পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —“নে বাবা নে, একটু দূরেই থাক না বাপু! একেবারে গন্ধমূষিক হয়ে আছ, নাকে যায় না?”

 বলিয়া সিগারেটটি তার প্রসারিত হস্তে ছাড়িয়া দিলাম।

 কহিলাম—“নে, ধরা। আস্ত একটা সিগারেট তোর জন্য খরচ হোল, দের ভোঁতা মুখ থেতলে! আমার দয়ার কথা স্মরণ রাখিস,” বলিয়া পকেট হইতে ম্যাচ বাহির করিলাম।

 সিগারেট মুখে লইয়া ভূটিয়ানন্দন মুখাগ্নির জন্য প্রস্তুত হইল। আগুন ধরিতেই এক মুখ ধোঁয়া নাকমুখ দিয়া বমন করিয়া আমাদের মুখের দিকে চাহিয়াই শ্রীমান হাসিয়া ফেলিল, অপূর্ব দন্তপংক্তি প্রকটিত করিয়া পরম পরিতৃপ্তি প্রকাশ করিল।

 —“খুশী হয়েছিস, বুঝতে পেরেছি। নে, এখন দাঁত বন্ধ কর, ও-দৃশ্য যে আর দেখা যায় না বাবা।”

 আমাদের আর কিছু বলিবার অথবা দোখবার অবকাশ না দিয়া শ্রীমান ঊর্ধ্বশ্বাসে সিগারেট মুখে ছুট দিল— দুই পায়ে ধুলা ও শুষ্ক পাতা মাড়াইয়া সামনের পথটা দিয়া তীরের মত বেগে ধাবমান হইল।

 শরৎবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন,—“ব্যাপার কি, পালাল যে?”

 —“বলবেন না, একেবারে কাপুরুষ, রাজ্য ছেড়ে পলায়ন। এই উল্লুক, আস্তে যা, আলখাল্লায় পা বেধে আছাড় খেয়ে মরবি যে—”

 এই উপদেশেও গতি শ্লথ করিবার মত আশ্বাস ছেলেটা প্রাপ্ত হইল না। শুধু ঘাড় ফিরাইয়া একবার দেখিয়া লইল যে, আমাদের ও তার মধ্যে ব্যবধানটা যথেষ্ট দীর্ঘ ও নিরাপদ করা হইয়াছে কিনা।

 ছেলেমানুষীতে পাইয়া বসিল, কেমন যেন একটা অনাবিল আমোদ পাইতেছিলাম।

 চেঁচাইয়া আশ্বাস প্রেরণ করিলাম— “এই, সিগারেট ফেরৎ দিতে হবে না, ওটা তোকেই দিয়ে দিয়েছি—এখন একটু আস্তে যা বাবা—”

৪৭