পাতা:বিদ্যাসাগর (বিহারীলাল সরকার).pdf/৬২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জামাতার পদচ্যুতি।
৫৮৫

সহসা অনুতাপ-দাবানল প্রবল বেগে প্রজ্বলিত হইয়া উঠিয়াছিল। সেই অন্তর্নিহিত দাবদাহের যন্ত্রণায় রোগও বাড়িয়া গিয়াছিল।

 এত আধি-ব্যাধির জ্বালাময়ী যন্ত্রণায়ও বিদ্যাসাগর এক মুহূর্ত্তের জন্য আপন কর্ত্তব্য বিস্মৃত হন নাই। স্কুল, কলেজ সর্ব্বদাই তাঁহার হৃদয়ে জাগরূক থাকিত। জামাতা সূর্য্য বাবুর উপর ভার দিয়া, তিনি গুরু কার্য্যভার হইতে অবসর লইয়াছিলেন বটে, কিন্তু ভাবনা প্রাণের ভিতর অবিরাম। বিধাতা বিমুখ। পত্নী-বিয়োগের দিন কতক পরেই বিদ্যাসাগর মহাশয় জামাতা সূর্য্য বাবুর কোন কার্য্যের কর্ত্তব্যত্রুটি বিবেচনায় বিরক্ত হইয়া তাঁহাকে পদচ্যুত করেন। পুত্রবর্জ্জনান্তে বিদ্যাসাগর মহাশয় যাঁহাকে পুত্ররূপে কোল দিয়াছিলেন, যাঁহার কার্য্যপটুতায় স্কুল কলেজের সম্যক্ শ্রীবৃদ্ধি সাধন হইয়াছিল এবং যাঁহার উপর স্কুলের ভার দিয়া, গুরুতর কার্য্যভার হইতে অবকাশ পাইয়াছিলেন, তাঁহাকে বিদ্যাসাগর মহাশয় পদচ্যুত করিলেন। নিশ্চিতই সে কর্ত্তব্যত্রুটীকে তিনি ক্ষমাতীত মনে করিয়াছিলেন।

 জামাতার পদচ্যুতির পর বিদ্যাসাগর মহাশকে প্রায়ই স্কুল-কলেজের পরিদর্শন করিতে হইত। তিনি পাল্কী করিয়া যাইতেন এবং পাল্কী করিয়া আসিতেন। উত্তরপাড়ায় পড়িয়া যাইবার পর তিনি প্রায় গাড়ী চডিতেন না। নিজের গাড়ী ঘোড়া রাখিবার অর্থ-সামর্থ্য ছিল; কিন্তু প্রবৃত্তি ছিল না। বহু পূর্ব্বে তিনি গাড়ী-ঘোড়া রাখিয়াছিলেন বটে, কিন্তু নানা কারণে তাহা তুলিয়া দেন।

 এই সময়ে, তিনি হাইকোর্টের অন্যতম ভূতপূর্ব্ব জজ মাননীয় শ্রীযুক্ত গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়কে স্কুলের ভার দিবার প্রস্তাব করিয়াছিলেন। গুরুদাস বাবু এ গুরু-ভার বহনে সম্মত হন নাই।