পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ধরাবাঁধা নিয়ম ছিল না, যখন খুশী তখনই নামিয়া আসিত। বর্ষাকালে তো বর্ষণের আর বিশ্রামই ছিল না, সমস্ত পাহাড় ও তার বনভূমি দিনরাত্র ধারাস্নানে ভিজিয়া সিক্ত হইত। ঝরণার চীৎকার ও গর্জন ব্যারাক হইতেই তখন স্পষ্ট শোনা যাইত। এখানে এত মেঘ, এত বর্ষণ— কতবার ভাবিয়াছি যে, এত অপব্যয় ও অপচয় এখানে, অথচ মরুভূমি পিপাসায় দগ্ধ হইয়া মরিলেও এক ফোঁটা জল পায় না। বিশ্বপ্রকৃতি যে স্বভাবে বেহিসেবী, এ সম্বন্ধে আর আমাদের মনে কোন সন্দেহই ছিল না।

 অধুনা পাত্রের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হওয়া যাইতেছে। প্রথমেই বকসা ক্যাম্পের কমাণ্ডাণ্টের বিষয় উল্লেখ করা কর্তব্য। যদিও মিঃ ফিনী দুর্গের কমাণ্ডাণ্ট, জাতে কিন্তু তিনি মিলিটারী নন। বাঙলা পুলিশের পদস্থ কর্মচারী, ইঁহার গুণবত্তা ও দক্ষতায় বাঙলা সরকার আস্থা রাখিতেন, বকসা ক্যাম্প খোলার ভার দিয়া তাঁকে পাঠানো হয় এবং প্রথম বছরদেড়েক মিঃ ফিনীই ক্যাম্পের কমাণ্ডাণ্টও ছিলেন। শুনিয়া বিস্মিত হউন যে, পুলিশ কর্মচারী ফিনী সাহেবের অধীনে নিযুক্ত হইয়া আসিলেন একজন সাহেব আই সি এস দুর্গের সহকারী কমাণ্ডাণ্টরূপে। ইহা হইতেই ফিনী সাহেবের দক্ষতা অনুমান আপনারা করিয়া লইতে পারিবেন। বয়সও তেমন বেশী নহে, সাতাশ-আটাশ হইবে। এক কথায় ফিনী সাহেব ছিলেন আস্ত একটি ঘুঘু এবং তেমনি মাথা-ঠাণ্ডা মানুষ।

 গেটেই অর্থাৎ ক্যাম্পের অফিসেই সাহেবের একটু পরিচয় পাইয়া গেলাম। তখনও ক্যাম্পের ভিতর আমরা ঢুকিতে পারি নাই, কুলীরা মালপত্র নামাইয়া রাখিয়াছে, আমরা অফিসের ব্যারাকের বারান্দায় একে একে চৌদ্দজনই আসিয়া জমায়েৎ হইয়াছি, উত্তরদিকের গেট দিয়া দুইটি বৃহদাকার বাদামী রংয়ের কুকুর আসিয়া ক্যাম্পের আস্তানার মধ্যে প্রবেশ করিল। সিপাই শাস্ত্রী ও অফিসের বাবুদের মধ্যে চাঞ্চল্য লক্ষিত হইল। বুঝিলাম যে, কুকুরের প্রভু পশ্চাতে আসিতেছেন এবং তিনি ইহাদেরও প্রভু। ছড়ি হাতে, পাইপ মুখে,

৬৭