পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

)నb’ থাকিয়া যাইত, কারণ এ বিরোধ লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর-ধন এবং জ্ঞানের প্রকৃতিগত । গল্প আছে, সম্রাটু তৈমুর যখন সমরখণ্ডের অধিপতি, তখন সেই রাজ্যে একজন প্রসিদ্ধ কবি বর্তমান ছিলেন । কোন রূপবতী রমণীর গণ্ডদেশে একটি তিল-চিহ্ন ছিল, তাহাতে সেই রমণীর সৌন্দর্য্য যেন আরও বদ্ধিত হইয়াছিল। কবি ঐ রমণীর রূপ বর্ণনা করিড়ে করিড়ে একেবারে আত্মার হইয়া পড়েন, এবং বর্ণনার একস্থলে বলিয়া ফেলেন, “আমি ঐ তিলের সৌন্দৰ্য্যটুকু পাইলে সমরখণ্ডের রাজত্বটা দিয়া ফেলিতে পারি।” কালক্রমে তৈমুর একদিন ঐ কবিতা শুনিতে পাইয়া কবিকে ডাকিয়া পাঠান। কবি উপস্থিত হইলে তিনি ক্রোধভরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার এত আম্পৰ্দ্ধ যে একটা স্ত্রীলোকের সৌন্দর্ঘ্যের বিনিময়ে আমার রাজ্যটা দিয়া ফেলিতে চাও?” তখন কবি শাস্ত ও বিনীতভাবে যুক্তকরে নিবেদন করিলেন, ‘ রাজন ! কবির চিরকাল এইরূপ অমিতব্যয়ী, তাই তাঙ্গদের দরিদ্রত ঘুচে না।” এই গল্পটার মধ্যে-লক্ষ্মী-সরস্বতীর চিরগ্রসিদ্ধ বিরোধের মধ্যে—একটা বিজ্ঞান প্রচ্ছন্ন আছে। যাহারা জ্ঞানের সেবা করে, তাতারা স্বভাবতই ধনকে অসার ক্ষণস্থায়ী তৃণবৎ মনে করে, সুতরাং ধন উপার্জন করিলেও সঞ্চয় করিতে পারে না । আর যাহারা ধনের সেবা করে, তাঙ্গরা জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত উপলব্ধি করিলেও তাহীর আদর করিতে পারে ন— পাছে দরিদ্র হইয়া পড়ে, এই ভয়ে তাহার কাছে ঘোঁসিতে চায় না । এই হইল সাধারণ বঙ্গদর্শন ১২শ বর্ষ, আষাঢ়, ১৩১৯ নিয়ম, ইহার ব্যতিক্রমু অল্প স্থলেই দেখ যায়। জ্ঞান-সেবকের হৃদয়ে পার্থিব সম্পদের উচ্চাভিলাষ কুত্ৰাপি দেখা যায় না। কেবল অন্ন বস্ত্রের চিন্ত হইতে নিস্কৃতি পাইলেই তিনি হৃদয়ের অবিভক্ত অনুরাগ জ্ঞান-সেবায়-- সাহিত্য-চৰ্চায় উৎসর্গ-করিতে পারেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অনেকের ভাগ্যে এই সামান্ত অন্ন-বস্ত্রের চিন্তাই সাহিত্য-সেবার ঘোর প্রতিবন্ধক হইয়া উঠে। অন্ন-চিন্তায় কালিদাসের কবিতাও কুষ্ঠিত হইয়াছিল, অন্নাভাবে সেগ পীয়রকেও হরিণ চুরি করিতে হইয়াছিল। আর অন্যে পরে কী কথা । এইখানে ধনবানের একটি কর্তব্য দেখ যাইতেছে। ধনবান বলিতেছেন, জাতীদ জীবনীশক্তি সাহিত্যের মধ্যেই নিহিত, সুতরা জাতীয়মঙ্গলের জন্যই জাতীয়সাহিত্যের পরিপোষণ করা তাহার পক্ষে নিতান্ত উচিত। প্রত্যক্ষ ভাবে, স্বয়ং লেখনী ধারণ করিয়া যদি সরস্বতীর অর্চনা করিতে পারেন, ভালই; কিন্তু যদি তাহা না পারেন, তাই হইলে প্রতিনিধি বা পুরোহিতের দ্বারা-- যাহারা সাহিত্য সেবায় জীবন উৎসর্গ করেন, তাঙ্গদের সহায়তাদ্বার—এ আর্চনা সম্পাদন করিতে পারেন। কত রাজা, কত মহারাজ, বিলাসের ক্রেড়ে জন্ম গ্রহণ করিয়া, মণিমাণিক্যে দেহ খচিত রাথিয়া, গণ-রৌপে গড়াগড়ি দিতে দিতে, স্তাবকবর্গের শ্রঠি মধু স্তবলহরী শুনিতে শুনিতে ভবনাট্যশাল হইতে চলিয়া গিয়াছেন। আজ তাহারা সকলে? বিস্কৃতির গাঢ় অন্ধকারে বিলীন ঈষ্টর গিয়াছেন, নিজের নামটি পর্য্যন্ত জন-সমাঠে