পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একটু অশ্লীল। পদি পিসীকে যে-পদ্ধতিতে পদ্মিনী করা হয়, মন্তব্যটিকেও সেই পদ্ধতিতে যথাসাধ্য মার্জিত করিয়া লইতেছি।

 একপাশ হইতে বেশ একটু স্পষ্ট গলাতেই উক্ত ভদ্রলোক, বলিয়া উঠিলেন, “অনুতাপ? ডেটিনিউ কি চীজ ব্যাটারা এখনো বোঝে নাই দেখছি। মাথায় কল্কি চাপিয়ে ড্যাস্ দিয়ে ধোঁয়া বের করলে তবে বুঝবে।”—এখানে ড্যাস্ মানে দেহের নবদ্বারের সর্বনিম্ন দ্বারটি।

 মানুষের শরীরটাকে হুঁকা বানাইয়া তামাকু সেবন করিবার মত প্রতিভা যাঁহাদের থাকে তাঁহারাই ডেটিনিউ, ইহাই হইল আমাদের আত্মপরিচয়।

 দ্বিতীয় মন্তব্যটি যাঁহার, তিনি আমাদের অশ্বিনীদা (গাঙ্গুলী)। তখন তিনি প্রেসিডেন্সী জেলে বড়হাজতে ছিলেন এবং আরও অনেকেই ছিলেন।

 সাতটা বাজিয়া গিয়াছে, আটটাও প্রায় বাজে, অথচ ভোরের টিফিনের টিনের ট্রে বা হাফ-বাক্স মাথায় লইয়া তখনও কয়েদীরা আসিতেছে না। বাবুরা অস্থির হইয়া উঠিলেন। আটটা বাজিয়া গেল, তবু বড়হাজতের গেটে বাঞ্ছিত কড়া নাড়ার শব্দ শ্রুত হইল না। নয়টাও বাজিয়া শেষে দশটার কোঠায় ঘড়ির কাঁটা পৌঁছিয়া গেল, টিফিনের দেখা নাই। বাবুরা রীতিমত ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন। অশ্বিনীদা তাঁহার খাটিয়াতে বসিয়া পত্রিকা পড়িতেছিলেন।

 জিজ্ঞাসা করিলেন, “টিফিন আসে নি বুঝি?”

 একটি ছেলে বিরসবদনে উত্তর দিল, “না।”

 অশ্বিনীদা সকলকে শুনাইয়া বলিলেন, “ভেবেছে, জব্দ করবে। আরে ব্যাটারা, আমরা যে কি চীজ, এখনও বুঝলিনে? উনুনে হাঁড়ি চাপিয়ে পরে মুষ্টিভিক্ষার চাল যোগাড়ে বার হই, আমরা সেই চীজ। আমাদের জব্দ করবি?”

 দুইটি মন্তব্যে আমাদের যে আত্মপরিচয় স্বমুখে স্বীকৃত হইয়াছে, তাহা এক কথায় এই যে, আমরা অদ্ভুত। অদ্ভুতের অদৃষ্টে অদ্ভুতই আসিয়া জোটে।

২০১