পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミqや করিলে আসল জিনিষটিকে নষ্ট করা হয়। আমাদের সমালোচকের অনেকসময় নাটকনভেল হইতে তাহার নায়ক বা নায়িকাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া লইয়া অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে তাহাদের উৎকর্ষ-অপকর্ষ বিচার করিয়া থাকেন । আসামীকে কাঠগড়ার মধ্যে দাড় করাইয়া যে বিচার, সে বিচার কাব্যের নহে । তাহী রাজার বিচার, শাস্ত্রের বিচার, জ্ঞানের বিচার বা ধৰ্ম্মনীতির বিচার হইতে পারে, কিন্তু সাহিত্যের বিচার নহে । কাব্যের নায়িকা, কে লজ্জা বেশি করিয়াছে বা কম করিয়াছে, কে আত্মত্যাগ বেশি দেখাইয়াছে বা কম দেখাইয়াছে, কাহার মুখের কথাগুলি চুনিয়া লইয়া বিদ্যালয়ের নীতিবোধ দুইখণ্ড সঙ্কলিত হইতে পারে এবং কাহার কথায় কেবল একখণ্ডমাত্র হয়, এ সমস্ত আলোচনা অধিকাংশস্থলেই অমর্থক । সমস্ত কাব্য তাহার দেশ-কালপাত্ৰ লইয়া তাহার ব্যক্ত ও অনতিব্যক্ত ভাবে, ভঙ্গীতে ও ভাষায় যে কথা মুখ্যত ও গৌণত প্রকাশ করিতে থাকে, তাহাকে অবিচ্ছিন্নভাবে গ্রহণ করিতে পারিলে তবেই তাহার যথার্থ রস গ্রহণ করা হয় । শ্রেষ্ঠকাব্য, বিশেষত নাটক, অন্তঃপুরবিশেয,—সে আপনার সৌন্দর্য্যলক্ষ্মীকে বাহিরে আসিতে দেয় না। আমি ত শকুন্তলাসম্বন্ধে ইহাই বিশেষরূপে অনুভব করিয়া থাকি। শকুন্তলার ছবিটি যে পটের উপর অঙ্কিত হইয়াছে, সে পট হইতে সেই চিত্রটিকে তুলিয়া লইবার চেষ্টামাত্র আমার মনে উদয় হয় না । ইহা আঠ দিয়া জোড়া নহে, ইহা বিচিত্র বঙ্গদর্শন । [ ২য় বর্ষ, আশ্বিন । বর্ণের দ্বারা প্রতিফলিত। ইছুকে খুটিয়া তুলিলে ইহা কেবল রং, ইহাকে একত্রে দেখিলে ইহা ছবি । একত্রে যখন দেখি, তখন ইহার শান্তি, সৌন্দৰ্য্য ও পবিত্রতা অনিৰ্ব্বচনীয়ভাবে আমাদের মনকে আবিষ্ট করে। তখন অন্ত কোন কাবোর সহিত ইহার তুলনা করিবার প্রবৃত্তিই আমাদের মনে জন্মিতে পারে না । কিন্তু যখন এ কথা বলি যে, দেখা যাক শকুন্তলা ভাল কি মিরান্দা ভাল, তখন আমরা কাব্যের ধনকে কাব্যের অধিকার হইতে বাহির করিয়া আনি । কারণ, শকুন্তলা ত অভিজ্ঞানশকুন্তল-কাব্য নহে, সে ত কাব্যের উপাদানমাত্র। স্বতন্ত্র করিয়া দেখিলে তাহার ভালমন্দের আদর্শও স্বতন্ত্র হহয় দাড়ায় । কাব্যের ভিতরে তাহার যে শ্রেষ্ঠত্ব, কাব্যের বাহিরে তাহার সে শ্রেষ্ঠত্ব কোথার ? এইজন্য যুরোপের কবিকুলগুরু গেটে একটিমাত্র শ্লোকে শকুন্তলার সমালোচনা লিথিয়াছেন, তিনি কাব্যকে খণ্ডখণ্ড,বিচ্ছিন্ন করেন নাই। তাহার শ্লোকটি একটি দীপবৰ্ত্তিকার শিখার হ্যায় ক্ষুদ্র, কিন্তু তাহা দীপশিখার মতই সমগ্র শকুন্তলাকে একমুহূৰ্ত্তে উদ্ভাসিত করিয়া দেখাইবার উপায় । তিনি এক কথায় বলিয়াছেন, কেহ যদি তরুণ বৎসরের ফুল ও পরিণত বৎসরের ফুল, কেহ যদি মৰ্ত্ত্য ও স্বর্গ একত্রে দেখিতে চায়, তবে শকুন্তলায় তাহ পাইবে । r অনেকেই এই কথাটিকে কবির উচ্ছ্বাসমাত্র মনে করিয়া লঘুভাবে পাঠ করিয়া থাকেন। তাছার মোটামুটি মনে করেন,