পাতা:বাংলায় ভ্রমণ -দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূর্ববঙ্গ রেলপথে বাংলাদেশ &é আলি সাহেব ব্যাঘ্র পৃষ্ঠে তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিলে তিনি নাকি একটি প্রাচীরে চড়িয়া প্রাচীর শুদ্ধই শাহ্ আলি সাহেবের নিকট আগাইয়া গিয়াছিলেন। সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের পাশ্বে ঘন বৃক্ষাচ্ছাদিত একটি জলাশয় ও কয়েকটি পুরাতন মন্দির আছে; উহা মালীবাগের আখড়া নামে খ্যাত { শহরের উত্তরে রমনার ময়দানে বুড়া শিব ও রমনার কালী প্রতিষ্ঠিত আছেন। বুড়া শিব ঢাকার সবর্বাপেক্ষা_প্রাচীন দেবতা ; কেহ কেহ বলেন ইনি শঙ্করাচার্য্য কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। ইহা ঠিক হইলে বুড়া শিবের বয়স দেড় হাজার বছর হইবে। রমনার কালী শঙ্করাচার্য্য সম্প্রদায়ের দশনামী উদাসীন সন্ন্যাসীদের মঠের মধ্যে অবস্থিত ; ইহার পরিধানে ব্যাঘ্ৰচৰ্ম্ম। মন্দিরটি যে রীতিতে গঠিত পূর্ব-বঙ্গেও সেরূপ মন্দির বেশী দেখিতে পাওয়া যায় না। বহরের নিকট অধুনালুপ্ত রাজাবাড়ী মঠ ও রাজনগরে রাজ বল্লভের একুশরত্ব মন্দিরে চুড়া এই ধরণের ছিল। কালী মন্দিরের প্রাঙ্গনে একটি বৃহৎ প্রস্তর-খণ্ড সাধক ব্ৰহ্মানন্দ গিরির সিদ্ধাসন বলিয়া পূজা পাইয়া থাকে। প্রবাদ তাহার প্রস্তরাসন খানি লইয়া উমা ও তারা দেবী মিলিয়া ভক্তের সাথে সাথে চলিতেন আর লোকে দেখিত যে ব্ৰহ্মানদের সঙ্গে প্রস্তরখানি শূন্য দিয়া ভাসিয়া চলিয়াছে। রমনার কালীবাড়ীর পশ্চিমে ফুলার রোডের দক্ষিণে একটি পুরাতন শিখ সঙ্গত আছে। প্রাচীর-বেষ্টিত সঙ্গতটির প্রাঙ্গনে বহু শিখ মোহান্তের সমাধি বৰ্ত্তমান। একটি কক্ষে “গ্রন্থ সাহেব” ও কালো পাথরে অঙ্কিত গুরু নানকের পদচিহ্ন রক্ষিত আছে। প্রাঙ্গনে গুরু নানকের ইন্দারা নামে পরিচিত একটি অষ্টকোণ কুপ আছে; প্রবাদ গুরু নানক একবার ঢাকায় আসিয়াছিলেন এবং এই কূপ হইতে জল পান করিয়াছিলেন এবং এই কারণে ইহার জলের রোগ-শাস্তির ক্ষমতা আছে বলিয়া লোকের বিশ্বাস। গুরুমুখীতে লিখিত কুপের একটি প্রস্তর ফলক হইতে জানা যায় যে মোহাস্ত প্রেমদাস কর্তৃক ১৭৪৮ খৃষ্টাব্দে ইন্দারাটির একবার সংস্কার হয়। কেহ কেহ বলেন সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে নবম গুরু তেগ বাহাদুর ঢাকায় আসিয়া এই সঙ্গতটি প্রতিষ্ঠিত করেন এবং তাহার অনেক শিষ্য হইয়াছিল। কেহ বা বলেন ষষ্ঠগুরু হর গোবিন্দের সময়ে নথা সাহেব ধৰ্ম্ম, প্রচারের জন্য ঢাকায় আগমন করেন এবং তিনিই এই সঙ্গত প্রতিষ্ঠা করেন ; সঙ্গতটি নথ সাহেবের সঙ্গত নামেও পরিচিত । রমনা ময়দানের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত হাজী খাজে সাহাবাজের মসজিদটি ১৬৭৮ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত হয় ; ইহার তিনটি গুম্বজ ও আটটি চুড়া আছে। মসজিদের পাশ্বে সাহাবাজের সমাধি অবস্থিত। সাহাবাজ কাশীর হইতে আগত বণিক ছিলেন। রমনার ময়দানের নিকট ১৮২১ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত গ্রীকদের গির্জ অবস্থিত। শহরের উত্তর দিকে হুসেনী দালান মুসলমান যুগের স্বপ্রসিদ্ধ কীৰ্ত্তি চিহ্ন। শিয়া সম্প্রদায়ের এই ইমামবাড়ীটি শাহ শুজার শাসন কালে ঢাকার “মীর-ই-বহর ” ৰ নৌবহর পরিদশক সৈয়দ মীর মুরাদ কর্তৃক ১৬৪২ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত হয়। শিয়া সম্প্রদায়ের মহরম পবর্ব এই স্থানে আজও মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়। হুসেনী দালানের স্থাপত্যরীতি সুন্দর। ঢাকার নায়েব নাজিমগণ হুসেনী দালানের মত ওয়াল্পী থাকিতেন ; এক্ষণে ঢাকার নবাবগণ সুন্নী মতাবলম্বী হইলেও ইহার মতওয়াল্লী পদ গ্রহণ করিয়া থাকেন এবং ইহার জন্য বহু অৰ্থ ব্যয় করেন।