পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম সংখ্যা । ] অত্যুক্তি। - ○b3) কাছ হইতেই শিখিয়াছি । নিতান্ত গায়ের জালায় আমাদিগকে যে অশিষ্টতায় দীক্ষিত করিয়াছে, তাহ আমাদের দেশের জিনিষ নহে । কিন্তু অষ্ঠের কাছ হইতে আমরা যতই আঘাত পাই না কেন, অামাদের দেশের যে চিরন্তন নম্রতা, যে ভদ্রতা, তাহ পুরিত্যাগ করিব কেন ? ইহাকেই বলে চোরের উপর রাগ করিয়া নিজের ক্ষতি করা । অবগু পরের নিকট হইতে স্বজাতি ধখন অপবাদ ও অপমান সহ করিতে থাকে, তখন যে আমার মন অবিচলিত থাকে, এ কথা আমি বলিতে পারি না ; কিন্তু সেই অপবাদ-লাঞ্ছনার জবাব দিবার জন্য ত যে আমার এই প্রবন্ধ লেখা, তাহা নহে। আমরা যেটুকু জবাব দিবার চেষ্টা করি, তাহ নিতান্ত ক্ষীণ, কারণ বাকৃশক্তিত্ব আমাদের একটিমাত্র শক্তি । কামানের যে গজ্জন তাহ। ভাযণ, কারণ তাহার সঙ্গে সঙ্গে লোহার গোলাট থাকে, কিন্তু প্রতি ধ্বনির যে প্রত্যুত্তর তাহ ফাকা । সেরূপ থেলামাত্রে আমার অভিরুচি নাই । ইংরেজ আমার এ লেখা পড়িবে না, পড়িলেও সকল কথা ঠিক বুঝিবে না। আমার এ লেখা আমাদের স্বদেশীয় পাঠকদের জন্তই। অনেকদিন ধরিয়া চোখ বুজিয়া আমরা বিলাতি সভ্যতার হাতে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করিয়াছিলাম। ভাবিয়াছিলাম সে সভাত স্বার্থকে অভিভূত করিয়া বিশ্বহিতৈষী ও বিশ্বজনের শৃঙ্খলমুক্তর পথেই সত্য-প্রেম-শাস্তির অমুকুলে অগ্রসর হই তেছে। কিন্তু,আজি হঠাৎ চমক ভাঙিবার সময় আসিয়াছে । পৃথিবীতে এক এক সময়ে প্রলয়ের বাতাস হঠাৎ উঠিয় পড়ে । এক সময়ে মধ্য এসিয়ার মোঙ্গলগণ ধরণী হইতে লক্ষ্মী শ্রী ঝাটাততে বাহির হইয়াছিল--এক সময়ে মুসলমানগণ ধূমকেতুর মত পৃথিবীর উপর প্রলয়পুচ্ছ সঞ্চালন করিয়! ফিরিয়াছিল। পৃথিবীর মধ্যে যে কোণে ক্ষুধার বেগ বা ক্ষম তার লালসা ক্রমাগত পোসিত হইতে থাকে, সেই কোণ হৰ্চন্তে জগদ্বিনাশী ঝড় উঠিপেষ্ট । প্রাচীনকালে এই ধ্বংসধবজ তুলিয়৷ গ্ৰীক, রোমক, পারসীকগণ অনেক রক্তসেচন করিয়াছে। ভারতবর্ষ বৌদ্ধ-রাজা দের অধীনে বিদেশে আপন ধৰ্ম্ম প্রেরণ করিয়াছে, আপন স্বার্থবিস্তার করে নাই । ভারতবর্ষীয় সভ্যতায় বিনাশপ্লাবনের বেগ uকানো কলে ছিল না । ক্ষমতা ও স্বার্থবিস্তার ভারতবর্ষীয় সভ্যতার ভিত্তি নহে । যুরোপীয় সভ্যতার ভিত্তি তাহাই । তাহা সৰ্ব্ব প্রযত্নে নানা আকারে নানাদিক্‌ হক্টতে আপনার ক্ষমতাকে ও স্বার্থকেই বলীয়ান করিবার চেষ্টা করিতেছে । স্বার্থ ও ক্ষমতাস্পৃহা কোনোকালেই নিজের অধিকারের মধ্যে নিজেকে রক্ষা করিতে পারে না— এবং অধিকার লঙ্ঘনের পরিণামফল নিঃসংশয় বিপ্লব । ইহু ধৰ্ম্মের নিয়ম, ইহা ধ্রুব । সমস্ত যুরোপ আজ অস্ত্রে-শস্ত্রে দস্তুর হইয়া উঠিয়াছে। ব্যবসায়বৃদ্ধি তাহার ধৰ্ম্মবুদ্ধিকে অতিক্রম করিতেছে।