পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বর্ষের দিন চায়। আমাদের এই অতিক্ষুদ্র জীবিতকালটুকুকেও মানুষ একটানাভাবে বহন করিতে চায় না—জীবনটাকে যেন নুতন-নূতন পরিচ্ছেদে মাঝে-মাঝে নুতন করিয়া আরম্ভ করিলাম, এইরূপ কল্পনা করিতে ইচ্ছা হয় । পৃথিবী গতবৎসরের ১লা বৈশাখ হইতে এ বৎসরের ১লা বৈশাখে স্থৰ্য্য-প্রদক্ষিণ করিয়া আসিল, ইহা তাহার পক্ষে কোন ংবাদই নহে। এখানে তাহার কোন ছেদ নাই । আমাদেরও জীবনে ১লা বৈশাখে কোন ছেদ পড়ে নাই । জীবনের ধারা কালি হইতে আজিকার মধ্যে সমানভাবেই গড়াইয়া আসিতেছে, কৰ্ম্মের স্রোতে আপনার চিরাভ্যস্ত পথে স্থির হইয়া দাড়ায় নাই, তবু ক্লান্ত মন আজিকার এই ঐকদিনকে বিশেষ দিন নাম দিয়া প্রত্যহের এই বোঝাটাকে বহিবার জন্ত নুতন বল অন্বেষণ করিতেছে। ইহার বিশেষ কারণ আছে । অভ্যাসের বেগ আমাদের অন্ধভাবে ঠেলিয়া লইয়৷ যায়—প্রাত্যহিক কাজের ভারে মৃত্যুর ঢালুরাস্তার দিকে আমরা গড়াইয়া চলিয়া যাই--নিজের কর্তৃত্বগৌরব অনুভব করিবার অবসর পাই না । নববর্ষের দিনে সেই অন্ধগতির মুখে একটা বাধার মত দিয়া অভ্যস্ত কৰ্ম্মচালিত মন নিজেকে স্বতন্ত্র জাগ্ৰতভাবে একবার অনুভব করিয়া লইতে চায় । সে গৰ্ব্বের সহিত বলে, আজ হইতে আমি নববর্ষ আরম্ভ করিলাম, আমি নুতন সালের পথে যাত্রা করিয়া চলিলাম, এই বলিয়। ২রা বৈশাখের দিনে সে পুনরায় আপনার কোচুবাক্সের উপর আরামে ঘুমাইয়া বঙ্গদর্শন । [ বৈশাখ পড়ে এবং চিরাভ্যাসজরাজীর্ণ গৰ্দ্দভের মত বিনা বল্পায় –বিনা চালনায় দিবার ত্রি তাহার রথ টানিয়া মৃত্যুর দিকে চলিতে থাকে । যে প্রাত্যহিক নির্দিষ্ট কৰ্ম্ম আমাদের মনের উপরেও কৰ্ত্ত হইয়া উঠিয়াছে, মন নববর্ষের দিনে বৈরাগ্যের ছায়াপাত করিয়া সেই কৰ্ম্মকে ছোট করিয়া দেখিবার চেষ্টা করে। বলে, মৃত্যুতে সকল কন্মের অবসান হইবে, নববর্ষ সেই খবর দিতে আসিয়াছে । বলে, “গ্রাস করে কাল পরমায়ু প্রতিক্ষণে”—বলে, “মনে কর শেষের সে দিন ভয়ঙ্কর।” বলে, এই যে ধনজনমানের জন্ত বৎসর-বৎসর খাটিয়া মরিতেছ, একটি বৎসর আসিবে, যে সমস্ত কাড়িয়া লইয়া তোমাকে রিক্তহস্তে বিদায় করিয়া দিবে। হয় ত এই-ই সেই বৎসর, কে বলিতে পারে ? মন তাই উপদেশ দেয়, কৰ্ম্মস্ত,পের দ্বারা মনের জীবনকে, কৰ্ম্মের গতির দ্বারা মনের গতিকে নাশ করিয়ো না । যখন নগরের কৰ্ম্মশালার মধ্যে বাস করিতাম, তখন নববর্ষে সভা ডাকিয়া আমরা এই কথা চিন্তা করিয়াছি । তথন মৃত্যুর কথা বিশেষ ক্লরিয়া স্মরণ করা আমাদের প্রয়োজন ছিল,—কারণ, সেখানে কৰ্ম্ম আমাদিগকে একেবারে চাপিয়া থাকে, নিশ্বাস ফেলিতে দেয় না। মৃত্যুর ভাব সেই নিবিড় কৰ্ম্মকে খৰ্ব্ব করিয়া সেই কৰ্ম্মের চারিদিকে বৃহৎ অবকাশ রচনা করিয়া দেয়—মৃত্যু সেই কৰ্ম্মকারাগারের মধ্যে জানূল কাটিয়া অবরুদ্ধ অনন্তকে প্রকাশিত করে। বর্ষারম্ভের প্রভাতআলোক হইতে বর্ণচ্ছটাবিহীন শুভ্র বৈরাগ্য