পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সন্ধানী লোকেরা বলিয়া গিয়াছেন, যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ ভাই। কারণ, মিলিলে মিলিতে পারে অমূল্য রতন। সিঁদুর-মাখা পাথর বা গাছ দেখিলেই যে লোকেরা প্রণাম করিয়া বসে, তার কারণও ইহাই। কে জানে কোন্ দেবতা কোন্ ঘরমে বৈঠতা হ্যায়, তার তো নিশ্চয়তা নাই। বিশ্বাস করিয়া একটি প্রণাম জমা করিয়া রাখা গেল, হয়তো মিলিলে মিলিতেও পারে।

 এত কথায় আমাদের আবশ্যক কি! যাঁহাকে শ্মশানের পিশাচ মনে করিতেছি, তাঁহার গায়ের ও জটার ছাই-ভস্ম মার্জনা করিয়া লইলে হয়তো দেখা যাইবে যে, তিনি আর কেহ নহেন—স্বয়ং শিব। অতএব, ছাই দেখিয়া পাশ কাটাইয়া যাইতে নাই, উড়াইয়া দেখিতে হয়।

 ছাই উড়াইয়া আমরাও রত্ন পাইয়া গেলাম। রত্নটির নাম গোবিন্দ, পদবী আজ আর স্মরণে নাই। বক্সা ক্যাম্পে আমরা ছিলাম বাবু। বাবু থাকিলেই চাকর-বাকরও অবশ্যই থাকিবে। জেলে কয়েদীরাই বাবুদের ঠাকুর, চাকর, বেয়ারা ইত্যাদির কাজ সম্পাদন করিত। এখানে বাহির হইতে পাচক ও চাকর আমদানী করা হইয়াছিল। গোবিন্দ ছিল তাদেরই একজন। পরে অবশ্য জানা গেল যে, সে শুধু একজন নহে, বিশেষ একজন।

 যে-বাড়িতে রান্নাঘরের ব্যবস্থা ভালো, সে-বাড়িতে স্বচ্ছল পরিবার বসবাস করিয়া থাকে, ইহা অনুমানেই মানিয়া লওয়া চলে। আর মানিয়া লওয়া চলে যে, সে-পরিবারে সুখ বর্তমান। আমরা সুখী পরিবার ছিলাম। এই সুখের জন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্ব একক দক্ষিণাদার (মিত্র)। তাঁর সম্বন্ধে আমাদের কবি কালীপদবাবু লিখিয়াছিলেন, ‘ধরে নাই পেটে তবু দক্ষিণাদা, ডেটিনিউ-সংসদে সকলের মা।’ কথাটার মধ্যে একরত্তি বাড়তি নাই, একেবারে খাঁটি কথা। রন্ধন-বিদ্যায় তিনি এতখানি পারঙ্গম ছিলেন যে, যে-কোন গৃহলক্ষ্মীকে এ-বিদ্যায় তিনি পরাস্ত করিতে পারিতেন। আর স্নেহও ছিল মায়ের মত। মা সন্তানকে

১১৮