পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী একটা সেকেলে—তখনকার পক্ষেও সেকেলে মোহর পাওয়া গেল। কৃষ্ণগোবিন্দ সেখানে আরও খড়িল। এক ভাঁড় টাকা পাইল । এই টাকাগলি না পাইলে কৃষ্ণগোবিন্দের দিন চলা ভার হইত। এক্ষণে স্বচ্ছন্দে দিনপাত হইতে লাগিল। কিন্তু কৃষ্ণগোবিন্দের এক নতন জবালা হইল। টাকা পাইয়া তাহার স্মরণ হইল যে, এই রকম পরাতন বাড়ীতে অনেকে অনেক ধন মাটির ভিতর পাইয়াছে। কৃষ্ণগোবিন্দের দঢ় বিশ্ববাস হইল, এখানে আরও টাকা আছে। সেই অবধি কৃষ্ণগোবিন্দ অন্যদিন প্রোথিত ধনের সন্ধান করিতে লাগিল। খাজিতে খাজিতে অনেক সরঙগ, মাটির নীচে অনেক চোরকুঠরি বাহির হইল। কৃষ্ণগোবিন্দ বান্তিকগ্রস্তের ন্যায়। সেই সকল স্থানে অনসন্ধান করিতে লাগিল, কিন্তু কিছ, পাইল না। এক বৎসর এইরাপ ঘরিয়া ঘরিয়া কৃষ্ণগোবিন্দ কিছ. শান্ত হইল। কিন্তু তথাপি মধ্যে মধ্যে নীচের চোর-কুঠরিতে গিয়া সন্ধান করিত। এক দিন দেখিল, এক অন্ধকার ঘরে, এক কোণে একটা কি চকচক করিতেছে। দৌড়িয়া গিয়া তাহা তুলিল—দেখিল, মোহর! ইন্দিরে মাটি তুলিয়াছিল, সেই মাটির সঙ্গে উহা উঠিয়াছিল। কৃষ্ণগোবিন্দ তখন কিছ: করিল না, হাটবারের অপেক্ষা করিতে লাগিল। এবার হাটবারে বৈষ্ণবীকে বলিল, “আমার বড় অসংখ করিয়াছে, তুমি হাট করিতে যাও।” বৈষ্ণবী সকালে হাট করিতে গেল। বাবাজী বঝিলেন, বৈষ্ণবী এক দিন ছটি পাইয়াছে শীঘ্য ফিরিবে না। কৃষ্ণগোবিন্দ সেই অবকাশে সেই কোণ খাড়িতে লাগিল। সেখানে কুড়ি ঘড়া ধন বাহির হইল। পর্ববর্তীকালে উত্তর-বাঙ্গালায়, নীলধবজবংশীয় প্রবল পরাক্লান্ত রাজগণ রাজ্য করিতেন। সে বংশে শেষ রাজা নীলাম্বর দেব । নীলাবরের অনেক রাজধানী ছিল—অনেক নগরে অনেক রাজভবন ছিল। এই একটি রাজভবন। এখানে বৎসরে দই এক সপতাহ বাস করিতেন। গৌড়ের বাদশাহ একদা উত্তর-বাওগালা জয় করিবার ইচ্ছায় নীলাম্বরের বিরদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করিলেন। নীলাম্বর বিবেচনা করিলেন যে, কি জানি, যদি পাঠানের রাজধানী আক্ৰমণ করিয়া অধিকার করে, তবে পািকব পােবনষদিগের সঞ্চিত ধনরাশি তাহদের হস্তগত হইবে। আগে সাবধান হওয়া ভাল। এই বিবেচনা করিয়া যন্ধের পর্বে নীলাম্বর অতি স৩েগাপনে রাজভান্ডার হইতে ধন সকল এইখানে আনিলেন। সর্বহস্তে তাহা মাটিতে পতিয়া রাখিলেন। আর কেহ জানিল না। যে কোথাব্য ধন রহিল। যমুদ্ধে নীলাম্বর বন্দী হইলেন । পাঠান-সেনাপতি তাঁহাকে গৌড়ে চালান করিল। তার পর আর তাঁহাকে মনষ্যিলোকে কেহ দেখে নাই। তাঁহার শেষ কি হইল, কেহ জানে না । তিনি আর কখনও দেশে ফেরেন নাই। সেই অবধি তাঁহার ধনরাশি সেইখানে পোঁতা রহিল। সেই ধনরাশি কৃষ্ণগোবিন্দ পাইল। সবৰ্ণ, হীরক, মন্তা, অন্য রত্ন অসংখ্য— অগণ্য, কেহ স্থির করিতে পারে না কত। কৃষ্ণগোবিন্দ কুড়ি ঘড়া এইরােপ ধন পাইল । কৃষ্ণগোবিন্দ ঘড়াগলি সাবধানে পতিয়া রাখিল । বৈষ্ণবীকে এক দিনের তরেও এ ধনের কথা কিছই জানিতে দিল না। কৃষ্ণগোবিন্দ অতিশয় কৃপণ, ইহা হইতে একটি মোহর লইয়াও কখনও খবচ করিল না। এ ধন গায্যের রক্তের মত বোধ কবিত। সেই ভাঁড়ের টাকাতেই কায়ক্লেশে দিন চালাইতে লাগিল। সেই ধন এখন প্রফতুল্ল পাইল । ঘড়াগলি বেশ করিয়া পদুতিয়া রাখিয়া আসিযা প্রফ ব্ল শযন করিল। সমস্ত দিনের পরিশ্রমের পর, সেই বিচলির বিছানায় প্রফতুল্ল শীঘ্রই নিদ্রায় অভিভূত হইল। দশম পরিচ্ছেদ এখন একট, ফলমণির কথা বলি। ফলমণি নাপিতনী হরিণীর ন্যায় বাছিয়া বাছিয়া দ্রতপদ জীবে প্রাণ-সমাপণ করিয়াছিল। ডাকাইতের ভয়ে দলভিচন্দ্র আগে আগে পলাইলেন, ফলমণি পােছ পােছ ছটিযা গেল। কিন্তু দলভের এমনই পলাইবার রোখা যে, তিনি পশ্চাদ্ধাবিতা প্রণয়িনীর কাছে নিতান্ত দলভ হইলেন। ফলমণি যত ডাকে, “ও গো দাঁড়াও গো! আমায় ফেলে যে ও না গো!” দলভিচন্দ্র তত ডাকে, “ও বাবা গো । ঐ এলো গো!” কাঁটা-বনের ভিতর দিযা, পাগার লাফাইয়া, কাদা ভাঙিগয়া, উদ্ধদৰ্শবাসে দলভ ছোটে—হায়! কাছা খালিয়া গিয়াছে, এক পায়ের নাগরা জােতা কোথায় পড়িয়া গিয়াছে, চাদরখানা একটা কাঁটা-বনে বিধিয়া তাঁহার বীরত্বের নিশানস্বরপ বাতাসে উড়িতেছে। তখন ফলমণি সন্দরী হাঁকিল, “ও fʼO V