দ্বিতীয়-সংখ্যা । ] চোখের বালি৮ Ե Տ) করিয়া তুলিত। মহেন্দ্রকে তাহার শয়নগৃহের বিবর হইতে টানিয়া না বাহির করির সে কোনমতেই ছাড়িত না । পড়ায় শৈথিল করিতেছে বলিরা, সে মহেন্দ্রকে বিস্তর ভৎসনা করিত । আশাকে বলিত, “বোঠা’ণ, গিলিরা খাইলে হজম হয় না, চিবাইয়৷ থাইতে হয়—এখন সমস্ত অল্প একগ্রাসে গিলিতেছ, ইহার পরে হজমিগুলি খুজিয়া পাইবে না।” মহেঞ্জ বলিত, “চুনি, ও কথা শুনিয়ে ন!—বিহারী আমাদের মুখে হিংসা করিতেছে।” বিহারী বলিত—“সুখ যখন তোমার হাতেই আছে, তখন এমন করিরা ভোগ কর, যাহাতে পরের হিংসা না হয় ।” মহেন্দ্র উত্তর করিত, “পরের হিংসা পাইতে যে সুখ আছে ! চুনি, আর একটু হইলেই আমি গৰ্দ্দভের মত তোমাকে বিহারীর হাতে সমর্পণ করিতেছিলাম !” বিহারী রক্তবর্ণ হইয়া বলিয়া উঠিত— “চুপ!” এই সকল ব্যাপারে আশা মনে মনে বিহারীর উপরে ভারি বিরক্ত হইত। এক সময় তাহার সহিত বিহারীর বিবাহপ্রস্তাব হইয়াছিল বলিয়াই বিহারীর প্রতি তাহার একপ্রকার বিমুখ ভাব ছিল, বিহারী তাহ। বুঝিত এবং মহেন্দ্র তাহ লইর আমোদ করিত। রাজলক্ষ্মী বিহারীকে ডাকিয়৷ করিতেন | দুঃখ বিহারী কহিত, “ম, পোকা "ধন গুটি বাধে, তখন তত বেশি ভয় নয়— কিন্তু যখন কাটিয়া উড়িয়া যায়, তখন ○ ফেরানো শক্ত। কে মনে করিয়াছিল, ও তোমার বন্ধন এমন করিয়া কাটিবে ?” মহেন্দ্রের ফেল করা-সংবাদে রাজলক্ষ্মী গ্রীষ্মকালের আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের মত দাউদাউ করিয়া জলিয়া উঠিলেন, কিন্তু তাহার গজ্জন এবং দাহনটা সম্পূর্ণ ভোগ করিলেন অন্নপূর্ণ। তাহার আহার-নিদ্রা ইর হইল । ( ७ } একদিন নববর্ষার বর্ষণমুখরিত মেঘাচ্ছন্ন সায়াহ্লে গায়ে একখানি মুবাসিত ফুরফুরে চাদর এবং গলায় একগাছি জুইফুলের গোড়ে মালা পরিয়া মহেন্দ্র আনন্দমনে শয়নগৃহে প্রবেশ করিল। হঠাৎ আশাকে বিস্ময়ে চকিত করিবে বলিয়। জুতার শব্দ করিল না। ঘরে উকি দিয়া দেখিল, পুবদিকের খোলা জানাল দিয়া প্রবল বাতাস বৃষ্টির ছাট লইয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিতেছে ;—বাতাসে দীপ নিবিয়া গেছে এবং আশা নীচের বিছানার উপরে পড়িরা অব্যক্তকণ্ঠে কাদিতেছে ! মহেন্দ্র দ্রুতপদে কাছে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি হইয়াছে ?” বালিকা দ্বিগুণ আবেগে কাদিয়া উঠিল । অনেকক্ষণ পরে মহেন্দ্র ক্রমশ উত্তর পাইল যে, মাসীম। অার সহ্য করিতে না পারিয়া তাহার পিস্তুত ভাইয়ের বাসায়,চলিয়া গেছেন। মহেন্দ্র রাগিয়া মনে করিল—“গেলেন যদি, এমন বাদলার সন্ধ্যাট মাটি করিয়া গেলেন ।” শেষকালে সমস্ত রাগ মাতার উপরে পড়িল । তিনিই ত সকল অশাস্তির মূল !