পাতা:বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

›ፃፃ° পদ্মলোচন রায়ের কন্যা। অগ্নিকাণ্ড । বঙ্গ-সাহিত্য-পরিচয় । কোলে লইয়া বলিতে লাগিলেন তুমি কাহার কন্যা জান না তুমি পদ্মলোচন রায়ের কন্যা। ঐ কথা শুনিয়া আমি নীরব হইয়া থাকিলাম । কিন্তু মনের মধ্যে বড় কষ্ট হইতে লাগিল। কি প্রকার দুর্ভাবনা উপস্থিত হইতে লাগিল তাহা আমি বুঝিতে পারিলাম না। মন আমার কিছুতেই স্থির হইল না। তখন আমি বলিলাম পিসি আমি কেমন করিয়া পদ্মলোচন রায়ের কন্যা হইলাম। তখন তিনি হাসিতে হাসিতে বলিলেন এমন নিৰ্ব্বোধ মেয়ে কোথা ছিল কিছুই বুঝে না। শুন বুঝাইয়া দিই তোমার পিতা তোমার মাতাকে বিবাহ করিয়া আনিয়াছিলেন সেই জন্ত তুমি তাহার কন্যা। শুনিয়া আমার অধিক চিন্তা হইতে লাগিল। আমি ভাবিয়া ভাবিয়া পুনৰ্ব্বার বলিলাম তিনি তবে কোথা গিয়াছেন। পিসী বলিলেন ম৷ ও কথা বলিয়া আর জালাইও না তিনি মরিয়াছেন। ঐ মরা নাম শুনিয়া আমার অতিশয় ভয় হইল। আমি মনে মনে বলিতে লাগিলাম মা বলিয়াছেন ভয় হইলে দয়ামাধবকে ডাকিও । আমার কাছে যদি মর আইসে তবে আমি সেই দয়ামাধবকেই ডাকিব। এই ভাবিয়া মনকে কতক স্থির করিলাম। ইতিমধ্যে আমাদের বাটীর কাছে এক বাটতে এক দিবস রাত্রে আগুন লাগিয়াছে তখন আমার তিন জন ছোট। আমার দুই বৎসরের বড় এক ভাই আর আমার দুই বৎসরের ছোট এক ভাই ইহার মধ্যে আমি। আমাদের বাটীর নিকট একটা মাঠ আছে। সে স্থানে লোকের বসতি নাই এবং বৃক্ষাদি কিছুই নাই। কেবল ক্রোশ খানেক অন্তরে একটা নদী আছে। তখন আগুন দেখিয়া আমাদের বাটীর নিকটস্থ লোকেরা ঐ মাঠে সকলে জিনিষপত্র সকল বাহির করিতেছে। সেই স্থানে আমাদের তিন জনকেও রাখা হইয়াছে। সে বাটীতে আগুন ধক ধক্ করিয়া জলিতেছে। তথাকার সকল লোক চীৎকার শব্দ করিতেছে। কত লোক কান্না আরম্ভ করিয়াছে। ঘরের বঁাশ রুয়া চট পট করিয়া শব্দ করিতেছে। নানা প্রকার গোল হইতেছে। আমরা তিন জনে কান্দিতেছি। ঐ আগুন যখন আমাদের বাটীতে লাগিয়া এককালে প্ৰজলিত হইয়া জলিয়া উঠিল তখন আমাদের জ্ঞান হইল যেন আগুনে পুড়িয়া মরিলাম। এই ভাবিয়া তিন জনে কান্দিতে কান্দিতে ঐ মাঠের দিকে চলিলাম। তখন আমরা এক একবার পিছনের দিকে চাহিয়া দেখি আগুন জ্বলিতেছে। আমরা আরও দৌড়িয়া যাইতে লাগিলাম। এই প্রকার যাইতে যাইতে সেই নদীর কূলে গিয়া উপস্থিত হইলাম।