পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مووا ھ বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, শ্রাবণ । এ প্রশ্ন তখনকার আর্য্যমণ্ডলীর প্রশ্ন । আমাদের আর্য্যদেবতারা স্বৰ্গবাসী , তাহার। বিকৃতিহীন, সুন্দর, সম্পৎশালী । যে দেবতা স্বর্গবিহারী নহেন, ভষ্ম, নৃমুণ্ড, রুধিরাক্ত হস্তিচৰ্ম্ম যাহার সাজ, তাহার নিকট হইতে কোন কৈফিয়ৎ না লইয়া তাহাকে দেবসভায় স্থান দেওয়া যায় না । মহেশ্বর উত্তর করিলেন, “কল্লাবসানে যখন জগৎ জলময় ছিল, তখন আমি উরু ভেদ করিয়া একবিন্দু রক্তপাত করি । সেই রক্ত হইতে অও জন্মে, সেই অও হইতে ব্ৰহ্মার জন্ম হয়। তৎপরে আমি বিশ্বস্বজনের উদ্দেশে প্রকৃতিকে স্বজন করি । সেই প্রকৃতি-পুরুষ হইতে অন্তান্ত প্রজাপতি ও সেই প্রজাপতিগণ হইতে অখিল প্রজার স্বষ্টি হয়। তখন, আমিই চরাচরের স্বজনকৰ্ত্তা বলিয়া ব্ৰহ্মার মনে দৰ্প হইয়াছিল। সেই দৰ্প সহ করিতে না পারিয়া আমি ব্ৰহ্মার মুগুচ্ছেদ করি—সেই অবধি আমার এই মহাত্ৰত, সেই অবধিই আমি কপালপাণি ও শ্মশানপ্রিয় । এই গল্পের দ্বারা একদিকে ব্ৰহ্মার পূর্বতন-প্রাধান্তচ্ছেদন ও ধূর্জটির আর্য্যরীতিবহিভূত অদ্ভুত আচারেরও ব্যাখ্যা হইল। এই মুণ্ডমালী প্রেতেশ্বর ভীষণ দেবতা আর্য্যদের হাতে পড়িয়া ক্রমে কিরূপ পরম শাস্ত যোগরত মঙ্গলমূৰ্ত্তি ধারণ করিয়া বৈরাগ্যবানের ধ্যানের সামগ্ৰী হইয়াছিলেন, তাহা কাহারও অগোচর নাই । কিন্তু তাহাও ক্রমশ হইয়াছিল। অধুনাতন-কালে দেবী চণ্ডীর মধ্যে যে ভীষণ চঞ্চলভাবের আরোপ করা হইয়াছে, এক সময়ে তাহ প্রধানত শিবের ছিল। শিবের এই ভীষগুত্ব কালক্রমে চণ্ডীর মধ্যে বিভক্ত হইরা শিব একান্ত শান্ত-নিশ্চল যোগীর ভাব প্রাপ্ত হইলেন। ' কিল্লরজাতিসেবিত হিমাদ্রি লভঘন করিয়া কোন শুভ্রকায় রজতগিরিনিত প্রবলজাতি এই দেবতাকে বহন করিয়া আনিয়াছে ? অথবা ইনি লিঙ্গপুঞ্জক দ্রাবিড়গণের দেবতা, অথবা ক্রমে উভয় দেবতায় মিশ্রিত হইয়া ও আর্য্য-উপাসকগণকর্তৃক সংস্কৃত হইয়া এই দেবতার উদ্ভব হইয়াছে, তাহা ভারতবর্ষীয় আৰ্য্যদেবতত্ত্বের ইতিহাসে আলোচ্য । সে ইতিহাস এখনো লিখিত হয় নাই। আশা করি, তাহার অন্ত ভাষা হইতে অনুবাদের অপেক্ষায় আমরা বসিয়া নাই । কখনো সাংখ্যের ভাবে, কখনো বেদান্তের ভাবে, কখনো মিশ্রিত ভাবে, এই শিব-শক্তি কখনো বা জড়িত হইয়া, কখনো বা স্বতন্ত্র হইয়া, ভারতবর্ষে আবর্তিত হইতেছিলেন । এই রূপান্তরের কালনির্ণয় দুরূহ। ইহার বীজ কখন ছড়ান হইয়াছিল এবং কোন বীজ কখন অস্কুরিত হইয়া বাড়িরা উঠিয়াছে, তাহা সন্ধান করিতে হইবে । ইহা নিঃসন্দেহ যে, এই সকল পরিবর্তনের মধ্যে সমাজের ভিন্ন ভিন্ন স্তরের ক্রিয়া প্রকাশিত হইয়াছে। বিপুল-ভারতসমাজ-গঠনে নানাজাতীয় স্তর যে মিশ্রিত হইয়াছে, তাহ নিয়তই আমাদের ধৰ্ম্মপ্রণালীর নানা বিসদৃশ ব্যাপারের বিরোধ ও সমন্বয়চেষ্টার স্পষ্টই বুঝা যায়। ইহাও বুঝা যায়, অনার্য্যগণ মাঝে মাঝে প্রবল হইয়া. উঠিয়াছে এবং আর্য্যগণ তাহদের