পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ●● ৰঙ্গশন । [ ২য় বর্ষ, শ্রীষণ । ’ কৃশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ভদ্রমণ্ডলীর প্রতি বিহারীর অনেকদিন হইতে করুণাদৃষ্টি ছিল—তাহtদিগকে বিহারী বনের ছায়াটুকু ও গঙ্গার খোলা হাওয়া দান করিবার সঙ্কল্প করিল। বালিতে বাগান লইয়া চীনে মিস্ত্রির সাহায্যে সে সুন্দর করিয়া ছোট ছোট কুটার তৈরি করাইতে আরম্ভ করিয়া দিল । কিন্তু তাহার মন শান্ত হইল না। কাজে প্রবৃত্ত হইবার দিন তাহার যতই কাছে আসিতে লাগিল, ততই তাহার চিত্ত আপন সঙ্কল্প হইতে বিমুখ হইয়া উঠিল। তাহার মন কেবলি বলিতে লাগিল, “এ কাজে কোন মুথ নাই, কোন রস নাই, কোন সৌন্দর্য্য নাই,—ইহা কেবল শুষ্ক ভারমাত্র !” কাজের কল্পনা বিহারীকে কখনো ইতিপূৰ্ব্বে এমন করিয়া ক্লিষ্ট করে নাই । একদিন ছিল, যখন বিহারীর বিশেষ কিছুই দরকার ছিল না ; তাহার সম্মুখে যাহা কিছু উপস্থিত হইত, তাহার প্রতিই অনায়াসে সে নিজেকে নিযুক্ত করিতে পারিত । এখন তাহার মনে একটা-কি ক্ষুধার উদ্রেক হইয়াছে, আগে তাহাকে নিবৃত্ত না করিয়া অন্ত কিছুতেই তাহার আসক্তি হয় না । পূৰ্ব্বেকার অভ্যাসমতে সে এটা-ওটা নাড়িয়া দেখে, পরক্ষণেই সে-সমস্ত পরিত্যাগ করিয়া নিস্কৃতি পাইতে চায়। বিহারীর মধ্যে যে যৌবন নিশ্চলভাবে সুপ্ত হইয়া ছিল, যাহার কথা সে কখনো চিন্তাও করে নাই, বিনোদিনীর সোণার কাঠিতে সে আজ জাগিয়া উঠিয়াছে। সদ্যোজাত গরুড়ের মত সে আপন থোরাকের জন্য সমস্ত জগৎটাকে ঘাটিয়া বেড়াইতেছে। এই ক্ষুধিত প্রাণীর সহিত বিহারীর পূর্ব পরিচয় ছিল না, ইহাকে লইয়া সে ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছে ; এখন কলিকাতার ক্ষীণজীর্ণ স্বল্পায়ু কেরাণীদের লইয়া সে কি করিবে ? আষাঢ়ের গঙ্গা সম্মুখে বহিয়া চলিয়াছে। থাকিয়া থাকির পরপারে নীলমেঘ ঘনশ্রেণী গাছপালার উপরে ভারাবনত নিবিড়ভাবে আবিষ্ট হইয়া উঠে ; সমস্ত নদীতল ইস্পাতের তরবারির মত কোথাও বা উজ্জল কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে, কোথাও বা আগুনের মত ঝকৃঝকৃ করিতে থাকে। নববর্ষার এই সমারোহের মধ্যে যেমনি বিহারীর দৃষ্টি পড়ে, অমনি তাহার হৃদয়ের দ্বার উদঘাটন করিয়া আকাশের এই নীল-স্নেগ্ধ আলোকের মধ্যে কে একাকিনী বাহির হইয়া আসে, কে তাহার স্নানসিক্ত ঘনতরঙ্গায়িত কৃষ্ণকেশ উন্মুক্ত করিয়া দাড়ায়,বর্ষাকাশ হইতে বিদীর্ণ মেঘচ্ছরিত সমস্ত বিচ্ছিন্ন রশ্মিকে কুড়াইয়। লইয়া কে একমাত্র তাহারই মুখের উপরে অনিমেষ-দৃষ্টির দীপ্ত-কাতয়তা প্রসারিত করে । পূর্বের যে জীবনটা তাহার মুখে-সন্তোষে কাটিয়া গেছে, আজ বিহারী সেই জীবনটাকে পরম ক্ষতি বলিরা মনে করিতেছে। এমন কত মেঘের সন্ধ্য, এমন কত পূর্ণিমার রাত্রি আসিয়াছিল, তাহারা বিহারীর শূন্তছদয়ের দ্বারের কাছে আসিয়া সুধাপাত্রহস্তে নিঃশব্দে ফিরিয়া গেছে,—সেই সকল দুর্লভ শুভক্ষণে কত সঙ্গীত অনারব্ধ, কত উৎসব অসম্পন্ন হইয়াছে, তাহার আর শেষ নাই! বিহারীর মনে ষে সকল পূৰ্ব্বস্তৃতি ছিল,