পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e o (ی\ না মিটিতে পারে, কিন্তু গলায় দড়ী দিবার সাধ ত মিটিবে ! সঙ্গে দড়ী আনিয়াছি। রাত্রি হইলেই তোমার সাধ, আমার সাধ, মিটাইব ।” দুৰ্ব্বাক্য যে প্রয়োগ করে, অনেক সময় সে বাক্য তাহার নিকট ফিরিয়া আসে । রাজা আপনার বাক্য স্মরণ করিয়া লজ্জিত হইলেন, কহিলেন, “আমি রাগের মাথায় কি বলিয়াছি, সে দোষ লইও না । আমার শতবার অপয়াধ হইয়াছে, আমায় ক্ষমা কর ।” “তোমার আর অপরাধ কি ? আমি একছড়া মুক্তার মালা চাহিয়াছি, আমারই অপরাধ হইয়াছে। কিন্তু অপরাধের ত প্রায়শ্চিত্ত আছে । আমি প্রায়শ্চিত্ত করিব, স্থির করিয়াছি । রাণীর স্বর বাষ্পরুদ্ধ, শুনিয়া রাজার অত্যন্ত আত্মগ্লানি উপস্থিত হইল । কাতরস্বরে অমুনয় করিয়া কহিলেন, “আমি যেমন করিয়া পারি, তোমায় মালা আনিয়া দিব । এখন আমার কথা রাখ, দ্বার মুক্ত কর।” রাণী অর্গল মুক্ত করিলেন, কিন্তু দ্বার খুলিলেন না। দ্বার অল্প খুলিয়া বাহু দ্বারা ধারণ করিলেন, জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কি শুধু মনরাখা কথা বলিতেছ?” রাজা কছিলেন, “আমায় কি তোমার এতই অবিশ্বাস ? আমি ত বলিয়াছি, যেখান হইতে হউক, যেমন করিয়া পারি, তোমায় মাল আনিয়া দিব।” ঈষন্মুক্ত দ্বারপথ দিয়া রাজা রাণীর হস্তযারণ করিলেন, কিন্তু বলপূৰ্ব্বক দ্বার খুলিবার চেষ্টা করি লেন না । বঙ্গদর্শন । [ কাৰ্ত্তিক । আরও দুই চারি কথার পর দ্বার মুক্ত হইল । রাজা ক্রোধাগারে প্রবেশ করিয়া রাণীর অলঙ্কার তাহাকে পরাইয়া দিলেন । তাহার পর রাণী কেশ বাধিয়া সংযতবসনে বাহিরে গমন করিলেন । আশা । মুক্তার মালা খুজিতে রাজকাৰ্য্য প্রায় বন্ধ হইয়া গেল । রাজা মন্ত্রীদের আদেশ করেন, মন্ত্রীরা অপর লোককে বলেন, এই রকমে চারিদিকে কথা ছড়া ইয়া পড়িল । দেশদেশান্তর হইতে জহুরী আসিতে লাগিল, দেশদেশান্তরে মুক্তার সন্ধানে লোক ছুটিল। মুক্তার মালা রাণীর প্রয়োজন, কিন্তু দেশের লোক পৰ্য্যস্ত সেই ভাবনায় অস্থির হইয়া উঠিল । পথে, ঘাটে, দোকানে, হাটে, কেবল সেই এক কথা । অমুক স্থান হইতে বিখ্যাত জহুরী আসিয়াছে, সে এমন মুক্তা আনিয়াছে যে, তাহার একটি সাত রাজার ধন, তথাপি না কি রাণীর মনোনীত হয় নাই। কেহ হাসিয়া বলে, “আমাদের রাণী যোধাবাইবেগমের তুল্য হইয়া উঠিলেন, দেখিতেছ কি ! অনেক কাল রাজ্যে এমন তোলপাড় হয় নাই ।” যতরকম মুক্ত বা মুক্তার মালা আসে, রাণী গোপনে মীরাকে দেখান । সে মাথা নাড়িয়া, নাসা কুঞ্চিত করিয়া বলে, “সে মুক্ত আর এ মুক্ত । রাণীজি, যদি সামান্ত জহুরীর কাছে তেমন মুক্ত মিলিত, তাহ হইলে যোধাবাইর কণ্ঠমালা কি নিয়ায় অতুলনীয় হইত ?” -