পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় সংখ্যা । ] তোড়া। কিন্তু বেশভূষায় কতক কতৃক পার্থক্য থাকিলেও এক বিষয়ে নিৰ্ব্বিশেষ একতা সকলের ভিতর বিরাজ করিতেছিল। সকলেরই মুখে সিগারেটু অবিশ্রামে ধূমো দগর করিয়া সে স্থান “অতিসেবা” করিয়া তুলিয়াছিল। কেবল বিরজামোছন এই দলের ভিতর একটু স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিয়া চলিয়াছিলেন। ধূমপানে তিনি তেমন অভ্যস্ত হন নাই এবং উড়ানিতে সার্টের শোভা আবৃত করিয়া নীরবে একমনে “কৃষ্ণচরিত্র” পাঠ করিতেছিলেন। দেখিয়া সদ্যোবিবাহিত, সোণারচসম-পরিহিত অষ্টাদশবর্ষের একটি ছেলে— শুনিলাম, এইবার সে এন্ট্রান্স ক্লাসে উঠিয়াছে—ছেলেটি নুতন সিগারেটে দীপশলাক ংযুক্ত করিতে করিতে তাহাকে স্বধাইল— “মশায়ের কি কোন শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণে যাওয়৷ হচ্চে ?” এই প্রশ্নে খুব একটা হাসির রোল পড়িয়া গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে গাড়ীও হাবড়া ছাড়িয়া চলিল। তখন জামাইবাবুর দল তিনবার “হিপূ ছিপ্‌ হুররে” করিয়া আনন্দ-• ধ্বনি করিলেন। গাড়ী ছাড়িলে কক্ষে কক্ষে হাস্য ও গীতের স্রোত যেরূপ তরঙ্গায়িত হইয়। উঠিল, তাহ অনুমান করা যায়, কিন্তু বর্ণনা করা যায় না । বনে আগুন লাগিলে পক্ষিকুলের কাকলীতে যেমন অন্তান্ত জীবজন্তুর হ্রস্ব-দীর্ঘ স্বর সংযুক্ত হইয়া একটা বিচিত্র কড়ি-কোমল অথচ অস্পষ্ট ধ্বনি জাগ্রত হইয় উঠে—সেই চলিষ্ণু এবং শব্দায়মান বাষ্পরথের সেই দ সকাল-সকাল স্নানাহার করিয়া একটি छांभाई-रुष्ठी । । У е প্রৌঢ়ৱয়স্ক ভদ্রলোক এই গাড়ীতে বৰ্দ্ধমান যাইতেছিলেন। গাড়ী হাবড়া-ষ্টেশন পার হইলেই, তিনি একটু নিভৃত কোণ খুজিয়৷ নিদ্রার আয়োজন করিলেন। কিন্তু জামাইবাবুদের দৌরাত্ম্যে লীলুয়ায় ট্রেণ পামিতে ন। থামিতে তাহাকে উঠিয়া বসিতে হইল । দেখিয়া সেই এনট্রান্স-ক্লাসে পড়া বাবুট স্মিতমুখে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মশায়ের কোথায় যাওয়া হচ্চে ? অবশু শ্বশুরালয়ে ?” প্রৌঢ় ভদ্রলোক ঈষৎ বিরক্তিসহকারে উত্তর দিলেন, “কিসে মশায়ের এমন অনুমানটা হলো ? আমি ত কোন সাজ-সজ্জা করিনি ?” উত্তর । মশায়দের কালে অবিবশুি) অনেক সাজসজ্জা করে এখন জাওর কাটচেন ! আপনাদের কথা বলতে গিয়েই না দীনবন্ধুবাবু গেয়েছিলেন, “ভাইপোরে লজ্জা দিয়ে সাজিলেন জ্যাঠা?” আবার ভারি হাসি পড়িয়া গেল । কেহ বলিয়া উঠিল—“বেঁচে থাক বাব ! সাবাস ছেলে ! এডিটরি করে খেতে পারবে !” যুবকদের ধৃষ্টতায় প্রৌঢ়ের সহিষ্ণুতা সীমা অতিক্রম করিল। অপেক্ষাকৃত তীব্রকণ্ঠে তিনি বলিলেন, “এখন কি তার সেকাল আছে হে বাপু, আজকাল যে সবই উণ্টা, ভাইপোরাই যে এখন জ্যাঠা হয়ে বসেছে।” প্রৌঢ়ের মুখে অকস্মাৎ এরূপ কঠোর উত্তরের আশঙ্কা ছিল না বলিয়া, কথাটায় সদল এন্‌ষ্ট্ৰান্স ক্লাসের যুবক যেন একটু খতমত খাইয় গেল, যেন জোকের রিই মাখিল না, বরং বাহাদুরী জানা