পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপন্যাস-প্রসঙগ বঙ্কিমচন্দ্র বিজ্ঞাপনে রঙ্গপাের জেলার যে Statistical Account-ঐর কথা বলিয়াছেন তাহাতে ‘দেবী চৌধরাণী” সম্পকে এইটকু উল্লেখ আছে : 'We catch a glimpse from the Lieutenant's report of a female dacoit by name Devi Chaudhurani, also in league with Bhawani Pathak. She lived in boats, had a large force of barkandazes in her pay and committed dacoities on her own account, besides receiving a share of the boty obtained by Pathak. Her title of Chaudhurani would imply that she was a Zamindar probably a petty one, else she need not have lived in boats for fear of capture.' পৰেব উক্ত হইয়াছে, বঙ্কিমচন্দ্ৰ অনশীলনতত্ত্বের মলি উদ্দেশ্য বাবাইতে গিয়া দেবী চৌধরাণী চরিত্র অঙ্কন করিয়াছেন। ‘বণ্ডিকমচন্দ্রের ত্রয়ী” প্রবন্ধে পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন দিক হইতে প্ৰফল্লি বা দেবী চৌধরাণী চরিত্রের বিশদ আলোচনা করিয়াছেন। বঙ্কিম-ব্যাখ্যাত নি✉কাম ধৰ্ম্মেমরি মািল সত্ৰ বঝিবার পক্ষে ইহা বড়ই সহায়ক। তিনি লিখিয়াছেন : “দেবী চৌধরাণী উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র তাঁহার Culture বা অনশীলন-তত্ত্বের সাহায্যে একটা মানৱষ গড়িতুে চেন্টা করিয়াছেন। এবার ground বা চিত্রের ক্ষেত্র রচিবার প্রয়াসটা বেশ পরিস্ফাট। দেবী চৌধরাণীর ক্ষেত্রে অতি সন্দর না হইলেও মনোহর বটে। দেবী চৌধরাণী যেন বৈষ্ণবের হাতের শান্তিমত্তি—কমলা নহে, ভৈরবী নহে, কালীও নহে; অথচ তিনের সমন্বয়ে এক অপব্ব বৈষ্ণবঠাকুরাণী । যখন শান্তিমত্তি, তখন পরষ সম্মম দৃঢ় ; ব্রজেশবের পিতৃশাসনে সম্পমােঢ়, প্ৰফল্লিরাপে সম্পমােঢ়। এই পরিষের তৃপিত-তুলিটি সাগর-বেী, বিরান্তি ও বিধতি নয়ান-বোঁ এবং ঐশবষয্য ও আকাঙক্ষা প্ৰফল্লি বা দেবী চৌধরাণী। প্রফােল্লকে সৰ্ব্বৈশবৰ্য্যশালিনী করিতে যাইয়া কবি গোলে পড়িয়াছেন। প্ৰফল্লকে এক রাত্রির জন্য সর্বামিসঙ্গে সখী করিয়া কবি সব্বৈশবায্যের পথে একটা কণ্টক বিদ্ধ করিয়া দিয়াছেন। তাহার পরিণাম দেবীরাণীর বুজেশবরের গহে আসিয়া বাসন-মাজা—ঘর-সংসার দেখা। যেমন কর্মী তেজস্বী ব্রাহ্মণ ডাকাতের হাত দিয়া কবি দেবীরাণীকে গড়িয়া তুলিলেন, সে গড়নের ফলে পরিষ ব্রজেশবের সোণা হইয়া যাইবার কথা। কিন্তু কবি প্রফল্লের সংস্পশোঁ ব্ৰজেশবরের মানবতার উন্মেষভওগী দেখান নাই। যেন প্ৰফল্লা আসিলে