর্ণনা করিতে প্রবৃত্ত করা হইতেছে, ইহাতে আমাদের অনিষ্ট হইতেছে। আমাদের সত্য দোষসকল সংশোধনের পরিবর্তে তৎসমুদয়ের সমর্থন বা লঘুকরণে যে আমাদের প্রবৃত্তি জন্মান হইতেছে, তাহা ও অনিষ্টকর। আশা করি, ভারতীয়ের অপরের নিন্দ-কুৎসায় বিচলিত না হইয়া নিজ নিজ সন্তগুণ-সমূহের বিকাশসাধন ও দোষসমুহের উন্মুম্নরূপ কর্তব্য পাণনে সৰ্ব্বল অবহিত থাকিবেন । স্বাধীনতালোপ ও জাতীয় দোষ ধে যে কারণে এক-একটা জাতির স্বাধীনতা লুপ্ত হয়, সামাজিক নানা দোষ তাহার অন্তর্গত বটে। কিন্তু তাহাই একমাত্র কারণ নহে। ইতিহাসে ইহাও দেখা গিয়াছে, * যে, সামাজিক কোন কোন বিষয়ে নিকৃষ্ট জাতির দ্বার। সেই সেই বিষয়ে উৎকৃষ্ট জাতি পরাজিত হইয় অীনতা-পাশে বদ্ধ হইয়াছে। সুতরাং সামাজিক কতকগুলি দোষ থাকিলেই কোন জাতির আত্মশাসন-অধিকার লুপ্ত হওয়৷ উচিত, ইহা সত্য নহে। গত মহাযুদ্ধের ফলে কতকগুলি দেশকে স্বাধীন হইতে দেওয়া হইয়াছে, বা স্বাধীন করা হইয়াছে ; পরাজয় সত্বেও কোন কোন জাতিকে স্বাধীন থাকিতে দেওয়া হইয়াছে। যাহারা স্বাধীন থাকিতে পাইল বা পরাধীন অবস্থ হইতে স্বাধীন অবস্থায় উপনীত হইল, কমিশন বসাইয় তাহাদের বিবিধ প্রসঙ্গ—স্বাধীনতালোপ ও জাতীয় দোষ ৯২৭ সামাজিক সুনীতি দুর্নীতি সম্বন্ধে আগে অনুসন্ধান করিয়া তাহার পর তাহাদিগকে স্বাধীন থাকিতে বা হইতে দেওয়া হয় নাই। অর্থাৎ জয়ী জাতির এরূপ কোন একটা সিদ্ধান্ত করে নাই, যে, যাহারা চরিত্রবান, যাহাদের সামাজিক ব্যবস্থা নিখুঁত, যাহাদের দেশে কোন কুৎসিৎ রোগ নাই, যাহার। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, তাহারাই স্বাধীন হইতে বা থাকিতে পারিবে ; এবং এরূপ সিদ্ধান্ত করিয়া তাহারা কমিশন বসাইয়। জাতিসমূহের চারিত্রিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যবিষয়ক ব্যবস্থার অনুসন্ধানের ফল অনুসারে কাহারও স্বাধীনতা এবং কাহারও বা অধীনতার র্যবস্থা করে নাই। সুতরাং ক্যাথারিন মেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যাহ। কিছু লিখিয়াছে, সমুদয় সত্য হইলেও আমাদের স্বাধীন হইবার অধিকার লুপ্ত হইতে পারে না। আমাদের যাহা কিছু দোষ বলিয়া উক্ত হইয়াছে, অতীত কালের ও বর্তমান সময়ের বড় বড় স্বাধীন জাতিদের সম্বন্ধেও তাহ বলা ধাইতে পারে। তা ছাড়, ঐ সকল স্বাধীন জাতিদের মধ্যে এমন অনেক দোষ আছে, যাহা আমাদের নাই । জানি, তর্কযুদ্ধে জয়লাভ করিয়া আমরা স্বাধীন হইতে পারিব না । সেইজন্য, আমাদিগকে চরিত্রে, জ্ঞানে, একতায়, দৃঢ়তায়, স্বাৰ্থত্যাগে ও শক্তিতে ইংরেজদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হইতে হুইবে । ইহ। অসম্ভব নহে, কিন্তু দুঃসাধ্য বটে। কিন্তু দুঃসাধ্যের সাবনায় সিদ্ধিলাভ মনুষ্যত্বের চরম পরিণতি ও পুরস্কার । এই পাবনা আমাদের হউক । মহাভারতে আছে, যতক্ষণ পর্য্যস্ত নল রাজা শুচি ছিলেন, ততক্ষণ শনি বা কলি তাহার কোন অনিঃ করিতে পারে নাই । অশুচিতার ছিদ্র অবলম্বন করিয়। তবে শনি তাহার দেহে প্রবেশ করে। আমরা ঘে-পরিমাণে নিদোষ হইব, যে পরিমাণে আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা ভাল হইবে, সেই পরিমাণে আমরা আমাদের শক্ৰদের নিন্দ ও অনিঃচেষ্টা অগ্রাহ করিতে পারিব। শক্ৰদের মিথ্যাবাদিত প্রমাণ করা অবহু প্রয়োজনীয় ; তাহাদিগকে তর্কে পরাজিত করা দরকার । কিন্তু তার চেয়েও আবশ্বক নিজেদের সত্য দোষ সংশোধন।