পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ব্যয়-হ্রাসে কষ্ট
৮৯

দুই তিন বৎসরে পণ্ডিতগণও স্মৃতির পাঠাভ্যাস করিয়া উঠতে পারিতেন না। বালক ঈশ্বরচন্দ্র ৬ ছয় মাসে পড়া সাঙ্গ করিয়া “ল কমিটির পরীক্ষা দেন এবং প্রশংসিতরূপে উত্তীর্ণ হন। এই ছয়মাস কাল তিনি রন্ধনাদি করেন নাই। ছয় মাস কেবল প্রত্যহ দুই তিন ঘণ্টামাত্র নিদ্রা যাইতেন। স্মৃতি তাঁহার কণ্ঠস্থ হইয়াছিল। অধ্যাপক এবং সহপাঠিগণ তাঁহার এতাদৃশ অদ্ভুত শক্তি দেখিয়া আশ্চর্য্যান্বিত হইতেন। এমন নহিলে কি মানুষ ভবিষ্যৎ জীবনে যশস্বী হইতে পারে? বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এই অদ্ভুত শক্তির কথা যখনই আমাদের স্মৃতিপথে উদিত হয়, তখনই মহাকবি ভবভূতির সেই স্বল্পাক্ষর গভীরভাবপূর্ণ শ্লোকটা মনে পড়ে,—

“বিতরতি গুরুঃ প্রজ্ঞে বিদ্যাং যথৈব তথা জড়ে
ন চ খলু তয়োর্জ্ঞানে শক্তিং করোত্যপহস্তি বা।
ভবতি চ তয়োর্ভূয়ান ভেদঃ ফলং প্রতি তদ্ যথা
প্রভবতি শুচিবিম্বেদগ্রাহে মশিন মৃদাং,চয়।”

 ভাবার্থ—গুরু, সুবোধ এবং নির্ব্বোধ বিবিধ ছাত্রকেই সমভাবে বিদ্যা বিতরণ করেন; কিন্তু তদুভয়ের বুঝিবার শক্তি বাড়াইতে বা কমাইতে পারেন না। বিদ্যা-বিষয়ে যে পূর্ব্বোক্ত ছাত্রদ্বয় প্রভূত পার্থক্য প্রাপ্ত হন, ইহা বলা বাহুল্য। নির্ম্মল মণি প্রতিবিম্ব গ্রহণে সমর্থ হয়, মৃৎপিণ্ড কিন্তু হয় না।

 ঈশ্বরচন্দ্র যে সময় “ল কমিটির” পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, সেই সময় ত্রিপুর জেলায় জজ পণ্ডিতের পদ শূন্য হয়। তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া এই পদের জন্য প্রার্থনা করেন। প্রার্থনা পূর্ণ হইতে বিলম্ব হইল না; কিন্তু পিতা তাহাকে ত্রিপুরায় যাইতে নিষেধ করেন।

১২