নয়ান-বোর ঝগড়া থামিল, সাগর-বৌয়ের অভিমান দরি হইল। আর ব্রজেশবের যেন “নিত্যঃ সৰ্ব্বগতঃ স্থাণ রচলোহয়ং সনাতনঃ’ পরিষের হিসাবে, প্রফল্লের প্রতি কৃতজ্ঞ হইয়া, সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ-প্ৰফল্লি, সাগর ও নয়ান-বেী—এই তিন গণে বিচরণ করিতে লাগিলেন। এই তিনের সমাধান করিলেন প্ৰফল্লি, সংসারে একটা negative সখের বা সাবস্তির লহর তুলিলেন প্রফতুল্ল, ফলভাগী হইল ব্ৰজেশবির। এইটকুর জন্য প্রফােল্লকে ব্যাকরণ, অলঙ্কার, দর্শন, বিজ্ঞান সবই শিখিতে হইল, কুস্তি করিতে হইল, লাঠি খেলিতে হইল, নানা ভঙ্গীতে ত্যাগের মক্স করিতে হইল, দেবীরাণীর দোকানদারি বসাইতে হইল, ডাকাতের দলের সন্দার হইতে হইল! ভবানী পাঠকের গরগিরির পয্যবসান হইল সাদামাঠা গহসেথর কুলাঙ্গনার ঘর-গহস্থালীর কাৰ্য্যে—বাসন মােজায় ও সপত্নী বশীকরণে। আদিরসের কবি আদিরসটিকু ভুলিতে পারেন নাই... । এতটা শিক্ষার পরেও প্রফল্পে বৈষ্ণবী হইতে পারিলেন না, তান্ত্ৰিক মতে শান্ত ভৈরবী হইতেও পারেন নাই। ঝান্সীর রাণী বা রাণী দগাবতীর বা বাঙগালার সোনা বিবির এত শিক্ষা হয় নাই, তথাপি তাঁহারা শক্তিরাপিণী ছিলেন, অঘটন ঘটাইয়াছিলেন।...কিন্তু প্ৰফল্লি-চরিত্র অপৰিব; উহা বাঙ্গালার নহে, অথচ বেশ বাঙ্গালিয়ানা মাখান। উহা বাঙ্গালীর ঘরে কখনও ছিল না, বাঙ্গালীর ঘরে কখনও হইবে না। যে উদ্ভটতা শান্তিতে আছে, সে উচ্চভটতা প্ৰফীল্লেও ফটিয়াছে। কোনটা বাঙ্গালার নহে, ভারতবর্ষের নহে, অথচ কোনটাকেই বাঙ্গালীত্বের গন্ডী হইতে বাহিরে রাখা যায় না। বঙ্কিমচন্দ্রের এইটুকুই কারিগরি—এইটুকুই শিলপনৈপণ্য।” (পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যারের রচনাবলী, পঃ ১৪o-২) পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যতীত বিপিনচন্দ্ৰ পাল, ঠাকুরদাস মখোপাধ্যায়, ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমািখ বহা মনীষী ও সাহিত্যিক 'দেবী চৌধরাণীর বিশদ আলোচনা করিয়াছেন। বঙিকমচন্দ্র নিজে “দেবী চৌধরাণীর ইংরেজী অন্যবাদ করিয়াছিলেন। ইহার সমগ্ৰ পান্ডুলিপির কিয়দংশ মাত্র পাওয়া গিয়াছে। পরিষৎ-প্রকাশিত বঙ্কিম-রচনাবলীর ইংরেজী খন্ডে উহা মাদ্রিত হইয়াছে। ১৮৯৩ সনে অমাতসর হইতে এবং ১৯o৬ সনে লক্ষেী হইতে ‘দেবী চৌধরাণী’র ইংরেজী অনাবাদ প্রকাশিত হয়। ‘দেবীচন্দ্ৰপ্ৰভা’ নামে ইহার তামিল অনাবাদ এবং ১৯o৯ সনে তেলংগ অনাবাদ বাহির হয়। ১৮৯৯ সনে মহীশরে হইতে কানাড়ী অনাবাদও প্রকাশিত হয়। অতুলকৃষ্ণ মিত্র ‘দেবী চৌধরাণীর নাট্যরপ দেন। 8 a