পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা । চোখের বালি । S& বিনোদিনী প্রতিবেশিল্পীদের বাড়ীতে গুেল । তাহারা তাঁহাকে দেখিয়া যেন চকিত হইয়া উঠিল । ওমা, বিনোদিনীর দিব্য ৰং সাফ* হইয়া উঠিয়ছে, কাপড়চোপড় ফিট্‌ফাটু, যেন মেমসাহেবের মত ! তাহারা পরস্পরে কি-যেন ইসারাজ কহিয়া বিনোদিনীর প্রতি লক্ষ্য করিয়া মুখচাওয়াচায়ি করিল। যেন কি-একটা জনরব শোনা গিয়াছিল, তাহার সহিত লক্ষণ মিলিল । বিনোদিনী তাহার পল্লী হইতে সৰ্ব্বতোভাবে বহুদূরে গিয়া পড়িয়াছে, তাহ পদে পদে অনুভব করিতে লাগিল । স্বগৃহে তাহার নিৰ্ব্বাসন । কোথাও তাহার এক মুহূৰ্ত্তের আরামের স্থান নাই। ডাকঘরের বুড়া পেয়াদ, বিনোদিনীর আবাল্যপরিচিত। পরদিন বিনোদিনী যখন পুষ্করিণীর ঘাটে স্বান করিতে উদ্যত হইয়াছে, এমন-সময় চিঠির বাগ লইয়া পেয়াদকে পথ দিয়া যাইতে দেখিয়া বিনোদিনী আর আত্মসংবরণ করিতে পারিল না। গামছা ফেলিয়। তাড়াতাড়ি উঠিয়া গিয়া তাহাকে ডাকিয়া কহিল, “পাচু দাদা, আমার চিঠি আছে , বুড়া কহিল, “না।” বিনোদিনী বাগ্র হইয়া কহিল, “থাকিতেও পারে । একবার দেখি ” বলিয়া পাড়ার অল্প খানপাচছয় চিঠি লইয়া উণ্টিয়া-পাণ্টিয়া দেখিল, কোনটাই তাছার নহে। বিমর্ষমুখে যখন ঘাটে ফিরিয়া আসিল, তখন তাহার কোন সৰু সকৌতুক কটাক্ষে কহিল, “কি লো বিন্দী, চিঠির জন্যে এত ব্যস্ত কেন ?” আর একজন প্ৰগলভা কহিল—“ভাল, ভাল, ডাকের চিঠি আসে, এত ভাগ্য কয় জনের ? অামাদের ত স্বামী, দেবর, ভাই, বিদেশে কাজ করে, কিন্তু ডাকের পেয়াদার দয়া হয় না ।” এইরূপে কথায় কথায় পরিহাস ফুটতর ও কটাক্ষ তীক্ষুতর হইয়া উঠিতে লাগিল। বিনোদিনী বিহারীকে অনুনয় করিয়া আসিয়াছিল, প্রত্যহ যদি নিতান্ত না ঘটে, তবে অন্তত সপ্তাহে দুইবার তাহাকে কিছু না-হয়-ত ছুইছত্র ও যেন চিঠি লেখে। আজই বিহারীর চিঠি পাইবার সম্ভাবনা অত্যন্ত বিরল, কিন্তু অাক।জ। এত অধিক হইয়া উঠিল যে, দূর-সস্তাবনার আশাও বিনোদিনী ছাড়িতে পারিল না । তাহার মনে হইতে লাগিল, যেন কতকাল কলিকাতা ত্যাগ করিয়াছে। " মহেন্দ্রের সহিত জড়িত করিয়া বিনোদিনীর নামে নিন্দ গ্রামের ঘরে ঘরে কিরূপ ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছে, শত্রু-মিত্রের কৃপায় বিনোদিনীর কাছে তাহা অগোচর রহিল না । শান্তি কোথায় ! গ্রামবাসী সকলের কাছ হইতে বিনোদিনী নিজেকে নিলিপ্ত করিয়া লইতে চেষ্টা করল । পল্লীর লোকেরা তাহাতে আরো রাগ করিল। . পাতকিনীকে কাছে লইয়া ঘৃণা ও পীড়ন করিবার বিলাসমুখ হইতে তাহারা বঞ্চিত হইতে চায় না। ক্ষুদ্রপল্লীর মধ্যে নিজেকে সকলের কাছ হইতে গোপনে রাখিবার চেষ্টা বৃথা । এখানে আহত হৃদয়টিকে কোণের অন্ধকারে লইয়া নির্জনে শুশ্রুষা করিবার অবকাশ নাই—যেখান-সেখান হইতে সকলের