পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミレb" আবখ্যক । শিশুকালের শান্তির মধ্য হইতে বাহির হইয়া সংসারের বিরোধ-বিপ্লবের মধ্যে না পড়িলে, পরিণতবয়সের পরিপূর্ণ শাস্তির আশা বৃথা। প্রভাতের স্নিগ্ধতাকে মধ্যাহ্বতাপে দগ্ধ করিয়া তবেই সায়াহ্লের লোকলোকান্তরব্যাপী বিরাম। পাপে-অপরাধে ক্ষণভঙ্গুরকে ভাঙিয়া দেয় এবং অনুতাপে-বেদনায় চিরস্থায়ীকে গড়িয়া তোলে। শকুন্তলা-কাব্যে কবি সেই স্বৰ্গচুতি হইতে স্বগপ্রাপ্তি পৰ্য্যন্ত সমস্ত বিবৃত করিয়াছেন। বিশ্ব প্রকৃতি যেমন বাহিরে প্রশান্ত-সুন্দর, কিন্তু তাহার প্রচণ্ড শক্তি অহরহ অভ্যস্তরে কাজ করে, অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকখানির মধ্যে আমরা তাহার প্রতিরূপ দেখিতে পাই । এমন আশ্চর্য্য সংযম আমরা কোন নাটকেই দেখি নাই। প্রবৃত্তির প্রবলতাপ্রকাশের অবসর মাত্র পাইলেই য়ুরোপীয় কবিগণ যেন উদাম হইয় উঠেন। প্রবৃত্তি যে কতদূর পৰ্য্যস্ত যাইতে পারে, তাহ অতিশয়োক্তিদ্বারা প্রকাশ করিতে তাহারা ভালবাসেন । শেক্সপিয়রে রোমিয়ো-জুলিয়ে প্রভৃতি নাটকে তাহার ভুরিভুরি দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। শকুস্তলীর মত এমন প্রশান্ত-গভীর, এমন ংঘত-সম্পূর্ণ নাটক শেক্সপিয়রের নাট্যবলির মধ্যে একখানিও নাই । দুৰ্য্যন্ত-শকুস্তলার মধ্যে যেটুকু প্রেমালাপ আছে, তাহ। অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, তাহার অধিকাংশই আভাসেইঙ্গিতে ব্যক্ত হইয়াছে, কালিদাস কোথাও রাশ আলগা করিয়া দেন নাই। অন্ত কবি যেখানে লেখনীকে দৌড় দিবার অবসর অন্বেষণ করিত, তিনি সেখানেই তাহাকে হঠাৎ নিরস্ত করিয়াছেন । হুষ্যস্ত তপোবন হইতে বঙ্গদর্শন । | ২য় বর্ষ, আশ্বিন রাজধানীতে ফিরিয়া গিয়া শকুন্তলার কোন খোজ লইতেছেন না। এই উপলক্ষ্যে বিলাপপরিতাপের কথা অনেক হইতে পারিত, তবু শকুন্তলার মুথে কবি একটি কথাও দেন নাই। কেবল দুৰ্ব্বাসার প্রতি আতিথ্যে অনবধান লক্ষ্য করিয়া হতভাগিনীর অবস্থা আমরা যথাসম্ভব কল্পনা করিতে পারি। শকুন্তলার প্রতি কর্থের একান্ত স্নেহ বিদায়কালে কি সকরুণ গাম্ভীৰ্য্য ও সংযমের সহিত কত অল্প কথাতেই ব্যক্ত হইয়াছে ! অনস্থয়াপ্রিয়ংবদার সর্থীবিচ্ছেদবেদন ক্ষণে ক্ষণে দুটি-একটি কথায় যেন বাধ লঙ্ঘন করিবার চেষ্টা করিয়া তখনি অন্তরের মধ্যে নিরস্ত হইয়া যাইতেছে। প্রত্যাখ্যানদৃষ্ঠে ভয়, লজ্জা, অভিমান, মিনতি, ভৎসন, বিলাপ, সমস্তই আছে,অথচ কত অল্পের মধ্যে ! যে শকুন্তলা মুখের সময় সরল অসংশয়ে আপনাকে বিসজ্জন দিয়াছিল, দু থের সময় দারুণ অপমানকালে সে যে আপন হৃদয়বৃত্তির অপ্ৰগলভ ময্যাদা এমন আশ্চয্য সংযমের সহিত রক্ষা করিবে, এ কে মনে করিয়াছিল । এই প্রত্যাখ্যানের পরবর্তী নীরবতা কি ব্যাপক, কি গভীর ! কথ নীরব, অনস্বয়|প্রিয়ংবদা নীরব, মালিনীতীরতপোবন নীরব, সৰ্ব্বাপেক্ষা নীরব শকুন্তলা । হৃদয়বৃত্তিকে আলোড়ন করিয়া তুলিবার এমন অবসর কি আর কোন নাটকে এমন নিঃশব্দে উপেক্ষিত হইয়াছে ? দুষ্যন্তের অপরাধকে দুৰ্ব্বাসার শাপের আচ্ছাদনে আবরিত করিয়া য়াখা, সে-ও কবির সংযম । "প্রবৃত্তির ছরন্তপনাকে অবরিতভাবে—উচ্ছৃঙ্খলভাবে দেখাইবার যে প্রলো